মানিকগঞ্জে তিন আসনে তিন জাহিদের পাল্লা ভারী

আব্দুর রাজ্জাক (ঘিওর) মানিকগঞ্জ 
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭: ৩৭
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮: ৩৮

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মানিকগঞ্জ জেলায় তিনটি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ২০ জন প্রার্থী। নির্বাচনী নানা বিষয় ছাপিয়ে একটি বিষয়ের মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনটি আসনের ভোটাররা। তা হলো—প্রতিটি আসনেই রয়েছেন একজন করে জাহিদ নামের প্রার্থী। তাঁরা ভোটের মাঠে রয়েছেন আলোচনার শীর্ষে। এই তিন জাহিদই এবার নির্বাচনে চমক দেখাতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয় ভোটারদের। 

এঁরা হলেন মানিকগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ (প্রতীক ঈগল), মানিকগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু (প্রতীক ট্রাক) এবং মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক (নৌকা প্রতীক)। 

মানিকগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে দুটি আসনে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী আর মানিকগঞ্জ-১ আসনে নৌকার পরিবর্তে রয়েছেন শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী। রয়েছেন গণফোরাম, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, গণফ্রন্ট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী। বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। 

আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের কাছে টানতে দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, করছেন বিগত সময়ের উন্নয়নের স্মৃতিচারণ। প্রার্থীদের অবস্থান-সামর্থ্য-জনপ্রিয়তার সঙ্গে অতীত-বর্তমান নানা ঘটনা-ইঙ্গিত নিয়ে ভোটাররাও কষছেন নানা হিসেব। 

মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা) আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই মাঠে নৌকার প্রার্থী নেই। এই আসনে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও গণফ্রন্টসহ মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক রুবেলের প্রতিপক্ষ তিনি। 

নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস সালাম মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদের নির্বাচন করছেন। বিশেষ করে সাবেক দুই সংসদ সদস্য এ. এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় এবং আনোয়ারুল হক তাঁকে সমর্থন দেওয়ার পর শিবালয়, ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার বেশির ভাগ নেতা-কর্মী জাহিদের পক্ষে ভোট চাইছেন। প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। 

জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক রুবেল এই আসনের বাসিন্দা নন। এমনকি আগে তাঁর কোনো পদচারণও ছিল না এই অঞ্চলে। এ কারণে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী ও হাতে গোনা দু-একজন আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়া তাঁর পাশে কেউ নেই। মাঠেও তাঁর নেই তেমন প্রচার-প্রচারণা। জহিরুল হক রুবেল তাঁর জন্মস্থান মানিকগঞ্জ-৩ (সদর) আসনেও প্রার্থী হয়েছেন। 

ভোটাররা জানান, মানিকগঞ্জ-১ আসনে মোট ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী একমাত্র জাহিদ। তাই তাঁর সঙ্গেই লড়াই হবে জাতীয় পার্টির। এ ক্ষেত্রে জাহিদই সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। 

ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জে পড়ার কথা স্বীকারও করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল হক রুবেল। তিনি জানান, আসনটি আমার জন্য নতুন হওয়ায় সেখানে কাজ না করায় কিছুটা কঠিন পরীক্ষায় (চ্যালেঞ্জ) পড়তে হবে। তবে যত কঠিনই হোক না কেন তা থেকে উত্তরণ হতে পারব। কারণ মাঠে দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণ আছেন। প্রশাসনও এবার নিরপেক্ষ থাকবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা আশাবাদী। 

মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর, হরিরামপুর ও সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন) আসনে মোট প্রার্থী ১০ জন। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। তাঁর সঙ্গে স্বতন্ত্র হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট চার নেতা। এঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু, তাঁরই আপন চাচাতো ভাই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, সিংগাইর উপজেলা পরিষদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্চাসেবক লীগ নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চল। এর মধ্যে কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলু আলোচনায় এগিয়ে। জাহিদ আহমেদ টুলুর সঙ্গে বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী থাকায় প্রচারণায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। স্থানীয়রা মনে করেন, নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা মমতাজ বেগম (নৌকা) এবং জাহিদ আহমেদ টুলুর (ট্টাক) সঙ্গেই হবে। 

মমতাজ বেগম জানান, দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনের মাঠ সরগরম। ভোটার উপস্থিতিও বাড়বে। এটাই চেয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ ক্ষেত্রে নৌকার কোনো সমস্যা হবে না। দিন শেষে মানুষ নৌকাকেই বিজয়ী করবেন। 

মানিকগঞ্জ-৩ আসনে (সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা) নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই আসনে জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থীসহ মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তবে মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ মালেক। 

মানিকগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের তিনটি আসনে মোট ২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। জেলায় মোট ভোটার ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩২ জন পুরুষ এবং ৬ লাখ ২৯ হাজার ৯৫১ জন মহিলা ভোটার রয়েছে। হিজড়া ভোটার আছেন ৬ জন। তিনটি আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ৫১৬টি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত