প্রজাপতির রঙে রঙিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

মুশফিকুর রিজন, জাবি
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০: ৪৯
Thumbnail image
প্রজাপতির রঙে রঙিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ আর জীববৈচিত্র্যের অপরূপ মেলবন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হয়ে গেল ১৪তম প্রজাপতি মেলা। আজ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসে আয়োজিত এই মেলা আকৃষ্ট করেছে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষকে। প্রকৃতিপ্রেম, শিক্ষামূলক আয়োজন এবং বিনোদনের অনন্য সংমিশ্রণ হয়ে উঠেছে এই মেলা।

প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এই মেলার আয়োজন করা হয়। জহির রায়হান মিলনায়তন এলাকায় আজ সকালে মেলা শুরু হয়ে সন্ধ্যায় শেষ হয়।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘আমি এই আয়োজনকে গুরুত্ব দিই প্রধানত দুটি কারণে। প্রথমত, এই আয়োজনের মাধ্যমে প্রাণীর প্রতি নৈতিক বিবেচনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, একটি অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই প্রজাপতি মেলা জাহাঙ্গীরনগরকে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘একটি প্রজাপতি পরাগায়নের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে। মানুষেরও এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বৈষম্যে ঘেরা এই মানবজাতির বৈচিত্র্যের নামে বিভাজনের যে ষড়যন্ত্র, সেটার বিপরীতে প্রজাপতি আমাদের দারুণ এক শিক্ষা দিচ্ছে। একটি প্রজাপতি যদি গোটা মানবজাতিকে রক্ষার জন্য ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে একজন বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষ কেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর মতো আচরণ করবে?’

প্রজাপতির রঙে রঙিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রজাপতির রঙে রঙিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেলার শুরু থেকেই জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ছোট্ট শিশুরা কেউ পরেছে প্রজাপতির আদলে তৈরি পোশাক, কেউবা পরেছে প্রজাপতির মুখোশ। শিক্ষার্থীরা এসেছে রঙিন শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে। মেলার প্রতিটি কোণেই ছড়িয়েছে প্রজাপতির রঙিন ছোঁয়া।

প্রজাপতি সংরক্ষণের বিশেষ প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীরা বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি দেখতে পেয়েছে, যা তাদের প্রকৃতির প্রতি আরও আকৃষ্ট করেছে।

মায়ের সঙ্গে ঘুরতে এসে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুসারাত সায়ান মৌন বলে, ‘আমি মায়ের সঙ্গে প্রজাপতি মেলা দেখতে এসেছি। এখানে অনেক রঙের প্রজাপতি দেখতে পেয়ে আমার ভালো লাগছে।’

প্রজাপতির রঙে রঙিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রজাপতির রঙে রঙিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেলা দেখতে আসা বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রজাপতির ব্যাপারে সবারই আগ্রহ থাকে। প্রজাপতি সব সময় আমাদের মনকে রাঙিয়ে দেয়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে এই প্রজাপতি। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র। ১৯৯২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর এ রকম প্রজাপতি মেলা হতো না। আর এ জন্য আমি বাগেরহাট থেকে এই মেলা দেখার জন্য এসেছি।’

মেলায় শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতিবিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি ও প্রকৃতিবিষয়ক কুইজ, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা এবং বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া প্রজাপতির গল্পে পাপেট শো প্রদর্শিত হয়।

মেলায় প্রজাপতি সংরক্ষণে সার্বিক অবদানের জন্য বন ও প্রকৃতি–বিষয়ক সংগঠন ‘প্ল্যান্টেশন ফর নেচার’-এর প্রতিষ্ঠাতা সবুজ চাকমাকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির আহমেদকে দেওয়া হয় বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত