Ajker Patrika

টাকা দিয়ে কোনো দিন লোক ভাড়া করিনি: আইভী

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
টাকা দিয়ে কোনো দিন লোক ভাড়া করিনি: আইভী

‘আমাদের দেশে ইলেকশন মানেই আনন্দ, ফুর্তি, হইচই, চিৎকার চেঁচামেচি ইত্যাদি। এখন আনন্দ, ফুর্তির চাইতে সেই বিষয়গুলো হয়ে যাচ্ছে মানুষের ওপর জুলুম। কাউন্সিলররা জানে, টাকা না দিলে এখন কেউ মিছিল করতে চায় না। সবাই লোক ভাড়া করে আনে। তবে আমি এখন পর্যন্ত এক টাকা খরচ করেও লোক ভাড়া করে আনি নাই।’

আজ রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জস্থ নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এদিন ‘নগর যুব কাউন্সিল গঠনে তরুণদের সম্পৃক্তকরণ প্রকল্পে’এর আয়োজন করে সিরাক বাংলাদেশ।

আইভী বলেন ‘আমার প্রচারণায় লোক দুই জন হলেই যথেষ্ট। আমার পাঁচ শ লোকের দরকার নাই। আমি রাজনীতিতে ২০ বছরে পা দিয়েছি। কোনো দিনও টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করিনি। এটা ছিল আমার একটা আইডিওলজি। আমি এসেছি সেবা করতে। মানুষ সুযোগ দিলে সেবা করব, না দিলে করব না। কারণ আমি এই রাজনীতি করে খাই না, ভাত কাপড় এখান থেকে নেই না, এই শহরে চাঁদাবাজিও করি না। এই মোরালনেস আমার ভেতরে আসার কারণ এগুলোই। আমি মনে করি এখন যারা তরুণ প্রজন্ম আছে তাদের ভেতরেও এই ধরনের মানসিকতা তৈরি হোক।’

কর্মশালায় অংশ নেওয়া তরুণদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে হলো তরুণদের এমনভাবে গড়ে তোলা যেন তারা আগামীতে লিডার হতে পারে। তোমরা সবাই মিলে একজন প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে এবং সে হবে তোমাদের নেতা। এর মাধ্যমে তোমরা স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনে, মানুষকে ডিস্টার্ব না করা, মাইক না বাজানো, চিৎকার চেঁচামেচি না করা এগুলোও শেখা হবে। যদিও আমাদের দেশে এগুলো কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তোমরা যদি সেবার মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠো যে, নেতা হয়ে কারওটা খাব না, ধরব না, প্রয়োজনে না খেয়েই নিজের আদর্শ টিকিয়ে রাখব। এই বিষয়টি মাথায় রাখতে পারলে পুরোনো কালচার থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।’

দ্রুত ধনী হওয়ার প্রবণতার সমালোচনা করে আইভী বলেন, ‘আজকে আমরা মুহূর্তের মধ্যে বড়লোক হতে চাচ্ছি। আজকে ডাক্তারি পাস করে কালকে আমার গাড়ি দরকার। ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি, আমার বাড়ি দরকার। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদের সমাজকে নষ্ট করছে। অন্যদিকে প্রচুর মানুষ দেশের বাইরে চলে যেতে চাইছে। তারা এই অসুস্থ পরিবেশে থাকতে চায় না। ফলে বড় একটি মেধাবী গোষ্ঠী দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এভাবে যদি দক্ষরা সবাই চলে যায় তাহলে প্রান্তিক মানুষের উন্নতি কীভাবে হবে? আমাদের সবাইকেই দক্ষ হতে হবে। দক্ষ মানে এই নয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা বা বুয়েট থেকে পড়াশোনা করা ছাত্র। ক্লাস ৮ এর ছাত্রও দক্ষ হতে পারে। সে কারিগরি পড়াশোনা করে ভিন্ন দিকে দক্ষতা অর্জন করতে পারে।’

মেয়র নারীদের সামাজিক বাধা ভেঙে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এখন মেয়েরাও উবার চালানো শুরু করেছে। অনেকেই স্কুটি চালিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছে। কোনো ভয় করবেন না। আপনি আপনার নিজের কাছে স্বচ্ছ থাকলে কে কি বলল সেসব কোনো ম্যাটার না। আপনি একদিন অফিসে যাবেন, হয়তো দুজন বখাটে টিজ করবে। কারণ সে এই বিষয়টি দেখে অভ্যস্ত না। যদি দশটা মেয়ে স্কুটি চালায়, তখন আর কিছুই বলবে না। কারণ তখন তারাও অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আমাদের দেশে পরিবর্তন হতে সময় লাগে। আমাদের মা বোনেরাই প্রথমে না করবে। পরে তারা আর কিছু বলবে না।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের ভেতর আরও বক্তব্য রাখেন, নাসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম, সিরাক বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এসএম সৈকত, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সেলিম মিয়া, প্রোগ্রাম অফিসার নাহিদুর রহমান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত