খালের মধ্যে রামের বোন সীতার বাড়িও আছে, তিনি গানও করেন: কাকে ইঙ্গিত করলেন শ্যামল দত্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৯: ৪১
Thumbnail image

বেদখল খাল উচ্ছেদের পর আবার দখল হয়ে যায়। খাল পুনরুদ্ধার অভিযানে পরিপূর্ণভাবে সফলতা পেতে হলে প্রয়োজন সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারণ, খাল দখল ও দূষণের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা সবাই প্রভাবশালী। অনেকেই রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট। ফলে খাল থেকে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও ক্ষমতাধরেরা ছাড় পেয়ে যান। 

আজ শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরের বিআইপি সম্মেলনকক্ষে ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে খাল পুনরুদ্ধারের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সংলাপে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। সংলাপের আয়োজন করে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা)। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘ঢাকার খালগুলো উদ্ধারের বিষয় এসেছে। কারণ, এগুলো দখল হয়ে গেছে। যারা খাল দখলকারী, তারা এতটাই প্রভাবশালী যে, সরকারের হাত অত দূর পৌঁছাতে পারছে না। আজকে খাল উদ্ধার করলে কালকে আবার দখল হয়ে যাবে।’ 

রামচন্দ্রপুর খালের জায়গায় সম্প্রতি সাদিক অ্যাগ্রোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রসঙ্গ এনে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘রামচন্দ্রপুর খালে দেখলাম আরেক ঘটনা। সেখানে কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও অনেক দখলদার রয়ে গেছে। খালের মধ্যে রামের বোন সীতার বাড়িও আছে। তিনি আবার গানও করেন। সীতা নাকি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে অনুমোদনও নিয়েছেন। এটা খুঁজে বের করেন, নইলে সাদিক অ্যাগ্রো উচ্ছেদে খুশি হয়ে কোনো লাভ হবে না।’ 

সভায় আলোচকেরা জানান, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশন খালগুলো বুঝে নেওয়ার চার বছর পার হলেও রাজধানীর জলাবদ্ধতার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বর্ষায় স্বল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থান। 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগর-পরিল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ‘শুধু খালের মালিকানা বদল ঢাকা শহরের খালগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে না। রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনমনীয় দৃঢ়তা থাকলে খালগুলোকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’ 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে খালগুলো পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করি। আমরা লক্ষ করি, শ্যামপুর খালের একটি অংশ ১০০ ফুট প্রশস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে আমরা পেয়েছি ৮ ফুটের একটি নালা। এ রকম চিত্র কিন্তু প্রায় সব জায়গায়।’ 

মেয়র জানান, জিরানী, মান্ডা, শ্যামপুর ও কালুনগর খাল নিয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সিএস, আরএস, এসএ নকশা, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা এবং পানি আইন অনুযায়ী এই ৪ খাল দখলমুক্ত করা হবে। আগামী মাস থেকে ব্যাপকভাবে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। 

জলাবদ্ধতার বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ২০২০ সালের পর থেকে ঢাকা সিটিতে আমরা ১৬১টি জলাবদ্ধ স্থান শনাক্ত করেছি। যেসব জায়গায় বৃষ্টির পর আধা ঘণ্টার বেশি পানি জমে থাকে। তবে ১৩৬ স্থানে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি জায়গাগুলোর কাজ চলমান। তবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আরও কয়েকটি জায়গায় নতুন করে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। 

ডুরার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, ডুরার সভাপতি ওবায়দুর মাসুম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত