Ajker Patrika

কিশোরগঞ্জের ৬ আসনে নৌকা চান সাবেক ৩ রাষ্ট্রপতির সাত আত্মীয়সহ ৬৭ জন

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ২২: ২৬
কিশোরগঞ্জের ৬ আসনে নৌকা চান সাবেক ৩ রাষ্ট্রপতির সাত আত্মীয়সহ ৬৭ জন

কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘিরে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। ছয়টি আসনে সাবেক তিন রাষ্ট্রপতির সাত আত্মীয়সহ অন্তত ৬৭ জন দলীয় প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে যোগাযোগ রক্ষাসহ নানাভাবে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এই মুহূর্তে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। ছয়টি আসনে দলের প্রার্থী কারা হচ্ছেন, সেই আলোচনা চলছে সংসদীয় আসনগুলোর সাধারণ মানুষের মাঝেও। 

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের বড় ছেলে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রভাব বরাবরই তুঙ্গে ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর আসনটিতে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাঁর বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তবে এবার তাঁর আপন বড় ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু মনোনয়ন দৌড়ে থাকায় বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁকে। 

সৈয়দ পরিবারের বাইরে প্রভাবশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী মশিউর রহমান হুমায়ুন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। ২০১৮ সালের পর কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে সরব হন তিনি। সদর ও হোসেনপুর উপজেলার রাজনীতিতে তাঁর আধিপত্য বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের সুবিধা বাড়িয়ে নিজেকে জনপ্রিয় করেছেন মশিউর। চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করেছেন কয়েক হাজার মানুষের। এ ছাড়া এ আসনে সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেজো ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিনসহ মোট ১১ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি, রাষ্ট্রদূত ও সচিব নূর মোহাম্মদ। পাকুন্দিয়া উপজেলায় সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন ও বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের মধ্যে কোন্দল বহু দিন ধরেই বেশ আলোচনায়। স্থানীয়রা এ ধরনের কোন্দলকে বলেন ‘হাইজের মাইর’। এই ঘটনা জেলাবাসীর হাসির খোরাক জুগিয়েছে এত দিন।

কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যের মনোনয়ন কোন্দল নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ১৪ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জনের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের নেতা-কর্মীদেরই ভাবাচ্ছে। 

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসন রামের রাজত্ব নাকি রাবণের রাজত্ব তা বলা মুশকিল! তবে এ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর রাজত্বে বহুদিন ধরে কোণঠাসা আওয়ামী লীগ। এ আসনে একচ্ছত্র আধিপত্য চুন্নুর। চুন্নুর রাজনৈতিক কৌশলের কারণে এ আসন থেকে তাঁর এপিএস বাবলুসহ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ সংখ্যক—২১ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এই আসনে সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের শ্যালক চিকিৎসক আ ন ম নৌশাদ খানও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। 

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন) আসনে টানা সাতবারের এমপি ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আসনটিতে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তাঁর বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। পরে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন।

বাবার রাজনীতির উত্তরাধিকারে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক দলটির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ আসনে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি ছাড়াও ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী মো. আবদুল হামিদ দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। 

কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে ক্ষমতায় থাকার ১৫ বছরে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন আফজাল। দলের ভেতরে-বাইরে তাঁকে নিয়ে রয়েছে সমালোচনা। তিনি ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। তাঁদের অভিযোগ, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বাজিতপুরে তাঁর ভাই ও আত্মীয়দের দিয়ে রাজত্ব কায়েম করে রেখেছেন তিনি।

তবে তাঁর পিঠ বাঁচাতে একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের আরেকটি পক্ষ। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। এতে রাজনীতির মাঠ যেমন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কও ছড়িয়েছে। এবারের নির্বাচনেও আফজাল হোসেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এমপি আফজাল হোসেন ছাড়াও এই আসনে ১৫ নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের ছয়বারের এমপি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে এই আসন থেকে তাঁর ছেলে নাজমুল হাসান পাপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এই আসনটিতে তাঁর মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিতই মনে করছেন সমর্থকেরা। এরই মধ্যে তিনি এই আসনে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন একমাত্র প্রার্থী হিসেবে। আসনটিতে আর কেউ মনোনয়ন ফরম তোলেননি। 

এদিকে সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরোধী দলে থাকলেই তত্ত্বাবধায়ক ভালো, আর সরকারি দলে থাকলেই সেটি খারাপ—এই হলো দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে প্রধান দুই দল ঐকমত্যে পৌঁছাতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ। এই অনৈক্যের কারণে নির্বাচনে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনতা তৈরি হয়েছে, তাতে ভোটকেন্দ্রে আর যেতে চান না ভোটাররা। এটিই বর্তমান রাজনীতির বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, শত ফুল ফুটতে দাও। তাই সবাই মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছেন। তবে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, জেলা আওয়ামী লীগের সব নেতৃবৃন্দ তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাটি কাটা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এসআইসহ ৬ জন টেঁটাবিদ্ধ, বাড়িঘরে আগুন

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এসআইসহ অন্তত ছয়জন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় অন্তত চারটি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের কংশপুরা গ্রামে মো. জহির ও খলিলুর রহমানের লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

টেঁটাবিদ্ধ সিরাজদিখান থানার এসআই হাফিজুর রহমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বাকি আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মাটি কাটা নিয়ে কংশপুরা গ্রামের খলিলুর রহমান ও পূর্ব রামকৃষ্ণদি গ্রামের মো. জহিরের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কংশপুরা গ্রামে দুই পক্ষের লোকজন টেঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় উভয় পক্ষের কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষ থামাতে সিরাজদিখান থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে এসআই হাফিজুর হাতে টেঁটাবিদ্ধ হন। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।

সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহানারা আক্তার বলেন, পুলিশের এসআইয়ের ডান হাতে টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢামেকে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘জহিরের অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়ায় লোকজন নিয়ে আমার বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করা হয়েছে। আমার কয়েকজন লোক টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন।’

এদিকে মো. জহির বলেন, ‘খলিলের সঙ্গে আমার বিরোধ অনেক আগের। আজকের ঘটনায় আমি জড়িত নই।’

লতব্দী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দীন খান খোকন বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও ভরাটকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আজকের ঘটনায় কয়েকজন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন।

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে মামলা দায়ের করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরে নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের লাশ ২২ দিন পর পঞ্চগড়ে উদ্ধার

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি 
আক্তারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
আক্তারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

যশোরের চৌগাছায় নিখোঁজের ২২ দিন পর আক্তারুজ্জামান (৪৬) নামের এক পুলিশ সদস্যের অর্ধগলিত লাশ পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদরের ৬ নম্বর সাতমোড়া ইউনিয়নের নয়মাইল এলাকার একটি আখখেত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। আজ শুক্রবার নিহত আক্তারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার রাত ৬টা ১৫ মিনিট) পরিবারের সদস্যদের পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা জানান নিহত আক্তারুজ্জামানের স্ত্রীর ভাই মামুনুর রশীদ মামুন। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, পরনের প্যান্ট, শার্ট ও জুতা দেখে তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন লাশটি তাঁর বোনের স্বামীর।

জানতে চাইলে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন জানান, লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য থানায় রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা থানায় পৌঁছালে সেটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হবে। এরপর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

আক্তারুজ্জামান চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের জামলতা গ্রামের মৃত আনিচুর বিশ্বাসের ছেলে। তিনি খুলনা রেঞ্জের বাগেরহাট জেলার রামপাল থানায় কর্মরত ছিলেন।

জানা গেছে, লাশটির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তবে লাশটির কোনো তথ্য না থাকায় জানার জন্য চেষ্টা করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। ক্লুলেস লাশটির পরিচয় শনাক্তে একমাত্র সূত্র হয় উদ্ধার করা লাশের আন্ডারওয়্যার।

যা ছিল পুলিশের লোগো-সংবলিত। পরে সেটি একজন পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টিগোচর হলে তাঁর পরনের প্যান্ট, শার্ট ও জুতার ছবি নিহত আক্তারুজ্জামানের স্ত্রীকে নিয়ে দেখালে তিনি তাঁর স্বামীর পোশাক বলে শনাক্ত করেন।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী শাহিনা আক্তার শিমা চৌগাছা থানায় নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডি ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী-সন্তানসহ চৌগাছা শহরের ইছাপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আক্তারুজ্জামান। গত ২৬ নভেম্বর পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। পরদিন ২৭ নভেম্বর সকালে মহেশপুর যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান।

এর পর থেকে তাঁর আর খোঁজ মেলেনি।

জিডিতে শাহিনা আক্তার শিমা বলেন, ‘তিন দিন ধরে কোথাও স্বামীর সন্ধান না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।’ তিনি জানান, আক্তারুজ্জামান তাঁর ব্যবহৃত দুটি ফোন বাসায় রেখে গিয়েছেন। ফলে কোনোভাবেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সীমান্তে বাঘ আতঙ্ক, বিজিবির সতর্কতা জারি

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ০২
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারত থেকে বাঘ আসার খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছে বিজিবি।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৬৮ নম্বরের ৩ নম্বর উপপিলারের একপাশে ভারতীয় কোচবিহার রাজ্যের মাথাভাঙ্গা থানার বালারহাট এলাকা এবং অন্যপাশে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জগৎবেড় ও জোংড়া ইউনিয়ন সীমান্তের মোহাম্মদপুর ককোয়াবাড়ী এলাকা। কাঁটাতারবিহীন ওই সীমান্ত এলাকার ভারতের প্রায় ৪০০ গজ অভ্যন্তরে বালারহাট এলাকায় পার্শ্ববর্তী বন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে একটি বাঘ লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় ভারতের স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা বাঘটিকে ধাওয়া দিলে বাঘটি পালিয়ে যায়। সীমান্তে বাঘ আসায় এই শোরগোলের খবর ভারতের ১৫৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের শ্রীমুখ ক্যাম্পের বিএসএফের টহল দলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের (তিস্তা-২) নাজিরগোমানী ক্যাম্পের টহল দল জানতে পারে। এ ঘটনায় রাতে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে সীমান্তবাসীদের সতর্ক থাকতে বলে বিজিবি।

এক সপ্তাহ আগেও ভারতের ওই গ্রামে দুটি বাঘ এসেছিল। স্থানীয় বন বিভাগের লোকজনের সহায়তায় একটি বাঘ আটক করা হয় এবং অপর বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ককোয়াবাড়ী এলাকার আবেদা বেগম (৫৫) বলেন, ‘বিজিবি মাইকে বলেছে এটা শুনেছি। বাঘ দেখিনি, তবে এতে ভয় লাগে।’

একই এলাকার ওয়াদুদ হোসেন বলেন, ‘রাতের বেলা ভারতে চিল্লাচিল্লিতে আমরা খবর পাই বাঘ নাকি বের হয়েছে, পিটাপিটি (ধাওয়া) করেছে। ওই সময় শুনি বাঘ বাংলাদেশেও ঢুকতে পাড়ে। এতে এলাকাবাসী ভয় পেয়ে সতর্ক হয়।’

এ ব্যাপারে নাজিরগোমানী বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের (সিও) মোবাইল নম্বরে কল দিলে কোনো সাড়া মেলেনি। তবে বিজিবির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ‘বাঘ তো বাংলাদেশে আসেনি। কেউ দেখেওনি। সীমান্তে এ ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঘটনাটি তিলকে তাল বানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে, রাখা হবে হিমঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১১
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। সেখানে হিমঘরে মরদেহটি রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে হাদির মরদেহ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি-৫৮৫ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এ সময় হাদির মরদেহ নিতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ অন্যরা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত