Ajker Patrika

অবহেলায় ইরাকি মাঠ, পরিণত হচ্ছে বাজারে

  • মালিক নয় বলে ‘দায়িত্বও নেই’ ডিসিসির
  • মাঠের মাঝে বাজার বসে কমেছে আকার
  • পরিবেশ উন্নয়নের তাগিদ স্থানীয়দের
আব্দুল্লাহ আল গালিব, ঢাকা
Thumbnail image
রাজধানীর আজিমপুরে ইরানি মাঠ দখল করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করতে পারছে না বিশাল আয়তনের এ মাঠে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

রাজধানীতে প্রয়োজনের তুলনায় রয়েছে খেলার মাঠের অভাব। সরকারি-বেসরকারি যে কয়টি মাঠ এই বিশাল মহানগরে আছে, বিশেষজ্ঞদের মতে তা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৫ শতাংশ। তা-ও অনেক মাঠে খেলার পরিবেশ নেই। ব্যবহৃত হয় অন্য কাজে। কিছু আবার দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এ রকমই একটি মাঠ আজিমপুর নিউ পল্টন লাইন-সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী ইরাকি মাঠ। মাঠটির মাঝখানে বাজার বসানোয় স্থানীয়দের খেলাধুলা বা হেঁটে বেড়ানোর পরিবেশ নষ্ট হয়েছে।

জনাকীর্ণ রাজধানীতে উন্মুক্ত স্থানের এই চরম অভাবের সময় প্রায় চার একর আয়তনের বিশাল ইরাকি মাঠ পড়ে আছে অবহেলায়। ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা হওয়ায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন পরিকল্পনায় থাকে না মাঠটি। অনেক আগে এলাকায় বাস করা ইরাকি সম্প্রদায়ের মানুষ মাঠটির মালিক। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা বললেন, জানামতে ইরাকিদের বংশধরদের কেউই আর এলাকায় নেই। এখন এলাকার মানুষ ছাড়া মাঠের দেখভাল করার কেউ নেই।

খেলাধুলার প্রয়োজন ছাড়াও এই মাঠের আরেকটি গুরুত্ব হচ্ছে একাংশে অবস্থিত কবরস্থানটি। অতীতে ইরাকি সম্প্রদায়ের মৃত সদস্যদের দাফন করা হয়েছে সেখানে।

গত শুক্রবার ইরাকি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, এর মাঝখানে বসেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ৫০টির বেশি অস্থায়ী দোকান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানে শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস, কাপড়, খেলনা ইত্যাদির দোকান বসে। বিকেলে বসে জমজমাট খাবারের দোকান। মাঠজুড়ে ধুলার রাজত্ব। আপাদমস্তক ধূলিধূসরিত হয়ে খেলছে শিশু-কিশোরেরা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক দিন ধরেই মাঠের এই অবস্থা। শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি আর বর্ষার সময় কাদায় একাকার থাকে মাঠটি।

রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এ মাঠে খেলতে আসি। আশপাশে আর তেমন কোনো মাঠ নেই। তবে মাঠটি ধুলাবালুতে ভরা, ঘাস নেই বললেই চলে। মাঝে দোকানপাট বসানোয় জায়গা ছোট হয়ে গেছে।

ইফাজ আহমেদ নামের এক কিশোর জানাল, জায়গা কমে যাওয়ায় দুই দল ভাগাভাগি করে খেলে। অনেক সময় ঝগড়া হয়। ঘাসহীন রুক্ষ মাঠে খেলতে গিয়ে পড়ে গেলে হাত-পা ছিলে যায় হরহামেশা।

শিশুসন্তানকে খেলতে নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষক মমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর যাবৎ আছি এলাকায়। প্রথম থেকেই এই বাজার দেখে আসছি। মাঠ পরিচর্যার দায়িত্ব যাদের হাতে, তারা খেয়াল করেন বলে মনে হয় না।’

স্থানীয় খায়রুল আমীন বাবুল বলেন, অনেক বছর ধরে মাঠের মধ্যে দোকানপাট রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতারা দৈনিক চাঁদার বিনিময়ে এদের বসতে দিতেন। মাঝে মাঝে পুলিশ এসে উঠিয়ে দিলেও আবার তাদের সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’ হয়ে যেত। এলাকার মানুষজনও অবশ্য সুবিধা পায় এতে। কেনাকাটা করতে বেশি দূরে যাওয়া লাগে না।

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা শেখ মোহাম্মদ দুলাল ছোটবেলা থেকে মাঠটি দেখছেন। তিনি বললেন, ‘আমার শৈশবের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মাঠের সঙ্গে। মাঠের দৈর্ঘ্য আরও বেশি ছিল, চারপাশে গাছপালা ছিল। আমি চাই মাঠটি ছোট-বড় সবার খেলাধুলা, হাঁটাচলার উপযোগী যেন হয়। সিটি করপোরেশন একটু পরিচর্যা করলেই তা সম্ভব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত সরকারের সময়ে দোকানভেদে দৈনিক ১৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হতো। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত কাউকে টাকা দিতে হচ্ছে না।

মাঠটির অবস্থা বা দেখভালের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞার কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

ডিএসসিসির সার্ভেয়ার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই মাঠের মালিকানা সিটি করপোরেশনের নয়। এটি রক্ষণাবেক্ষণ বা পরিচর্যার দায়িত্বও সিটি করপোরেশনের হাতে নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত