জেন্ডার বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়নে কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২২, ০০: ৪১

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। জাতীয় বাজেটেও বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেটের বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু সেই বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়নে কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। কোন মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বাল্যবিয়ে এবং সহিংসতা প্রতিরোধে কত শতাংশ বাজেট ব্যয় হচ্ছে তার সমন্বিত তথ্য সংগ্রহ দরকার। এই তথ্য পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে।

জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে সোমবার ঢাকার প্রগতি ইন্স্যুরেন্স ভবনে আয়োজিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক এক সংলাপে এসব কথা উঠে আসে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এই সংলাপের আয়োজন করে।
 
সম্প্রতি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং সিপিডি যৌথভাবে ‘বাজেট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যানালাইসিস অন চ্যালেঞ্জিং ফিয়ার অব ভায়োলেন্স’ শীর্ষক একটি বাজেট ফ্রেমওয়ার্ক বিশ্লেষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আয়োজনের শুরুতে এই প্রতিবেদনের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট নাদিয়া নওরিন। তিনি জানান, এসডিজি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতি হলেও নারীর প্রতি সহিংসতা এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন সহিংসতা প্রতিরোধে যে আইন রয়েছে তার সঠিক প্রয়োগ এবং বাজেটে সহিংসতা রোধে বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন।

বক্তারা বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে কিন্তু তা সুনির্দিষ্ট নয়। বরাদ্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। বাংলাদেশে জেন্ডার বাজেটের যে কাঠামো রয়েছে তা নারীদের প্রতি সহিংসতার ভয় প্রতিরোধে কার্যকর হচ্ছে না, তাই এই কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন।

সংসদ সদস্য আরোমা দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার জেন্ডার বাজেট নিয়ে সচেতন। বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের জন্য এই জেন্ডার বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। তবে এর বাস্তবায়নের যথাযথ কার্যকারিতা মনিটরিংয়ের জন্য বাজেট কোথায় কীভাবে খরচ হচ্ছে সে বিষয়ে সমন্বিত ডাটা প্রয়োজন। ডাটার ঘাটতির ফলে আমরা একই জায়গায় আটকে আছি।’ বিদ্যমান ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিরসনে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সহিংসতার ভয় নিরসনে সহিংসতার বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী প্রচারণার ওপর জোর দেন তিনি। 

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, ‘সহিংসতার ভয়েই মেয়েরা তাঁদের সম্ভাবনার পথে আগাতে পারছে না। ঘর থেকে শুরু করে জনসমাগমে সর্বত্র এই ভয় বিদ্যমান। আমরা সারা দেশে জরিপ চালিয়ে দেখেছি, অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৩৫ শতাংশের মতে যৌন হয়রানির ভয় বাল্যবিয়ের অন্যতম মূল কারণ। ২৫.৬ শতাংশের মতে সামাজিক বিভাজন জনিত উদ্বেগের কারণে বাবা-মা মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী অভিভাবকদের মধ্যে ৬২ শতাংশ মা জানিয়েছেন সহিংসতার ভয়ে তারা তাদের মেয়েদের স্কুল পিকনিকে অংশ নিতে দেন না, যেখানে বাবাদের মধ্যে ৫৪.১ শতাংশ প্রাইভেট টিউশনে যেতে দিতে চান না।’ 

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘ভয়ের বিষয় অনুভব করার বিষয়, প্রকাশ করার বিষয়। যার ফলে বাজেটে তার প্রতিফলনও সময়সাপেক্ষ। সারা বিশ্বেই সহিংসতা বাড়ছে, কমছে না। সহিংসতার ফলে যেই ক্ষতি হয় তা ব্যক্তিকে ছাপিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি, যা অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে। নারীর প্রতি সহিংসতা এবং সহিংসতার ভয় প্রতিরোধে আইন ও নীতিমালাগুলো নিশ্চিত এবং বাস্তবায়নে যথাযথ অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত প্রয়োজন।’

আলোচনায় আরও অংশ নেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ-এর যুগ্ম সম্পাদক সীমা মোসলেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ডা. তানিয়া হক, ব্র্যাক-এর জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি’র পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি, ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থার উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত