Ajker Patrika

৮ বছরেও সংস্কার নেই ভাটার জন্য কাটা বাঁধে

  • মধুমতী নদীতীরে বেড়িবাঁধের ৩টি স্থানে কেটে রাখা হয়েছে।
  • বন্যার পানি লোকালয়ে ঢুকে ক্ষতির সম্মুখীন হন এলাকার বাসিন্দারা।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
নদীপথে মাটি ও ইট পরিবহন করতে কেটে ফেলা হয়েছে বেড়িবাঁধ। ছবিটি সম্প্রতি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার চরগওহরডাঙ্গা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদীপথে মাটি ও ইট পরিবহন করতে কেটে ফেলা হয়েছে বেড়িবাঁধ। ছবিটি সম্প্রতি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার চরগওহরডাঙ্গা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় একটি বেড়িবাঁধের তিন স্থানে কেটে ইটভাটার রাস্তা তৈরির আট বছরেও বাঁধটি সংস্কার করা হয়নি। এতে বন্যার পানি লোকালয়ে ঢোকায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের চলাচলেও ভোগান্তি হচ্ছে।

স্থানীয়দের বলছেন, আওয়ামী লীগের দুই নেতার ইটভাটার জন্য উপজেলার চর গওহরডাঙ্গা এলাকার মধুমতী নদীতীরে বেড়িবাঁধের ওই জায়গাগুলো কেটে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার দক্ষিণাঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে তারাইল-পাঁচুড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয় ওই বেড়িবাঁধ। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। তবে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ১৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও করা হয় ১৫ কিলোমিটার। এ কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। পরে টুঙ্গিপাড়ার চর গওহরডাঙ্গা এলাকার মধুমতী নদীতীরে বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে কেটে ফেলা হয়। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ইলিয়াস হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ তাঁদের মালিকানাধীন জুয়েল ব্রিকস এবং বাবুল ব্রিকসে নদীপথে মাটি ও ইট পরিবহন করতে এই বাঁধ কেটে ফেলেন।

স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় ওই ভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি তাঁরা। বাঁধ কেটে ফেলায় বন্যার পানি ঢুকে তলিয়ে যায় ফসলি জমি ও বাড়িঘর। বেড়িবাঁধের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে না পারায় চরম বিপাকে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ময়ূর আলী শেখ বলেন, ‘বেড়িবাঁধ তিন জায়গায় কাটা রয়েছে। ইবাদত খলিফার ভাটার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। বেড়িবাঁধ ঠিক হলে মালামাল রাস্তা দিয়ে আনতে পারব।’

হেদায়েত শেখ নামের একজন বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে জুয়েল ভাটা। ভাটার পাশে যে বেড়িবাঁধ রয়েছে, সেটি ইটভাটার প্রয়োজনে কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে বর্ষার সময় আমাদের ঘরে পানি ঢুকে যায়।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাহানা বেগম বলেন, ‘আমাদের রাস্তা ছিল। ভাটাওয়ালারা রাস্তার ওপরে মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। আমাদের বাড়িতে ভ্যানগাড়ি আনার কোনো কায়দা নাই। বাড়িতে ঢোকার কোনো কায়দা নাই। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ারও উপায় নাই।’

তুরানী আক্তার বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ঠিক নাই। এ জন্য আমাদের চলাচলে অসুবিধা হয় এবং বেড়িবাঁধের ওপর মাটি ফেলে রাখায় বাড়ি থেকে বের হতে পারি না। ইটভাটার ভেতরের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়।’

গোলাম মোস্তফা শেখ বলেন, ‘আমরা গেরামের সব মানুষ দুর্ভোগে পড়েছি। এক পাশে রাস্তা এবং অপর পাশে ইটভাটার সামনে কাটা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই।’

গত ৫ আগস্টের পর টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই দুই নেতা গা ঢাকা দেওয়ায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

গোপালগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রেফাত জামিল বলেন, ‘কাজটি বাস্তবায়নের সময় বেড়িবাঁধের কয়েকটি পয়েন্টে স্থানীয়ভাবে সমস্যার কারণে বাস্তবায়ন করা যায়নি। বর্তমানে বিষয়টি পুনরায় নজরে এসেছে এবং স্থানীয় লোকজনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ করা যায় কি না, সে বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছি।’ তিনি বলেন, যদি ব্যক্তিগতভাবে বেড়িবাঁধ কেউ কেটে থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

খেজুরে অতি মুনাফা, হতাশ ক্রেতা

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

কলাবাগানে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মরদেহ উদ্ধার

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত