এনজিওর মাসিক কিস্তি দিতে না পারায় বসতঘরে তালা ঝুলাল কর্মীরা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
Thumbnail image

গাজীপুরের শ্রীপুরে এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ঋণগ্রহীতার বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে একটি এনজিও কর্মীরা। ফলে স্ত্রী ও শিশু সন্তান নিয়ে ঘরের বাইরে অবস্থান করছেন তারা। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্নাপাড়া গ্রামের জনৈক দিনমজুর মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা ঘটিয়েছেন আম্বালা ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিওর কর্মীরা। 

ভুক্তভোগী দিনমজুর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন (৩৫) ত্রিশাল উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের দেওয়ানিয়া বাড়ি গ্রামের আবুল বাসারের ছেলে। তিনি শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জমি কিনে বিগত ২০ বছর যাবৎ বসবাস করেন। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর। 

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বছরের মে মাসে আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখা থেকে মাসিক কিস্তিতে এক লাখ টাকা ঋণ নেই। ঋণ নেওয়ার পর থেকে আমি নিয়মিত মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে আসছি। এই মাসে হঠাৎ করে আমার আম্মা গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা খরচ হয়ে যায়। যার কারণে সঠিক সময়ে মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে দেরি হয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মা অসুস্থ থাকার কারণে আমি স্ত্রী সন্তান নিয়ে ময়মনসিংহ চলে গেছিলাম। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বাড়িতে ফিরে দেখি ঘরে তালাবদ্ধ। এরপর আশপাশের লোকজনের কাছে জানতে পারি এনজিও লোকজন এসে বাসায় বড়বড় দুটি তালা ঝুলিয়ে চলে গেছে।’ 

মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের স্ত্রী শামীমা আক্তার বলেন, ‘দিনের বেলায় তালা খুলে দিতে খুবই অনুরোধ করছি। ওঁরা জানিয়েছে টাকা না দিলে ঘরের তালা খুলে দিবে না। তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে ঘরের বাইরে বসে আছি। ছোট্ট ছেলে আলবি ঘুমানোর জন্য কান্নাকাটি করছে। আশপাশের লোকজন অনেক অনুরোধ করেছে তবুও ওঁরা তালা খুলে দিচ্ছে না।’ 

ঋণের জামিনদার মমতাজ বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ঋণ উত্তোলন পর থেকে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করে আসছে। হঠাৎ করে এ মাসে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে কিস্তি পরিশোধ করতে দেরি হয়। এরপর এনজিওর লোকজন এসে বসতঘরে তালাবদ্ধ করে যায়। আমাকেও ওরা হুমকি দিচ্ছে।’ 

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এটা খুবই অমানবিক কাজ। তিনটি শিশু সন্তান নিয়ে শীতের মধ্যে বাইরে বসে আছে। কিস্তির টাকার জন্য ঘর তালাবদ্ধ করা রীতিমতো আশ্চর্য হওয়ার মতো।’ 

এ বিষয়ে আম্বালা ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মী কবির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত তিন-চার দিন আমরা কিস্তি পরিশোধের বলেছি, কিন্তু সে কিস্তি পরিশোধ করেনি। পরে তার বাড়িতে কাউকে না পেয়ে, তালাবদ্ধ করি। টাকা পরিশোধের আগে তালা খুলে দেওয়া হবে না।’ 

আম্বালা ফাউন্ডেশন শ্রীপুর শাখার শাখা ব্যবস্থাপক মো. আশিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই বিষয়টি আমার মাঠকর্মী কবির হোসেন অবগত করেছেন। তার বসতঘর তালাবদ্ধ করা হয়েছে। কিস্তির জন্য খুবই হয়রানি করছে আমাদের। বাধ্য হয়ে এটা করা হয়েছে।’ 

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। ওই এনজিওর ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লোক পাঠিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত