গাজীপুরে কারখানায় আগুন ও শ্রমিকের মৃত্যু: মামলায় আসামি ৮০০, গ্রেপ্তার ৯

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ২২: ৫০
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০০: ১০

বেতন বৃদ্ধির দাবি শ্রমিকদের বিক্ষোভকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে কারখানা নিরাপত্তাকর্মী গোলজার হোসেন বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানায় মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮শ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিহত পোশাকশ্রমিকের নাম এমরান হোসেন (৩২)। তিনি কুমিল্লা জেলার কসবা থানার টুমবাড়িয়া গ্রামের জহুরুল হকের ছেলে। তিনি স্থানীয় এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ওই কারখানায় কাজ করতেন। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, গাজীপুরের আমবাগ পূর্বপাড়া এলাকার ভাড়াটে মো. শের আলী (১৯), কোনাবাড়ী এলাকার মো. রিফাত (১৯), আমবাগ এলাকার খোবায়েত (২০), কোনাবাড়ী কুদ্দুসনগর পুকুরপাড়া এলাকার মো. নূর হোসেন (১৮), আমবাগ এলাকার শান্ত তালুকদার (২১), বাইমাইল এলাকার মো. ইয়াসিন (১৯), কোনাবাড়ী এলাকার মহিদুল ইসলাম (২০), হরিনাচালা সেলিমনগর এলাকার মো. তোফায়েল (২২), আমবাগ পূর্বপাড়া এলাকার রহিম বাদশা (২২)। 

গ্রেপ্তার আসামিদের আজ বুধবার বিকেলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

আজ রাতে এসব তথ্য জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আশরাফ হোসেন। 

গত সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কোনাবাড়ীর এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি কারখানায় প্রথমে ভাঙচুর ও পরে আগুন দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ডাম্পিং করার সময় কারখানার ভেতর থেকে দগ্ধ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে স্বজনেরা শ্রমিকের পরিচয় শনাক্ত করেন। 

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানায়, কোনাবাড়ী এলাকার অনন্ত কোম্পানিজের এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় গত সোমবার শ্রমিক আন্দোলন চলাকালীন নিরাপত্তার কারণে দুপুরের পর কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কোনাবাড়ী ও আশপাশের অন্যান্য কারখানার শ্রমিকেরা ওই দিন বিকেলে কারখানায় ভাঙচুর করার চেষ্টা করেন। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারী ওই ৯ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৭০০ থেকে ৮০০ জন শ্রমিক নামধারী বহিরাগত দুষ্কৃতকারী লোহার পাইপ, রড, কাঠের বাটাম, বাঁশের লাঠি, হাতুড়ি, শাবলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। একপর্যায়ে কারখানার প্রধান ফটক ও সীমানা দেয়াল, পেছনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এ সময় নিরাপত্তাকর্মী ও অন্য কর্মচারীরা সম্পদ রক্ষা করার জন্য হামলাকারীদের বাধা দিলে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা কারখানার নিচতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লোরের অফিস কক্ষ, বিভিন্ন মেশিনারিজ, গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ, ফ্যাব্রিকস, তৈরি পোশাক, ফেয়ার প্রাইস শপ, জেনারেটর, কমপ্রেসর, এসি ভাঙচুরসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন। একপর্যায়ে তাঁরা পেট্রল ঢেলে কারখানার নিচতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত অফিস, ফ্লোর, ফ্যাব্রিকস গোডাউন, কাটিং এবং সুইং সেকশনে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার পর এক শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করে। 

এ বিষয়ে জিএমপির কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনার সময় আক্রান্ত কারখানা ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অনেক আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্য থেকে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত