গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অবরোধ ৫২ ঘণ্টা শেষে প্রত্যাহার করে নিলেন টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা। আজ সোমবার বেলা ২টার দিকে শ্রম সচিব এক মাসের বেতন আগামী রোববার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

শ্রমিকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয় আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ-উত্তর) নাজির আহমেদ। তিনি জানান, আজ সোমবার বেলা ১টার দিকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ ইইচ এম সফিকুজ্জামান শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোনে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি শ্রমিকদের জানান, সরকার দায়িত্ব নিয়ে আগামী রোববারের মধ্যে ৬ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও পাওনা কীভাবে, কবে পরিশোধ করা হবে তা আলোচনার জন্য শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শ্রম সচিব। পর্যায়ক্রমে তাঁদের পাওনা পরিশোধ করে দেবে সরকার। এ সময় মহাসড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে শ্রমিকদেরকে শ্রম সচিব বলেন, ‘আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন, আমরা অপেক্ষায় আছি।’

এদিকে, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা গত শনিবার সকাল ৯টায় মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেন। এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলামুখী যাত্রীরা। পাশাপাশি ক্ষুব্ধ হন চালক, এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যে গেছেন যাত্রীরা।

টানা তিনদিন মহাসড়কে অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। তাঁদের মাইলের পর মাইল হেঁটে, বা বেশি ভাড়ায় বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। অপরদিকে, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি বন্ধ থাকায় জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক কাজও ব্যাহত হয়। টিঅ্যান্ডজেডের শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আশপাশের ১৫-২০টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা হয়।

আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় কলম্বিয়া গার্মেন্টসের সামনে ২০০ মিটার ব্যবধানে দুটি ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল আটকে দেওয়া হয়। মাঝখানে কয়েক শ শ্রমিক এবং অনেক যুবককে লাঠি হাতে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বেতন ছাড়া আর কোনো কথা বলার ব্যাপারে আপত্তি জানান।

আন্দোলনকারী এক যুবক এগিয়ে এসে বলেন, ‘আমরা কষ্ট করেছি কাজ করেছি আমাদের টাকা দিচ্ছে না। আমরা আমাদের পাওনা চাচ্ছি। আমাদের পাওনা দিয়ে দেন আমরা বাড়ি চলে যাব।’

পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকদের গত দুই মাসের বেতন বকেয়া আছে। শ্রমিকেরা দুই মাস ধরেই বেতন দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ দেব-দিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করে। গত ২৮ অক্টোবর শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করেন। ওই সময় পুলিশ জানায় ৩ নভেম্বর বেতন পরিশোধ করা হবে। কিন্তু ওই দিন শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ৫ নভেম্বর আবার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ৭ নভেম্বর বেতন দেবে বলে আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা ফিরে যান। এরপরও ওই দিন শ্রমিকেরা বেতন না পেয়ে গত শনিবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে টানা বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা।

শ্রমিকনেতা ও অভ্যুত্থানকারী ছাত্র শ্রমিক জনতার সংগঠক আরমান হোসাইন বলেন, আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের ধৈর্য ধরতে বলেছি। তাঁরা বলেছেন দুই মাস ধৈর্য ধরেছি আর না। আমাদের কথা হচ্ছে মহাসড়ক অবরোধ রাখায় যে ভোগান্তি হচ্ছে এটি দ্রুত সমাধান করা। আশুলিয়া আর গাজীপুর মিলে ৮-১০টা কারখানায় মূলত ঝামেলা দেখছি। তাঁদের পাওনাও খুব বেশি না। প্রয়োজনে ওই সব মালিকদের কিছু সম্পদ বিক্রি করে হলেও পাওনা পরিশোধ করা হোক।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের দাবি ন্যায্য। মালিকপক্ষ একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাঁরা রক্ষা করতে পারেনি। তাই শ্রমিকেরা গত দুটি রাত রাস্তায় বসে থাকে। আজ শ্রম সচিব প্রতিশ্রুতি দিলেও অবরোধ তুলে নেন তাঁরা।

এদিকে, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন স্বাধীন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা পল্লী বিদ্যুৎ দশতলা আঞ্চলিক সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

পুলিশ জানায়, গত অক্টোবর মাসের বেতন চলতি মাসের ১০ তারিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ১০ তারিখে বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। গতকাল রোববার দুপুরে পর তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেন। আজ সকাল ৮টার দিকে এসে কাজে যোগ না দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সড়ক অবরোধ করে রাখেন পোশাক শ্রমিকেরা। কর্তৃপক্ষ বলছেন ১৪ নভেম্বর এর আগে বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু শ্রমিকেরা কেউ এ কথা শুনছেন না।

শ্রমিকেরা বলেন, প্রতি মাসের ১০ তারিখে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ বেতনের সময় হলে টালবাহানা শুরু করে। তারা বেতন না দিলে আমরা কাজে যোগ দেব না।

এ বিষয়ে জানতে স্বাধীন গার্মেন্টসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাজু আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

অপরদিকে, বাইমাইলে কাশেম ল্যাম্পস কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করছেন বল জানা গেছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, বকেয়া বেতনের দাবিতে স্বাধীন গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করেছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে যানচলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।