Ajker Patrika

ঘর থেকে চিকিৎসকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, অভিযোগের তির স্ত্রীর দিকে

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১৫: ৫০
ঘর থেকে চিকিৎসকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, অভিযোগের তির স্ত্রীর দিকে

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে ভাড়াবাড়ির ঘর থেকে এক চিকিৎসকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ভেতর থেকে আটকানো ওই ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় তাঁর মরদেহ ঝুলে ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পরিবারের দাবি, স্ত্রী সম্পদ লিখে নিয়ে ওই চিকিৎসককে হত্যা করেছেন। পুলিশ বলছ, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে হোসেনপুর পৌর শহরের ঢেকিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম আরিফুল ইসলাম (৩০)। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার সদর ইউনিয়ন বাজারের রফিকুল ইসলামের ছেলে। নর্দান মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন তিনি।

আরিফুলের স্ত্রীর নাম শাহীন সুলতানা মিরা (২৯)। তিনি নিজেও একজন চিকিৎসক। খাইরুন্নেছা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। মিরা পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরকাওনা গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, আরিফুল ইসলাম এমবিবিএস পাস করে রাঙ্গামাটিতে চিকিৎসক হিসেবে চাকরি করতেন। ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে মিরার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। পরে দুজনেই রাঙ্গামাটিতে চিকিৎসক হিসেবে চাকরি করেছেন। ছয় মাস আগে তারা দুজনেই চাকরি ছেড়ে হোসেনপুর বাজারে মডার্ন জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা দুজন হোসেনপুর বাজারের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। সেখানে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়াবিবাদ হতো। গতকাল শনিবার রাতেও তাঁদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত আরিফুলের বাবা রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলে রাঙ্গামাটিতে চাকরি করে টাকা-পয়সা জমিয়ে হোসেনপুরে এসে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে। আমার ছেলের বউ মিরা এই হাসপাতাল তার নামে করিয়ে নিয়েছে। আরিফুলের সব সম্পত্তি মিরা তার নামে করিয়ে নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বড় ছেলের স্ত্রী রুপা আক্তারের কাছে মিরা কিছুদিন আগে বলেছিল, এখন আরিফ নড়তে পারবে না। সব আমার হাতে নিয়ে নিছি। আর যাবে কোথায়!’

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাইয়ের ১ তারিখ সম্পত্তি নিয়ে মীমাংসার কথা ছিল। কিন্তু মিরা আর বসেনি। এখন আমার ছেলের লাশ পেলাম। আমার ছেলের সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে তাঁর স্ত্রী মিরা হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

আরিফুলের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম রাজিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মিরার প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো। আর ঝগড়া হলেই মিরার বড় ভাই ফোন করে তা জানাত। আজ আর কোনো কিছু জানায়নি। হঠাৎ করে রাত পৌনে ২টার দিকে থানা থেকে ফোনে জানানো হয়, আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে।’ 

রাজিব আরও বলেন, ‘আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে মীরা ও তার ভাইয়েরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে স্ত্রী শাহীন সুলতানা মিরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শনিবার সকালে আমার স্বামীর বাবা তাঁকে ফোন দিয়েছিল। তারপর থেকেই আমার স্বামীর মুড অফ ছিল এবং খারাপ ব্যবহার করছিল। বিকেল ৩টার দিকে আমাকে তুই-তোকারি করে কোর্টে নিয়ে যায় সেপারেশনের জন্য। একপর্যায়ে আমাকে জোরে একটি থাপ্পড় দেয় আরিফ। থাপ্পড়ের চোটে আমার চশমাটি ভেঙে পড়ে যায়। কোর্ট বন্ধ থাকায় আমাকে নিয়ে চলে আসে।’

মিরা আরও বলেন, ‘আমার চোখে সমস্যার জন্য রাতে আমি ঘরে শুয়ে ছিলাম। পরে আরিফ বাসায় এলে ঘরের দরজা খুলে দিই। ঘরের লাইট অফ ছিল। এর মধ্যে আমি নামাজ আদায় করি। পরে লাইট অন করতেই আরিফ রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। অনেক ডাকাডাকি করলেও আরিফ দরজা খোলেনি। পরে বাসার মালিককে খবর দিই। বাসার মালিক এসে আরিফকে দরজা খুলতে বলেন। কিন্তু আরিফ দরজা খোলেনি। পরে পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেখে, আরিফ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে।’

মিরা বলেন, ‘পরে ঘরে একটা চিরকুট পাওয়া যায়, যা আমার স্বামী রেখে গেছেন। সেই চিরকুটে লেখা ছিল, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না।’

এ বিষয়ে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান টিটু আজকের পত্রিকা বলেন, ‘পুলিশ যখন লাশ উদ্ধার করে, তখন ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। আরিফুলের মরদেহ ফ্যানের সঙ্গে গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় ছিল। শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরিফুলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত