মারধরের পর শিশু গৃহকর্মীকে নগ্ন করে বাইরে রাখেন মেরিন প্রকৌশলীর স্ত্রী, থানায় অভিযোগ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১৬: ৫১
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১৭: ২৪

কিশোরগঞ্জে গৃহকর্মীকে (১৩) নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সুমাইয়া নামের এক মেরিন প্রকৌশলীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। শারীরিক নির্যাতনের পর নগ্ন করে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগও করেছে ভুক্তভোগী ওই শিশু। 

আজ শুক্রবার ভুক্তভোগী শিশুর চাচা ওই নারীর বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শিশুটি অভিযুক্ত ওই নারীর বাড়িতে দুই বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করছে। 

ভুক্তভোগী শিশু সদর উপজেলার লতিবাবাদ ইউনিয়নের সাদুল্লারচর বড়বাগ গ্রামের বাসিন্দা ইটভাটার শ্রমিক মো. লিয়াকত আলীর মেয়ে। অভিযুক্ত সুমাইয়া জেলা শহরের আলোর মেলা এলাকার বাসিন্দা মেরিন প্রকৌশলীর রাজিবের স্ত্রী। তবে সুমাইয়া জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকায় থাকেন। 

ভুক্তভোগী শিশু বলে, ‘বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হইছে। আমাকে দুই-তিনবার ডাক দিলে আমি শুধু উ উ করছি। পরে গিয়া পর্দার পাইপ দিয়া কতক্ষণ বাইরাইছে। পরে আমি গেছি মুখ ধুইতাম। মুখ ধুইয়া আসার পর আমারে আবার মারছে। পরে আমার জামা-কাপড় খুইলা দরজার বাইরে নিয়া দাঁড় করাইয়া রাখছে।’ 

শিশুটি আরও বলে, ‘সকালে ভাত দিছে না। দুপুরে বাবুরে (সুমাইয়ার মেয়ে) কেন আপু আপু বলে ডাকি না তাই আবার মারছে। দুপুরবেলাও ভাত দিছে না। পরে না কইয়া পেটের খিদায় আমি বাসা থেকে বাইর হইয়া গেছি। দুই দিন, তিন দিন পরপর একটু কিছু হইলেই এইভাবে আমারে মারতো।’ 

ভুক্তভোগী শিশুর বাবা লিয়াকত আলী বলেন, ‘দুই বছর হলো আমার মেয়ে সুমাইয়ার বাসায় কাজ করে। আমার মেয়েকে আগে প্রায়ই চড়থাপ্পড় দিত। এবার বেশি রকম অবস্থাডা খারাপ কইরাইলছে। আমার মেয়েকে নির্যাতনের পর সুমাইয়া বলছে, ‘যদি তোমার মার কাছে কও, তাহলে শক্ত পিটনা দেম।’ 

শিশুটির চাচা বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘আমার ভাতিজিকে গতকাল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চড়থাপ্পড় দেয়। সুমাইয়া আমার ভাতিজির মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলে। এ ছাড়া দুই পায়ে রুটির বেলাইন দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে ঘরে আটকে রাখে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে আমার ভাতিজি কৌশলে সুমাইয়াদের বাসা থেকে বের হয়ে বাড়িতে চলে আসে। পরে রাতে আমার ভাতিজিকে আহত অবস্থায় কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দিই।’ 

অভিযোগের বিষয়ে সুমাইয়া বলেন, ‘ওই কিশোরী আমার বাসা থেকে সুস্থ অবস্থায় পালিয়ে গেছে। পরে কী হয়েছে তা জানি না। আমার বাসার সামনে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, তাকে যদি কাপড় খুলে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতাম; তবে তা সিসি ক্যামেরায় থাকত। আমার ব্যাগ থেকে সে টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছে। আমরাও এ বিষয়ে আইনের দ্বারস্থ হব।’ 

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক তানভীর রহমান বলেন, ‘শরীরের বাইরে আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে ধারণা করছি, মারটা থেঁতলানো। আর মেয়েটি মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছে, তাই বমি করেছে। কিছু পরীক্ষা দিয়েছি, রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত বলতে পারব।’ 

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীর চাচা। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত