Ajker Patrika

কর্মীর কান ফাটানোর অভিযোগ জাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

জাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩, ২২: ৪৮
কর্মীর কান ফাটানোর অভিযোগ জাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর করে কান ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক নেতার বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন আবাসিক হলের অতিথি কক্ষে এই ঘটনার সময় আরও সাত ছাত্রলীগের নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ভুক্তভোগী ‘অভিনয় করছে’ বলে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে সময়ক্ষেপণ করেন অভিযুক্তরা। 

গতকাল মঙ্গলবার রাতে হলটির অতিথি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন সাড়ে ৮টার দিকে বহিরাগতকে মারধর ও অন্যান্য বিষয়ে হল ইউনিট ছাত্রলীগের মিটিং শুরু হয়। মিটিংটি শেষ হয় আনুমানিক রাত ২টার দিকে। 

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ ব্যাচের ছাত্র শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সামিন ইয়াসির শাফিন ও শাহ পরান, ৪৫ ব্যাচের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আলরাজি সরকার এবং ৪৬ ব্যাচের সাগর সিদ্দিকীসহ প্রমুখ। 

অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সজীব আহমেদ। তিনি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। 

সজীব আহমেদ বলেন, ‘ঝামেলাটা শুরু হয়েছিল বহিরাগত একজনের সঙ্গে। সে ছাত্রলীগের বড় ভাইদের অতিথি ছিল। এই ঝামেলার কারণে আমাদের গেস্টরুমে ডেকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়। নায়িম (রসায়ন ৪৮) সিয়াম (প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ-৪৮) ও আমার কানে ইচ্ছেমতো মারার চেষ্টা করা হয়। আমি কানে হাত দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করলে হাত সরিয়ে মারধর করেছে ইতিহাস বিভাগের ৪৪ ব্যাচের ফরিদ ভাই। আমি অসুস্থ হলে শুয়ে পড়ি, কিন্তু তারা আমাকে বসতেও দেয় নাই। ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলে যেতে দেয় নাই। আমি নাটক করছি বলে আমাকে লাথি দেওয়ার চেষ্টা করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬ ব্যাচের মোস্তাফিজুর রহমান ভাই।’ 

তবে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রোজার আগে কর্মীদের দিকনির্দেশনা দিতে গেস্টরুম ডাকি। এ ছাড়া গেস্টরুমে কর্মীদের সমসাময়িক কিছু মারধরের ঘটনা বিষয়ে জানতে আমরা তাদের নিয়ে বসি।’ 

আরেক অভিযুক্ত হাসান মাহমুদ ফরিদ বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত গেস্টরুম চলছিল এমন সময় সজীবের কান দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। তখন আমাদের ভাইয়েরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।’ 

অভিযুক্ত ইমরান বলেন, ‘রোজা এবং ইফতার নিয়ে আমাদের গেস্টরুম চলছিল। এ সময় সবার সামনে সে শারীরিক দুর্বলতাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’ 

ভুক্তভোগী সজিব আরও বলেন, ‘আমাকে জাবি মেডিকেলে নেওয়ার পর ডাক্তারেরা এনাম মেডিকেলে সুপারিশ করলে ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে হলের বড় ভাইয়েরা আমাকে যেতে দেয়নি। পরে বন্ধুরা জোর করে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানায় আমার কানের পর্দা অনেকটা ফেটে গেছে। এক মাস পরে জানা যাবে সেটি পুরোপুরি সেরে উঠবে কি না!’ 

লিখিত অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী বলেন, ‘তারা ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাদের কারওরই ছাত্রত্ব নেই। কার কাছে অভিযোগ দেব?’ 

এদিকে হলের অন্য ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জুনিয়রদের হুমকি ও আহত সজীবের চিকিৎসায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সিনিয়রের থাপ্পড়ে সজীবের কান ফেটে রক্ত বের হয়। তখন সজীব কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করেন, ‘ভাই আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর রাজনীতি করব না। বাসায় চলে যাব।’ সজীব কান্না করতে শুরু করলে ক্ষিপ্ত হয়ে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বলেন, ‘ওই নাটক করতেছে। ওরে তোল। আজকে এই গেস্টরুম থেকে ওর লাশ বের হবে।’ 

সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে ২১ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি দিবেন্দু দিব্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে তাঁকে হলের গেস্টরুমে তুলে এনে মারধর করেন তাঁরা। রাবি ছাত্রলীগের ওই নেতা জাবি ছাত্রলীগের উপছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আলরাজি সরকারের পরিচিত হওয়ায় হলের সিনিয়রদের নিয়ে মিটিং হয়। মীমাংসা শেষে দিব্য ক্ষমা চেয়ে চলে যাওয়ার সময় হলের জুনিয়র কর্মীরা আবারও মারধর করেন। এ ঘটনাসহ হলের অন্যান্য ঘটনা নিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় গেস্টরুম শুরু হয়।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। রমজান মাসের আগে সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সবাইকে নিয়ে বসতে বলা হয়েছিল। শুনেছি ছেলেটির কানে আগে থেকেই সমস্যা ছিল। আর গেস্টরুমে একসঙ্গে এক-দেড় শ জন বসার ফলে একটু ক্রাউড হয়। তখন হঠাৎ ওর কান থেকে রক্ত বেরোতে শুরু করে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মীর মোশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি জেনেছি। ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। হলের অন্য শিক্ষকদের নিয়ে বসে প্রকৃত ঘটনা জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাতীয় নির্বাচন: ভোট কমিটির নেতৃত্বে ডিসি–ইউএনওকে না রাখার চিন্তা

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত