Ajker Patrika

র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু: পরিবারের দাবি নির্যাতন

কিশোরগঞ্জ ও নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ মে ২০২৪, ২০: ৩৬
র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু: পরিবারের দাবি নির্যাতন

ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার সামনে থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে সুরাইয়া খাতুন নামে এক নারী আসামিকে আটক করে র‍্যাব। পরে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র‍্যাব-১৪ কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে ওই নারীর মৃত্যু হয়। নিহতের পরিবারের দাবি, র‍্যাবের নির্যাতনে সুরাইয়ার মৃত্যু হয়েছে। 

গতকাল সকাল ৭টার দিকে সুরাইয়া খাতুনকে র‍্যাব সদস্যরা মৃত অবস্থায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ। এই ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহানের উপস্থিতিতে হাসপাতালে পড়ে থাকা মরদেহের সুরতাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সুরাইয়া খাতুন (৫২) নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি তাঁর পুত্রবধূ রেখা আক্তার (২০) হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে ওই নারীকে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার সামনে থেকে এবং তাঁর ছেলে তাইজুল ইসলাম লিমনকে (২৩) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আটকের পর গভীর রাতে ভৈরব র‍্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসে। আটককৃত দুজন ছাড়াও সুরাইয়ার স্বামী ও লিমনের বাবা মো. আজিজুল ইসলাম (৬০) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গৃহবধূ রেখা আক্তার হত্যা মামলার আসামি। আসামিরা সম্পর্কে নিহত রেখার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। 

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, দেড় বছর আগে নান্দাইল উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরভেলামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের সঙ্গে তাইজুল ইসলাম লিমনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে লিমন দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ সৃষ্টি করেন। এরপর অটোরিকশা কিনতে রেখার পরিবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলেও তিনি অটোরিকশা কেনেনি বলে রেখার পরিবারের অভিযোগ। পরে আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে, টাকা দিতে অস্বীকার করে রেখার পরিবার। এরই মধ্য রেখা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। 

গত ২৬ এপ্রিল রাতে রেখাকে যৌতুকের টাকার জন্য তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি নির্যাতন করে আহত করেন। তারপর রাতেই তাঁকে আহত অবস্থায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডা. মৃত ঘোষণা করে। এ সময় রেখার স্বামী ও শাশুড়ি হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে গেলেও শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালের কর্মচারীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়। ওই দিন রেখার শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রচার করে রেখা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। কিন্তু ওই সময় চিকিৎসক জানান, রেখার গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। 

খবর পেয়ে রেখার পরিবারের লোকজন লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ময়নাতদন্তের পর দাফন করে। তারপর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা করেন। এরপর ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে (স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি) অভিযুক্ত করে একটি আবেদন করেন। আদালতের বিচারক আবেদন আমলে নিয়ে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলা এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয় (মামলা নম্বর ১৫)।  মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে নান্দাইল থানার এসআই নাজমুল হাসান। 

নিহত গৃহবধূ রেখা আক্তারের মা রমিছা বেগম বলেন, ‘পাঁচ মাস পূর্বে মেয়ের জামাই তাইজুল ইসলাম অটোরিকশা কেনার জন্য যৌতুক দাবি করছিল। দিতে পারি নাই। তাই রেখাকে নির্যাতন করে হত্যা করে। হাসপাতালে আমার মেয়ের মরদেহ রেখে পালিয়ে গেছে। মেয়েটি আমার অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার পরেও হত্যা করেছে।’ 

সুরাইয়ার স্বামী আজিজুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় নান্দাইল মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান স্ত্রী সুরাইয়া এবং তাঁকে খবর দিয়ে থানায় আনেন। থানার আনার পরে সাদা কাগজে দুজনের স্বাক্ষর রেখে ১০ মিনিটে ঘুরিয়ে তাঁদের চলে যেতে বলেন। পরে তাঁরা থানা থেকে গেটে বের হলে চার সদস্যের র‍্যাবের টিম দুজনের পথরোধ করে। এ সময় স্ত্রী সুরাইয়া খাতুনকে র‍্যাব ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং তাঁকে ছেড় দেয়। আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী সুস্থ ছিলেন। র‍্যাবের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে নান্দাইল মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসানকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। 

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে আজ শনিবার বেলা ২টার দিকে সুরাইয়া খাতুনকে চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থান দাফন করা হয়। 

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টার দিকে র‍্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুন নামে এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বিনিত দাস মৃত ঘোষণা করেন। মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।’ 

জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে র‍্যাব হেফাজতে থাকা নারী আসামি সুরাইয়া বেগমের মরদেহের সুরতাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’ 

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এখন কিছু বলা যাবে না। রিপোর্ট এলে সবকিছু জানতে পারবেন।’ 

র‍্যাব-১৪ সিপিসি-২ ভৈরব ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট ফাহিম বলেন, ‘সকাল ৬টার দিকে বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে বলে বিষয়টি আমাদের মহিলা সেন্ট্রিকে জানায় সুরাইয়া খাতুন। পরে আমরা ১৫ মিনিটের মধ্যে সুরাইয়া খাতুনকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন এম এ জি ওসমানীসহ ৮ জন

কনের বাড়িতে প্রবেশের আগমুহূর্তে হৃদ্‌রোগে বরের মৃত্যু

বগুড়ায় মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ছাদ থেকে পড়ে নার্সিং শিক্ষার্থীর মৃত্যু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত