Ajker Patrika

রেললাইনে পড়ে আছে কাটা আঙুল, মাথার খুলির অংশ, বরের মুকুট 

নাজমুল হাসান সাগর, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) থেকে
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৪: ০২
রেললাইনে পড়ে আছে কাটা আঙুল, মাথার খুলির অংশ, বরের মুকুট 

রেললাইনের পাত ঘেঁষে পড়ে আছে বিচ্ছিন্ন একটি আঙুল, তাঁর গোড়ায় জমাটবাধা রক্ত। লম্বা সেই আঙুলের নখে ফিকে হওয়া মেহেদির রং। নানা বয়সী উৎসুক মানুষ সেই আঙুল দেখছিলেন ভয়ার্ত চোখে, সেখানে পিনপতন নীরবতা। হঠাৎই এক তরুণী বলে উঠলেন, ‘আহারে!’

পাশে থাকা আরেক মধ্যবয়সী নারী বলে উঠলেন, ‘কী সুন্দর নখ, মেহেদিও দিয়েছিল ৷’ দ্বিতীয়জনের কথা শেষ না হতেই আরেকজন বলে উঠলেন, ‘জীবনে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় কিছু আর নাই।’

গতকাল সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে ভৈরব জংশনের জগন্নাথপুর আউটার স্টেশনে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর দিন মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল দেখতে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। রেললাইনে পড়ে থাকা মানুষের ছিন্নভিন্ন অঙ্গগুলোর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। উৎসুক কয়েকজন মানুষের স্থানীয় ভাষার কথোপকথন ছিল এগুলো। 

যেখানে আঙুল পড়ে ছিল তার কয়েক হাত দূরেই রেললাইনের স্লিপারে লেগে থাকতে দেখা গেছে মানুষের মাথার মগজ, পড়ে আছে ভাঙা খুলি। সেসবের ওপর ভনভনে করছে মাছি। উৎসুক জনতা নাক-মুখ ঢেকে সেগুলো দেখছে। কেউ কেউ আবার না দেখেই সেগুলো পা দিয়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে। এতে আবার দুই-একজন ক্ষিপ্ত হচ্ছে মাড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তির কাণ্ডজ্ঞান দেখে। আব্দুল জলিল নামে এক ব্যক্তি মাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি মানতে না পেরে অচেনা লোকের উদ্দেশ্য করে আপন মনে বলতে শুরু করলেন, ‘মানুষের চোখ ও বিবেক বলতে কিছু নেই। এই সব জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। বিবেকহীন মানুষ, কীভাবে এটা পা দিয়ে মাড়িয়ে গেল।’ 

তারও কয়েক গজ দূরে আরও একটি বিচ্ছিন্ন বৃদ্ধা আঙুল। সেটি দেখে একজন মন্তব্য করলেন, ‘মনে হয় লোকটা বয়স্ক ছিল।’ শুধু ছিন্নভিন্ন অঙ্গই নয়, পড়ে থাকা বিয়ের মুকুট, কনের বেনারসির লাল টুকটুকে ওড়না, টিটির মাথার টুপি আর এখানে সেখানে পড়ে থাকা নানা ধরনের জুতাও বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছে উৎসুক জনতা। বেলা যত বাড়ছে ঘটনাস্থল ঘিরে উৎসুক জনতার ভীড় তত বাড়ছে। মুখে মুখেই রটে যাচ্ছে দুর্ঘটনার ভয়াবহতার কথা। 

ঘটনার পরই গতকাল সবার আগে উদ্ধার কাজে এসে যোগ দেয় ভৈরব নদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটাররা। নয় সদস্যের এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন স্টেশনের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) নুরুল কবির সরকার। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয় আজকের পত্রিকার। শুরুর দিকের উদ্ধার কাজে থেকে নিজ হাতে ১৪টি মরদেহ ও অন্তত ১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন এই কর্মকর্তা ৷ 

নুরুল কবির বলেন, ‘এসবে আমরা অভ্যস্ত, তবে ক্ষতিগ্রস্ত বগির ভেতরে ঢুকে প্রথম দেখায় আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। মানুষের মৃত্যু কত নির্মম ভাবে হতে পারে সেটা এখানে না দেখলে কেউ কল্পনাই করতে পারবেন না।’ তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত একটি বগির মাঝে গিয়ে দেখি একজন মহিলা দুটি ছোট বাচ্চা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে আছে। বাচ্চারাও ওই মহিলাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মহিলার মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছিল তখনো। বাচ্চা দুটোর একজনের পা ভেঙে নড়বড়ে আর একজনের পিঠে আঘাত। অনেক রক্ত বের হচ্ছিল। যতটুকু বুঝেছি যে বাচ্চাটার পিঠে আঘাতে তার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে দেখলাম তিনজনই স্পট ডেথ! জীবন কত ঠুনকো, তাই না?’ 

রক্তে ভেসে গেছে বগির মেঝে। কার রক্ত কার সঙ্গে মিছে গেছে কেউ বলতে পারে না। বলার উপায়ও নেই। এসব বলতে বলতে এই কর্মকর্তার চোখ দুটো বড় হয়ে যাচ্ছিল। সেই চোখে প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছিল মর্মান্তিকতা ও বীভৎসতার! এবার তিনি বললেন, আমি যাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছি তাদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের গরিব মানুষ৷ তাদের পোশাক আসাকেই সেটা বোঝা যায়। যেভাবে তাদের শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা চোখে দেখা গেলেও মুখে বর্ণনা করা কঠিন। আমি শুধু ভাবি এই মানুষগুলো চিকিৎসা করে সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবে তো? এই ধরনের আহতদের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হয় ৷ সেটা তারা জোগাড় করতে পারবে তো! অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন আবার কেউ চিকিৎসা করে বাঁচলেও সারাটা জীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে কাটাতে হবে।’ 

এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু ও ৮০ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। একজন বাদে মৃত সবাইকে শনাক্ত করে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৷ আহতদের মধ্যে অন্তত বিশজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ভৈরব, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৭ ঘণ্টা পর ঝালকাঠির অবরোধ প্রত্যাহার, যান চলাচল স্বাভাবিক

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি অংশে অবরোধ সাত ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি অংশে অবরোধ সাত ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁর নিজ জেলা ঝালকাঠিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। সাত ঘণ্টা পর পুলিশের অনুরোধে আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আজ জুমার নামাজ শেষে বেলা আড়াইটার দিকে বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি কলেজ মোড় এলাকায় অবরোধ শুরু করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের উভয় পাশে বিপুলসংখ্যক যানবাহন আটকে পড়ে। ফলে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, জরুরি ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচামাল বহনকারী যান চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়।

অবরোধ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন এনসিপির ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম মান্না, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক আল তৌফিক লিখন, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন ফেরদৌস ইফতি, সদস্যসচিব রাইয়ান বিন কামাল, গণঅধিকার পরিষদ ঝালকাঠি জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঝালকাঠি-২ আসনের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম সাগরসহ অন্য নেতারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঝালকাঠি জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন ফেরদৌস ইফতি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোদ্ধাকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। হামলাকারীদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ঝালকাঠি সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বেলায়েত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেলা আড়াইটায় অবরোধ শুরু হওয়ায় বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করা হলে তাঁরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারে সম্মত হন। পরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

দিনাজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৪
সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সেতাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আসলাম হোসেনের বোচাগঞ্জের বাড়িতে আগুন দিয়েছেন একদল লোক। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সেতাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আসলাম হোসেনের বোচাগঞ্জের বাড়িতে আগুন দিয়েছেন একদল লোক। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সেতাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আসলাম হোসেনের বোচাগঞ্জের বাড়িতে আগুন দিয়েছে একদল লোক। আজ শুক্রবার রাতে দুজনের বাড়িতে আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে বোচাগঞ্জ থানা-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় জনতা ও বোচাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সেতাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আসলাম হোসেনের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তবে কারা আগুন দিয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

বোচাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সাব-অফিসার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রাত সোয়া ৮টার দিকে সাবেক মেয়র আসলামের বাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা সেখানে পৌঁছাই। বর্তমানে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছে।’

এ ছাড়া খালিদ মাহমুদের বাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৮
দিপু চন্দ্র দাস। ছবি: সংগৃহীত
দিপু চন্দ্র দাস। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস (২৮) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা ও মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আজ শুক্রবার নিহত দিপুর ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে নিহত হন দিপু চন্দ্র দাস। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ডুবালিয়াপাড়া এলাকার পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত দিপু চন্দ্র দাস জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি ওই কোম্পানির শ্রমিক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলায় র‍্যাকের নিন্দা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলায় র‍্যাকের নিন্দা

কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে যে হামলা চালিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র‍্যাক)।

অন্যদিকে, দুই গণমাধ্যমে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে নাজেহাল ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউ এজের সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক নূরুল কবীর। এ ঘটনারও তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে র‍্যাক। অবিলম্বে এসব ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে র‍্যাক।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে সভাপতি আলাউদ্দিন আরিফ ও সাধারণ সম্পাদক তাবারুল হক বলেন, সংবাদমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। গণমাধ্যমের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হামলা কিংবা হেনস্তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার এবং আইনের শাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

১৮ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টার দিকে উচ্ছৃঙ্খল কতিপয় ব্যক্তি প্রথমে দৈনিক প্রথম আলো, তারপর দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সময় পত্রিকা দুটির অনেক সাংবাদিক ভবনের ভেতরে আটকা পড়েছিলেন। খবর পেয়ে সেনা, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারীদের সরিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ভবনের ভেতরে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

পত্রিকা দুটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাতে আকস্মিক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর কর্মীদের সবাইকে দ্রুত অফিস ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে শুক্রবার ছাপা পত্রিকা বের করা সম্ভব হয়নি।

র‍্যাক নেতারা বলেন, মনে হচ্ছে একটি গোষ্ঠী অত্যন্ত সচেতনভাবে প্রতিপক্ষ বানাতে গণমাধ্যমকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী বর্তমান সরকারের সময় এমন ঘটনা ন্যক্কারজনক। ডিআরইউ মনে করে, ওসমান হাদি একজন দেশপ্রেমিক জুলাই যোদ্ধা ছিলেন। শহীদ ওসমান হাদিসহ ছাত্র-জনতার ত্যাগের কারণে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

হাদির মৃত্যুকে পুঁজি করে যারা গণমাধ্যমের ওপর হামলা করেছে, তারা হাদির অনুসারী নয়, এটা স্পষ্ট। কতিপয় মহল হাদির মৃত্যুকে ব্যবহার করে নিজেদের কদর্য চেহারা প্রকাশ করেছে। অবিলম্বে এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃস্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত