মধুপুরে কৃষিতে দুর্নীতি: কৃষি কর্মকর্তারাই ব্যবসায়ী

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯: ৫১
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০: ২৪

সাধারণত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) বিভিন্ন ফসলের বীজ সরবরাহের জন্য আগে থেকেই নির্ধারণ করা হয় কৃষক। সে অনুযায়ী প্রকল্প নিয়ে মানসম্মত বীজ উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট চাষিদের কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হয় সব ধরনের দিকনির্দেশনা। কিন্তু টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় তা করা হয়নি। সেখানে নিজেদের পছন্দের কৃষকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিএডিসিতে বীজ সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বীজ সরবরাহের ব্যবসায় নেমেছেন কয়েকজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাও।

যে কৃষকের সঙ্গে কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে, তাঁর নাম আলমগীর হোসেন। যৌথ ব্যবসার টাকাপয়সা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বেশ কিছুদিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে পুলিশের সহায়তায় গাজীপুরের বাসন এলাকা থেকে আলমগীরকে উদ্ধার করা হয়। এর পরই কৃষি কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসার গোমর ফাঁস হয়েছে। কতিপয় কৃষক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিলে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন বলে জানা গেছে।

কয়েকজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষক আলমগীরের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন ফসলের বীজ বিএডিসি অফিসে সরবরাহ করেন বলে স্বীকার করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল।

মধুপুর থানার উপপরিদর্শক মো. ফরহাদ হোসেন জানান, কুড়াগাছা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন সম্প্রতি নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে র‍্যাবের সহযোগিতায় গাজীপুরের বাসন থানা এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

সদ্য অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) যাওয়া উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক খান বলেন, ‘অল্প কিছুদিন ধরে কুড়াগাছার কৃষক আলমগীরের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বিএডিসিতে বীজ দেওয়ার ব্যবসা করছি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকারের উৎসাহে আমি এই ব্যবসায় যুক্ত হয়েছি। হঠাৎ করেই ব্যবসায় লেনদেনের টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করেন আলমগীর। পরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে গা ঢাকা দেন তিনি।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনিয়মে জড়িত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার, আব্দুর রহিম রাজু, মাজেদুর রহমান, সদ্য এলপিআরে যাওয়া আব্দুল মালেক খানসহ বেশ কয়েকজন। মধুপুর কৃষি অফিস ঘিরে গড়ে ওঠা যৌথ কারবারিরা বিএডিসির কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স অফিসের মাধ্যমে ধান, গম, সরিষাসহ বিভিন্ন ধরনের বীজ সরবরাহ করে থাকেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক খান কৃষক আলমগীরের ব্যবসায় ৪৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

এদিকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুর রহমান, কৃষক বাবুল হোসেন, শিক্ষক চন্দন কুমারসহ কয়েকজনে মিলে আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে ৩ হাজার মণ ধান বিএডিসির কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স অফিসে সরবরাহ করেছেন। তবে এই ব্যবসায় বড় বিনিয়োগকারী হলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকার। তিনি এখনো কৃষক আলমগীরের কাছে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পান বলে দাবি করেছেন।

কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার সরকারের সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে যোগাযোগ। ইতিমধ্যে তাঁর (তাপস) সঙ্গে ৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আরও অনেকেই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’

বিএডিসির কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্সের সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘নির্ধারিত চাষি তাঁদের নির্ধারিত প্লটের উৎপাদিত ধান আমাদের অফিসে বীজ হিসেবে দিতে পারবে।’

কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্সের উপপরিচালক শহীদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আলমগীর হোসেনের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের অর্থনৈতিক যোগাযোগ নেই। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে কয়েক মাস আগে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত