Ajker Patrika

অর্ধেক ফেরির আয়ু শেষ, চলছে ঝুঁকিতে

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা ও ফিরোজ আহমেদ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
অর্ধেক ফেরির আয়ু শেষ, চলছে ঝুঁকিতে

দেশে বিভিন্ন নৌরুটে বর্তমানে যানবাহন পারাপার করছে ৫৩টি ফেরি। এর মধ্যে ২৬টির আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে অনেক আগে। বাকি ২৭টির মধ্যে ৬টির বয়স হয়েছে ২০ থেকে ৩০ বছর করে। আর সব মিলিয়ে ফিটনেস সনদ নেই ৪৭টি ফেরির।

এই হলো দেশের ফেরিগুলোর হালহকিকত। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রয়োজনের তুলনায় ফেরির স্বল্পতা আছে। তাই বাধ্য হয়ে চালানো হচ্ছে এমন ভাঙাচোরা ফেরি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, সরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেস সনদ ছাড়া বছরের পর বছর কীভাবে চলছে এসব ফেরি?

অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল অধ্যাদেশ (১৯৭৬) অনুযায়ী, দেশের নৌপথে কোনো নৌযান ৪০ বছর পর্যন্ত চলাচল করতে পারে। শুরুতে নিবন্ধনের সময় মেয়াদ ধরা হয় ৩০ বছর। এরপর বিশেষ জরিপ করে চলাচলের উপযোগী পাওয়া গেলে ৫ বছর করে দুই দফায় ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানো যায়। তবে বর্ধিত এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর কোনোভাবেই তা চালানো যাবে না।

মেয়াদোত্তীর্ণ পুরোনো ফেরি কেন চালানো হচ্ছে, জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম জানান, প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত ফেরি নেই। তাই ইচ্ছা করলেই পুরোনো ফেরি বাতিল করা সম্ভব হয় না। মেরামত করে চালানো হয় পুরোনো এসব ফেরি। 

আমানতের বয়স ৪০-এর বেশি
গত বুধবার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে উল্টে যাওয়া শাহ আমানত ফেরির মেয়াদও শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। পাশাপাশি ফিটনেস সনদও ছিল না ফেরিটির। সর্বশেষ গত ১ জুলাই ডকিং থেকে নামানো হয় ফেরিটি। এর আগে গত বর্ষা মৌসুমে পদ্মা সেতুর পিলারে যে চারটি ফেরি ধাক্কা দিয়েছিল, তার একটিরও ছিল না ফিটনেস সনদ।

শাহ আমানত ফেরি দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করবে সংসদীয় কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে একটি সাব-কমিটি গঠন হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে চলে মোট ২০টি ফেরি। এর মধ্যে ৬টি ফেরি ইউটিলিটি, ২টি ফেরি কে টাইপের ও ১২টি রো রো ফেরি। এর মধ্যে পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া রো রো ফেরি শাহ আমানতের বয়স ৪০ বছরের বেশি। একই বয়সী আরও একটি রো রো ফেরি এই ঘাটে চলে, রুহুল আমিন। বাকি ফেরিগুলোর বয়স ৮ বছর থেকে শুরু করে ৩০ বছরের মধ্যে। 
প্রতিটা রো রো ফেরি গড়ে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০, ইউটিলিটি ফেরিতে ১৫০ থেকে ২০০ এবং কে টাইপের ফেরি ১৭০ থেকে ২২০টি ছোট-বড় যানবাহন পারাপার করে থাকে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথ ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাস আছে ১ হাজার ৪০০, ট্রাক ২ হাজার ৬০০ এবং বাকি ৩ হাজার প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য ছোট গাড়ি। এসব যান এবং গাড়ি ছাড়া প্রতিদিন হাজার দশেক মানুষ পারাপার হয়ে থাকে।

মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি দিয়ে যান পারাপার কেন হয়, জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি পরিচালক (বাণিজ্য) এস এম আশিকুজ্জামান গতকাল বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ বলে কোনো বিষয় নেই। পাঁচ-ছয় বছরের ফেরিগুলোও যেমন মাঝেমধ্যেই সমস্যা হয়, তেমনি ৪০ বছরের ফেরিগুলোরও তেমন সমস্যা হয়। সমস্যা হলেই বিআইডব্লিউটিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং সমস্যার সমাধান করেন। সমস্যা হলে তো সবকিছু নতুন করেই মেরামত করা হয়, তাহলে সেটির যত বয়সই হোক না কেন, তা তো আবার নতুনের মতোই হয়ে যায়।’ 

দুই দিনে উদ্ধার ১০টি যানবাহন 
আমাদের শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামজা’র সাহায্যে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গত দুই দিনে নয়টি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে। এখনো পাঁচটি ট্রাক ও তিনটি মোটরসাইকেল তোলা যায়নি। উদ্ধার কমিটির প্রধান বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ফজলুর রহমান জানান, উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া ডুবুরি দলের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। বাকি যানবাহনগুলো উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা বিভাগের ইন্সপেক্টর মোকারম হোসেন জানান, উদ্ধারকারী জাহাজ ‘হামজা’ দিয়ে ডুবে যাওয়া ফেরি পানি থেকে তোলা সম্ভব নয়। কারণ ডুবে থাকা ফেরির বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে পলি জমে আরও ভারী হওয়ায় হামজা তা টেনে তুলতে পারবে না। এ জন্য উদ্ধারকারী আরেক জাহাজ ‘প্রত্যয়’ আনা হচ্ছে। প্রত্যয় ও হামজার যৌথ প্রচেষ্টায় হয়তো ফেরিটি তোলা যেতে পারে। না হলে ফেরির ভারী অংশ কেটে তুলতে হবে। 

জেনেশুনে কেন ঝুঁকি? 
বিআইডব্লিউটিএর সূত্র জানায়, দেশের ছয়টি রুটে বছরের পর বছর এসব ফেরি দিয়েই চলছে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার। মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরির ব্যাপারে কয়েক মাস পরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠায় বিআইডব্লিউটিসি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব ফেরি বাতিল করে নতুন ফেরি কেনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং পুরোনো ফেরিগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে চালানোর চেষ্টা করা হয়ে থাকে।

নৌপথে যাত্রী নিরাপত্তার নিষয়ে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিষ কুমার দে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিসি জেনেশুনে পুরোনো এসব ফেরি চালিয়ে যাচ্ছে। একটি সরকারি সংস্থা এ ধরনের কাজ কীভাবে করছে? এতে যাত্রী নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।’

তবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিসি শখ করে মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি চালায় না, অনেকটা বাধ্য হয়েই চালায়। এটা একটা অবহেলিত খাত। যথেষ্ট বরাদ্দ দেওয়া হয় না। অনেকেই বলেন নতুন নতুন ব্রিজ হচ্ছে ফেরির দরকার নেই, এটি আসলে ভুল কথা। ফেরির দরকার থাকবেই। তাই যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে বিআইডব্লিউটিএর নতুন ফেরি কেনা দরকার।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মীর তারিক আলী বলেন, ‘বর্তমানে বেশির ভাগ ফেরির মেয়াদ শেষ। এত দিন কেন এসব ফেরি নৌপথে চলছে তার জন্য দায়ী বিআইডব্লিউটিসি ও নৌপরিবহন অধিদপ্তর। যাত্রীদের নিরাপত্তায় অবিলম্বে মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি জানান, নৌযানের নিরাপত্তার জন্য রেজিস্ট্রেশন ও সার্ভে করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএর ফেরিগুলোর নিয়মিত সার্ভে করা হয় না এবং থাকে না ফিটনেস সনদ। তাই ফেরি দুর্ঘটনা ঘটে। ফিটনেস সনদ নেওয়া হলে ফেরিতে কী কী সমস্যা আছে, তা আগেই ধরা পড়ে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাটি কাটা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এসআইসহ ৬ জন টেঁটাবিদ্ধ, বাড়িঘরে আগুন

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এসআইসহ অন্তত ছয়জন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় অন্তত চারটি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের কংশপুরা গ্রামে মো. জহির ও খলিলুর রহমানের লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

টেঁটাবিদ্ধ সিরাজদিখান থানার এসআই হাফিজুর রহমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বাকি আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মাটি কাটা নিয়ে কংশপুরা গ্রামের খলিলুর রহমান ও পূর্ব রামকৃষ্ণদি গ্রামের মো. জহিরের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কংশপুরা গ্রামে দুই পক্ষের লোকজন টেঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় উভয় পক্ষের কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষ থামাতে সিরাজদিখান থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে এসআই হাফিজুর হাতে টেঁটাবিদ্ধ হন। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।

সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহানারা আক্তার বলেন, পুলিশের এসআইয়ের ডান হাতে টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢামেকে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘জহিরের অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়ায় লোকজন নিয়ে আমার বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করা হয়েছে। আমার কয়েকজন লোক টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন।’

এদিকে মো. জহির বলেন, ‘খলিলের সঙ্গে আমার বিরোধ অনেক আগের। আজকের ঘটনায় আমি জড়িত নই।’

লতব্দী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দীন খান খোকন বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও ভরাটকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আজকের ঘটনায় কয়েকজন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন।

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে মামলা দায়ের করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরে নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের লাশ ২২ দিন পর পঞ্চগড়ে উদ্ধার

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি 
আক্তারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
আক্তারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

যশোরের চৌগাছায় নিখোঁজের ২২ দিন পর আক্তারুজ্জামান (৪৬) নামের এক পুলিশ সদস্যের অর্ধগলিত লাশ পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদরের ৬ নম্বর সাতমোড়া ইউনিয়নের নয়মাইল এলাকার একটি আখখেত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। আজ শুক্রবার নিহত আক্তারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার রাত ৬টা ১৫ মিনিট) পরিবারের সদস্যদের পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা জানান নিহত আক্তারুজ্জামানের স্ত্রীর ভাই মামুনুর রশীদ মামুন। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, পরনের প্যান্ট, শার্ট ও জুতা দেখে তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন লাশটি তাঁর বোনের স্বামীর।

জানতে চাইলে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন জানান, লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য থানায় রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা থানায় পৌঁছালে সেটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হবে। এরপর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

আক্তারুজ্জামান চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের জামলতা গ্রামের মৃত আনিচুর বিশ্বাসের ছেলে। তিনি খুলনা রেঞ্জের বাগেরহাট জেলার রামপাল থানায় কর্মরত ছিলেন।

জানা গেছে, লাশটির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তবে লাশটির কোনো তথ্য না থাকায় জানার জন্য চেষ্টা করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। ক্লুলেস লাশটির পরিচয় শনাক্তে একমাত্র সূত্র হয় উদ্ধার করা লাশের আন্ডারওয়্যার।

যা ছিল পুলিশের লোগো-সংবলিত। পরে সেটি একজন পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টিগোচর হলে তাঁর পরনের প্যান্ট, শার্ট ও জুতার ছবি নিহত আক্তারুজ্জামানের স্ত্রীকে নিয়ে দেখালে তিনি তাঁর স্বামীর পোশাক বলে শনাক্ত করেন।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী শাহিনা আক্তার শিমা চৌগাছা থানায় নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডি ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী-সন্তানসহ চৌগাছা শহরের ইছাপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আক্তারুজ্জামান। গত ২৬ নভেম্বর পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। পরদিন ২৭ নভেম্বর সকালে মহেশপুর যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান।

এর পর থেকে তাঁর আর খোঁজ মেলেনি।

জিডিতে শাহিনা আক্তার শিমা বলেন, ‘তিন দিন ধরে কোথাও স্বামীর সন্ধান না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।’ তিনি জানান, আক্তারুজ্জামান তাঁর ব্যবহৃত দুটি ফোন বাসায় রেখে গিয়েছেন। ফলে কোনোভাবেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সীমান্তে বাঘ আতঙ্ক, বিজিবির সতর্কতা জারি

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ০২
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারত থেকে বাঘ আসার খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছে বিজিবি।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৬৮ নম্বরের ৩ নম্বর উপপিলারের একপাশে ভারতীয় কোচবিহার রাজ্যের মাথাভাঙ্গা থানার বালারহাট এলাকা এবং অন্যপাশে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জগৎবেড় ও জোংড়া ইউনিয়ন সীমান্তের মোহাম্মদপুর ককোয়াবাড়ী এলাকা। কাঁটাতারবিহীন ওই সীমান্ত এলাকার ভারতের প্রায় ৪০০ গজ অভ্যন্তরে বালারহাট এলাকায় পার্শ্ববর্তী বন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে একটি বাঘ লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় ভারতের স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা বাঘটিকে ধাওয়া দিলে বাঘটি পালিয়ে যায়। সীমান্তে বাঘ আসায় এই শোরগোলের খবর ভারতের ১৫৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের শ্রীমুখ ক্যাম্পের বিএসএফের টহল দলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের (তিস্তা-২) নাজিরগোমানী ক্যাম্পের টহল দল জানতে পারে। এ ঘটনায় রাতে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে সীমান্তবাসীদের সতর্ক থাকতে বলে বিজিবি।

এক সপ্তাহ আগেও ভারতের ওই গ্রামে দুটি বাঘ এসেছিল। স্থানীয় বন বিভাগের লোকজনের সহায়তায় একটি বাঘ আটক করা হয় এবং অপর বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ককোয়াবাড়ী এলাকার আবেদা বেগম (৫৫) বলেন, ‘বিজিবি মাইকে বলেছে এটা শুনেছি। বাঘ দেখিনি, তবে এতে ভয় লাগে।’

একই এলাকার ওয়াদুদ হোসেন বলেন, ‘রাতের বেলা ভারতে চিল্লাচিল্লিতে আমরা খবর পাই বাঘ নাকি বের হয়েছে, পিটাপিটি (ধাওয়া) করেছে। ওই সময় শুনি বাঘ বাংলাদেশেও ঢুকতে পাড়ে। এতে এলাকাবাসী ভয় পেয়ে সতর্ক হয়।’

এ ব্যাপারে নাজিরগোমানী বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের (সিও) মোবাইল নম্বরে কল দিলে কোনো সাড়া মেলেনি। তবে বিজিবির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ‘বাঘ তো বাংলাদেশে আসেনি। কেউ দেখেওনি। সীমান্তে এ ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঘটনাটি তিলকে তাল বানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে, রাখা হবে হিমঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১১
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। সেখানে হিমঘরে মরদেহটি রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে হাদির মরদেহ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি-৫৮৫ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এ সময় হাদির মরদেহ নিতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ অন্যরা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত