Ajker Patrika

তৌফিক ও পাপনকে টক্কর দেওয়ার মতো নেই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ১৭
তৌফিক ও পাপনকে টক্কর দেওয়ার মতো নেই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী

আসন্ন নির্বাচনে সাবেক দুই রাষ্ট্রপতির সন্তান তৌফিক ও পাপনকে টক্কর দেওয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক লড়ছেন কিশোরগঞ্জ-৪ এবং নাজমুল হাসান পাপন লড়ছেন কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে। তাঁদের বিপক্ষে যেসব প্রার্থী আছেন, তাঁদের খুব একটা চেনেন না এলাকাবাসী। ফলে এই দুই আসনে নির্বাচন নিয়ে তেমন উত্তাপ নেই বললেই চলে। 

নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে সাতজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। যাচাই-বাছাই, আপিল ও প্রত্যাহারের পর ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ছয়জন। তাঁরা হলেন—রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক (নৌকা), বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী আ. মজিদ (ডাব), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. শরীফুল আহসান (গামছা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির মো. জয়নাল আবদিন (আম), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আবু ওয়াহাব (লাঙ্গল) ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. নছিম খান (মোমবাতি)। 

অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন নয়জন। যাচাই-বাছাই, আপিল ও প্রত্যাহারের পর ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন সাতজন। তাঁরা হলেন—নাজমুল হাসান পাপন (নৌকা), স্বতন্ত্র মোহাম্মদ আব্দুছ ছাত্তার (ঈগল), বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি-বিএসপির প্রার্থী হেলাল উদ্দিন (একতারা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. রুবেল হোসেন (মোমবাতি), জাতীয় পার্টির নুরুল কাদের সোহেল (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির তারেক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম (আম) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মোহাম্মদ আয়ুব হোসেন (ছড়ি)।

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনটি ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮২ হাজার ২৪৬। এঁদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪৮ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯৭ জন। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ-৬ আসনটি ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৯৯। এঁদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৫০৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯০ জন। 

কিশোরগঞ্জ-৪ বর্তমান সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে টানা সাতবারের সংসদ সদস্য ছিলেন তাঁর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আসনটিতে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাঁর বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। পরে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাবার রাজনীতির উত্তরাধিকারে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক দলটির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে এবারের নির্বাচনে তাঁর কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ফলে জয় পেতে তাঁকে বেগ পেতে হবে না বলে মনে করছেন ভোটাররা। 

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ১৯৭৩ সালে, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে মোট পাঁচবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করে। ১৯৭৯ সালে বিএনপির মজিবুর রহমান, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির আবুবকর সিদ্দিক, ১৯৯১ সালে বিএনপির আবদুল লতিফ ভূঁইয়া এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মো. শফিকুল ইসলাম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাজমুল হাসান পাপন। তবে এর আগে ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে এ আসনে ৩ এপ্রিল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে নাজমুল হাসান পাপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও জয় পেতে তাঁর বেগ পেতে হবে না বলে মনে করছেন ভোটাররা। 

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপনআওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে চিহ্নিত কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে তৌফিক আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তৌফিক তাঁর বাবার আদর্শে গড়ে তুলেছেন নিজের কর্মী বাহিনী। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিণী গ্রেনেড হামলায় নিহত নারীনেত্রী আইভি রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের পাপনের রয়েছে সুবিশাল অনুগত কর্মী বাহিনী। দলীয় এবং নিজেদের এ অবস্থানকে ধরে রেখে নির্বাচনে জয়ের জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন তাঁরা।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ‘দুই নৌকার মাঝির বিপরীতে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের ঠিকমতো তাঁদের ওয়ার্ডের মানুষজনই চেনেন না। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও অনেক প্রার্থীকে চেনে না। যদি বিএনপি নির্বাচনে আসত, তবে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী পেত নৌকা মনোনীত দুই প্রার্থী। আমরা জানি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে টক্কর দেওয়ার মতো এই দুই আসনে কেউ নেই। আওয়ামী লীগের বাইরে বাকি দলগুলোর তেমন কোনো প্রভাব নেই। আওয়ামী লীগ মনোনীতরা ছাড়া অন্য সবাই দুর্বল প্রার্থী। জাতীয় পার্টি ছাড়া নামসর্বস্ব দলের প্রার্থীদের সঙ্গেও এলাকার ভোটারদের কোনো যোগাযোগ নেই।’

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের ইটনা উপজেলার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, এই আসনে ছোট দলের কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী না থাকায় তৌফিকের বিজয় অনেকটা নিশ্চিত।

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের ভৈরব উপজেলার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘নৌকার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন না করায় লড়াই তেমন একটা জমবে না। এখানে নৌকার প্রার্থী সহজেই জিতবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ-৪ ও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। এখন আমাদের লক্ষ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা।’

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘আমার আসনে আরও পাঁচজন প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। বিগত সময়ে হাওরে সর্বোচ্চ উন্নয়ন করেছি। জনগণ আমার সঙ্গে আছে। নির্বাচনে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না এলে আমার কী করার আছে? কেউ দাঁড়াল না কেন, সেটা তাঁদের বিষয়। নির্বাচনে ভোটাররা স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোট দেবে বলে আশা করি।’ 

কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপনের মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত