তারাবিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতার গলিত লাশ মিলল ২৫ দিন পর 

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৭: ০৯
Thumbnail image

কিশোরগঞ্জে রমজানের তারাবিতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ছাত্রলীগ নেতার গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সন্দেহভাজন আটকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত নরসুন্দা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। অবশেষে আজ বিকেল ৪টার দিকে মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। 

এর আগে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের ব্যবহৃত লুঙ্গি, ভাড়া বাসার চাবি ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছিল পুলিশ। 

ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মোখলেছ উদ্দিন ভূইয়া (২৫)। তিনি জেলার মিঠামইন উপজেলার কেওরজোড় ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেনের ছেলে। মোখলেছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া জেলা জজ আদালতের একজন পেশকারের সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল সোমবার থেকে উদ্ধার অভিযান চলছিল। আজকে (মঙ্গলবার) বিকেল ৪টার দিকে নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় অর্ধগলিত মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। 

ছাত্রলীগ নেতা মোখলেছ নিখোঁজের ঘটনায় তাঁর বন্ধুসহ চারজনকে আটকের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিকভাবে তথ্য দিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু। এ তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে নদীতে নিখোঁজের সন্ধানে অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। 

মোখলেছ জেলা শহরের হারুয়া বৌবাজার এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন। আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা গত ২৯ মার্চ সর্বশেষ মোখলেছকে দেখা যায়। 

এদিকে নিখোঁজের দিনের সিসিটিভি ফুটেজে মোখলেছের বন্ধুকে দেখা যাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর পরিবারের চারজনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন মোখলেছের বন্ধু মিঠামইনের কেওয়ারজুর ইউনিয়ন ফুলপুর গ্রামের মিজান শেখ (২৮), তাঁর বাবা শেফুল শেখ (৬৫) ও মিজানের দুই ভাই মারজান শেখ (২৬) ও রায়হান শেখ (২১)। গত শনিবার তাঁদের আটক করা হয়। 

নিখোঁজ মোখলেছের বড় ভাই মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ পাগলা মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে ৩১ মার্চ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করি।’ 

তিনি জানান, মোখলেছ ও মিজান বন্ধু। মোখলেছ নিখোঁজের পর মিজানকে জিজ্ঞাসা করেও কোনো সদুত্তর পাননি। বরং নির্লিপ্তভাবে তাঁকে এড়িয়ে চলছিলেন। পরে পুলিশ ওই মোখলেছের ভাড়া বাসার পাশের সিসিটিভি ফুটেজ অনুসন্ধান করে ওই দিন মিজানকে ওই এলাকায় দেখা গেছে। 

আটক মিজানকে নরসুন্দা নদীর ব্রিজের নিচ থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা। সিসিটিভি ফুটেজের বর্ণনা দিয়ে নিখোঁজের বড় ভাই মিজান বলেন, ‘আমরা হারুয়া টপ টেনের দোকান থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। পাগলা মসজিদ থেকে তারাবির নামাজ পড়ে মোখলেছ বাসায় যাচ্ছিল। সে যে বাসায় থাকত তার কাছাকাছি একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ফুটেজে দেখা গেছে, ২৯ মার্চ রাত ৯টা ৪৪ মিনিটে মোখলেছ হেঁটে বাসায় ফিরছে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পেছন থেকে হেঁটে আসছে মিজান। অথচ মিজান হারুয়া এলাকায় থাকে না।’ পরে গত ১৬ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মিজান ও অজ্ঞাত চার-পাঁচজনকে আসামি করে অপহরণের মামলা করেন তিনি। 

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয় যে মোখলেছ নিখোঁজ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। পরে নিখোঁজের পরিবার থেকে অপহরণের মামলা করা হয়। এর ভিত্তিতে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা হত্যার কথা স্বীকার করেন।’ 

পুলিশ সুপার আরও বলেন, আটক মিজানের বক্তব্য অনুযায়ী মোখলেছকে হত্যা করে নরসুন্দা নদীর ফুটওভার ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। গতকাল থেকে সেখানে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অবশেষে আজ বিকেলে মরদেহ উদ্ধার হলো। 

আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সুপারিশ কমিশনের

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত