লেবুর গ্রামেও লেবুর দাম চড়া

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ১৫: ১৯
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, ১৫: ৪৮

বছরজুড়েই লেবুর চাহিদা থাকে। রমজান মাসে সেই চাহিদা আরও বেড়ে যায়। কারণ ইফতারে লেবুর শরবতের বিশেষ কদর রয়েছে। এই চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা লেবুর দাম ব্যাপক বাড়িয়েছে। এখন কলম্বো জাতের বড় লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এলাচি ও কাগজি জাতের লেবুর দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার লেবু গ্রাম বলে খ্যাত বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটায় রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬০টি লেবুবাগান। এখানকার সহস্রাধিক মানুষ লেবু উৎপাদন ও বিপণনকাজে জড়িত। এখানকার চাষিরা সাধারণভাবে কলম্বো, এলাচি ও কাগজি জাতের লেবু চাষ করেন। তবে এলাচি জাতের লেবু স্বাদে ভালো হলেও ফলন কম হওয়ায় চাষিরা কলম্বো জাতের লেবুর চাষ বেশি করছেন। এসব লেবু ঢাকার পাইকারদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এ দুই গ্রামের লেবুর কদরও রয়েছে দেশজুড়ে।

বিভিন্ন লেবুর বাগান ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর লেবুগাছের ফুল ও কুঁড়ি ঝরে পড়ছে। লেবু পাকার সময় বৃষ্টি না হওয়ায় আকারে ছোট হয়েছে। চাষিরা অভিযোগ করছেন, কৃষি বিভাগ থেকে লেবুচাষিদের কোনো সহায়তা দেওয়া হয় না। কিন্তু ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

লেবুর পাইকারি ব্যবসায়ী মো. শরীফ হোসেন বলেন, ‘২ লাখ টাকায় একটি বাগান কিনেছিলাম। যখন লেবুগাছে ফুল আসে, তখন আমরা বাগান কিনি। কিন্তু অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেকের কম ফলন হয়েছে এবার। গাছের ফুল ঝরে গেছে, লেবুর আকারও বড় হয়নি। অর্ধেক টাকাও তুলতে পারব না।’

বালিয়াখোড়া গ্রামের লেবু চাষি মো. শামীম মিয়া বলেন, লেবুর চাহিদা বাড়ছে। ফলন কম হওয়ায় বাজার কিছুটা চড়া। তবে রমজানের শুরুর দিকের চেয়ে বর্তমানে দাম কিছুটা কমেছে। ৫০ টাকার লেবু দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।

ঘিওরে বাগান থেকে লেবু সংগ্রহ করছেন চাষিরা।ব্যবসায়ী পান্নু মিয়া বলেন, ‘বেশি দামে লেবু কেনায় বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এক ঢোপে (বড় বস্তা) আনুমানিক ৪ হাজার লেবু থাকে। প্রতিটি লেবু ১০ টাকায় কিনেছি। লেবু সংগ্রহ, পরিষ্কার করা, শ্রমিক খরচ, ছোট ও নষ্ট লেবু বাদ দিয়ে ৫০ টাকা হালি পড়েছে। বাছাই করা ভালো ও বড় আকারের লেবু নিয়ে গিয়ে কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ী, কামারপাড়া আড়তে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি।’

বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা গ্রামে ছোট-বড় মিলে কমপক্ষে ৬০টি লেবুবাগান আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ লেবু চাষের আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বিগত কয়েক বছরে লোকসান হওয়ায় চাষিরা লেবু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অনাবৃষ্টির ফলে ফলন কম হওয়ায় দাম এত বেশি।

ঘিওরে বাগান থেকে লেবু সংগ্রহ করছেন চাষিরা।লেবুচাষি মো. বিলু মিয়া বলেন, ‘৮০ শতাংশ জমিতে লেবুর চাষ করেছি, অন্যান্য বছরের তুলনায় চার ভাগের একভাগ ফলনও হয়নি। অনাবৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে কচি লেবু ঝরে পড়ছে। লেবু পরিপক্ব হওয়ার আগেই হলুদ বর্ণ ধারণ করছে। চাহিদা অনেক, তাই দামও বেশি।’

বানিয়াজুরীর আব্দুল কাদের টিপু নামের এক ক্রেতা এই গাঁয়ে এসেছেন লেবু কিনতে। লেবুর দাম বেশি হওয়ায় তিনি বলেন, ‘লেবুর গ্রামেও লেবুর দাম বেশি। ৬০ টাকা দরে ১০ হালি লেবু কিনেছি।’

ঘিওরে বাগান থেকে লেবু সংগ্রহ করছেন চাষিরা।ঘিওর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ শামীম বলেন, ‘বালিয়াখোড়া গ্রামে আমার দুটি লেবুবাগান রয়েছে। সুগন্ধি, সুস্বাদু ও প্রচুর রসযুক্ত হওয়ায় এই গ্রামের লেবুর কদর বেশি। এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক লেবু চাষের আয় দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু চলতি বছর লেবুর উৎপাদন কমে যাওয়ার বিপরীতে চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই দামও বেড়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজেদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘিওরের বালিয়াখোড়া ও সোদঘাটা গ্রামের চাষিরা লেবু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এই অঞ্চলের লেবুর কদর রয়েছে সারা দেশে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত