প্রবাসীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ২০: ২৫
Thumbnail image

ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শামীম আহমেদ জয় (২৩) ও মোহাম্মদ স্বাধীন আহমেদ (১৮)। এ সময় হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি সিপিইউ, দুটি মোবাইল ফোন, একটি রাউটার ও ১২টি ভুয়া এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কার্ড জব্দ করা হয়। পরে তাঁদের দখলে থাকা প্রায় ৫০০ দেশি-বিদেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া যায়। 

আজ শনিবার দুপুরে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তাররা একসময় মানুষের হ্যাক হওয়া আইডি উদ্ধার করে সহযোগিতা করতেন। পরে তাঁরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।’ 

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার শামীম আহমেদ জয় বলেন, আগে সে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে হ্যাক হওয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের কাজ করতেন। পরবর্তীকালে ২০২৩ সাল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ওই অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা পরিচিত ব্যক্তিদের মেসেঞ্জারে ‘আমার মা স্ট্রোক করেছে। জরুরি দরকার। ৩০০০ ডলার পাঠাও।’ এমন সব বার্তা পাঠিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা শুরু করে। হ্যাক করা অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেও আদায় করা হতো অর্থ। এমনকি হ্যাক করা আইডি থেকে গুরুত্বপূর্ণ-স্পর্শকাতর তথ্য, গোপন ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

যেভাবে হ্যাক করা হয় অ্যাকাউন্ট

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে হ্যাক হওয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের কাজ করতেন গ্রেপ্তার শামীম আহমেদ জয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে একজন অস্ট্রেলীয় প্রবাসী বাংলাদেশির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের কাজ পান তিনি। অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী ওই বাংলাদেশির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের পর সে অ্যাকাউন্টটি ফেরত না দিয়ে এর ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা পরিচিত ব্যক্তিদের মেসেঞ্জারে ‘আমার মা স্ট্রোক করেছে। জরুরি দরকার। ৩০০০ ডলার পাঠাও।’ এমন সব বার্তা পাঠিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা শুরু করে। এ ছাড়া ওই অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা বন্ধুদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে তাদের অ্যাকাউন্ট ভ্যারিফাই করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অথবা অ্যাকাউন্টের সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে একটি মোবাইল নম্বর অথবা একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস অ্যাড করার অনুরোধ করত। ভুক্তভোগী মোবাইল নম্বরটি অথবা ই-মেইল অ্যাড্রেসটি অ্যাড করলে শামীম আহমেদ জয় টার্গেট অ্যাকাউন্টটিতে ‘ফরগেট পাসওয়ার্ড’ অপশনটি ব্যবহার করে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতেন। এরপর একটি লেমিনেটিং মেশিন ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে ফেসবুকে সাবমিট করে হ্যাককৃত অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতেন। এ ছাড়া হ্যাককৃত অ্যাকাউন্টের গোপন তথ্য ও ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েও অনেক ভুক্তভোগীকে অর্থ দিতে বাধ্য করেছে গ্রেপ্তার শামীম আহমেদ জয়।

হ্যাককৃত অ্যাকাউন্টের সংখ্যা

গ্রেপ্তারের পর শামীম আহমেদ জয়ের দখলে থাকা প্রবাসীদের প্রায় ৫০০ ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগইন করার প্রয়োজনীয় ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের তথ্য পাওয়া যায়। 

আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ

ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই হ্যাকারের টার্গেট। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে শামীম আহমেদ জয়। প্রত্যেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বনিম্ন এক হাজার ডলার নিতেন তিনি। মায়ের অসুস্থতার কথা বলে, অথবা গোপন তথ্য ও ছবি ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগী তাঁকে টাকা দিয়েছেন। এভাবে অনেক মানুষকে তিনি সর্বস্বান্ত করেছেন। শত শত মানুষকে প্রতারিত করার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে তদন্ত চলমান রয়েছে। 

মামলা ও গ্রেপ্তার

এ-সংক্রান্ত কানাডায় বসবাসকারী এক প্রবাসীর সাড়ে ৮ হাজার কানাডিয়ান ডলার আত্মসাৎ করার ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে অভিযোগ করলে সাইবার-সিটিআই টিমের একটি দল অভিযোগ তদন্ত করে হ্যাকিং চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে। পরবর্তীকালে ভুক্তভোগীর বাবা উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন। মামলাটি সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে হস্তান্তরের পর ডেমরা থানাধীন টেংরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত