Ajker Patrika

ছিন্নমূল থেকে ভদ্রলোক— সুধা সদনের মালামাল নিল সবাই

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১: ০১
শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগের পর লুটপাট করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগের পর লুটপাট করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভারতে আশ্রিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার উদ্দেশে ফেসবুকে বক্তব্য দেওয়ার জেরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাদ যায়নি হাসিনার বাসভবন সুধা সদনও। সেখানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। এ সময় ছিন্নমূল থেকে মধ্যবিত্ত—সবাই কিছু না কিছু নিয়ে গেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডে সুধা সদনের সার্বিক পরিস্থিতি ঘুরে দেখেছেন আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক তানিম আহমেদ।

সরেজমিন দেখা যায়, বেলা ১টার দিকে ভবনের ফটকের সামনে পড়ে আছে বুকশেলফ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আসবাব, কাঠের টুকরা। যার মধ্যে কয়েকটি আগুনে পোড়া। একই সময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের উৎসুক জনতার ভিড় ছিল অনেক। তবে সুধা সদনের সামনে তেমনটি দেখা যায়নি। হাতে গোনা কয়েকজন উৎসুক জনতা। আর ভেতরে ছিল লুটপাটকারী। যাদের আপাদমস্তক শ্রী দেখলেই মনে হয় তাঁরা ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

ওই সময় দুই নারী ভবনটির ভেতর থেকে পুড়ে যাওয়া সোফা টেনে বের করছিলেন। পরে তাঁরা সেটি অটোরিকশা করে নিয়ে যান। এক নারী জানান, তাঁর বাসা কামরাঙ্গীরচরের দিকে। পুড়ে যাওয়া সোফাটি নিজের বাসার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। পরে ঠিক করে ব্যবহার করবেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সুধা সদন পেয়েছিলেন স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার থেকে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এখানেই বাস করতেন। এরপর এটি ব্যবহার হয়েছিল আওয়ামী লীগের গবেষণা সেলের জন্য।

এর কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন আসবাব বোঝাই একটি রিকশা বের হয় ভবনটির মূল ফটক দিয়ে। সেই রিকশার গন্তব্যও কামরাঙ্গীরচরে বলে জানান চালক। মূল ফটক পার হয়ে ভবনের প্রবেশপথের পাশে পড়ে ছিল নানা আসবাব। কয়েকটি জ্বলছিল আগুনে। ভবনের নিচতলায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেখানে টর্চ জ্বালিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র জোগাড় করছিলেন ছিন্নমূলেরা। দুই, তিন ও চারতলাতেও একই অবস্থা। দুজন যুবক দোতলার বারান্দার গ্রিল হাতুড়ি দিয়ে ভাঙছিলেন। একই তলার একটি বাথরুমে গিজার ছিল। কিছুক্ষণ পরে দুজন যুবক শাবল দিয়ে তা ভেঙে নিয়ে যান।

শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগের পর লুটপাট করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগের পর লুটপাট করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুধা সদনের গেটের সামনে দেখা যায়, তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে মধ্যবয়সী এক নারীকে। তাঁদের পরনে ছিল পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক-আশাক। এক ছেলে ও এক মেয়ের হাতে ছিল তিনটি ইট। আরেক মেয়ের হাতে ছিল শেখ হাসিনার পরিবারে একাধিক ছবি। তাঁদের মা জানান, সন্তানদের ভালো লেগেছে বলেই এগুলো নিয়ে এসেছেন। ইট তিনটি ৩২ নম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় ভবনের বলে জানান ছেলে মেহেরান।

মেহেরান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশটা নেতাদের নয়, জনগণের। শেখ হাসিনা ভুল করেছেন। এই ইট তাঁর বাড়ি থেকে এনেছি। এখানে তাঁর আর কিছুই নেই। তিনি জীবনেও দেশে আসতে পারবেন না।’

শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগের পর লুটপাট করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগের পর লুটপাট করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

৩২ নম্বর ও সুধা সদনের ভাঙচুরের মাধ্যমে ৫ আগস্ট পূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেন মেহেরানের মা। তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের কোনো চিহ্ন দেশে রাখা উচিত নয়। কারণ, এটি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও যাতে ফ্যাসিবাদে না আসে, সেটার জন্য এটা শিক্ষা।’

সুধা সদন ভাঙচুরের প্রতিবাদও জানিয়েছেন মধ্যবয়স্ক এক নারী। যার হাতে ছিল ওয়াজেদ মিয়ার ছবি। তিনি বলেন, ‘এটা (সুধা সদন) জনগণের সম্পদ, সরকার তা রেখে দিতে পারত। জিনিসপত্রগুলো সবার সম্পদ।’

শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগের পর লুটপাট করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগের পর লুটপাট করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ সময় একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা ব্যক্তি মালিকানার সম্পদ।’ জবাবে ওই নারী বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানার সম্পদ হলে কেউ না কেউ রক্ষা করতে আসত। কিন্তু আসেনি।’ তখন ওই লোক বলেন, ‘তাঁরা খুনি, হাজার লোককে হত্যা করছে।’ জবাবে ওই নারী বলেন, ‘ছাত্ররা আন্দোলন করলেও কোনো ছাত্র লুট করতে আসেনি, লুট করতে এসেছে বস্তির লোকেরা।’

এ সময় ওই নারীর সমর্থনে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী কায়দায় ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করা যায় না।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পরে মধ্যবয়স্ক ওই নারী ধানমন্ডি লেকের পার ধরে চলে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত