Ajker Patrika

মাকে হত্যার আসামি হওয়ার পর জানলেন তিনি আসলে পালিত কন্যা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ১৮ মে ২০২৪, ২৩: ৫১
মাকে হত্যার আসামি হওয়ার পর জানলেন তিনি আসলে পালিত কন্যা

মা কোহিনূর বেগমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর হত্যা মামলা করেন মামা। তাতে আসামি হন বাবা মামুন রশীদ চৌধুরী ও মেয়ে ফাইজা নুর। কিন্তু দীর্ঘ তদন্তের পর পুলিশ জানাল, মা আত্মহত্যাই করেছেন। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান ফাইজা। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খেয়েছেন অন্য কারণে। মাকে হত্যার আসামি হওয়ার পর জানতে পেরেছেন তিনি আসলে পালিত কন্যা! আপাতত কারাগার থেকে মুক্তি মিললেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ফাইজা। 

গত বছরের ১০ এপ্রিল ধানমন্ডির ৩০ নম্বর সড়কের বাসায় ঢুকে কোহিনূর বেগমকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তাঁর স্বামী কে বি এম মামুন রশীদ চৌধুরী। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

এই ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু বলে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। তবে ঘটনার তিন মাস পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার পর ওই বছরের ১৫ জুলাই কোহিনূর বেগমের বড়ভাই সালাহউদ্দীন মো. রহমতুল্লাহ ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘শ্বাসরোধে হত্যা’ উল্লেখ থাকায় সালাহউদ্দীন কোহিনূর বেগমের স্বামী রশীদ চৌধুরী ও তাঁদের মেয়ে ফাইজা নূর–ই–রশীদকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। 

তিনি মামলায় অভিযোগ করেন, কোহিনূর বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তাঁর স্বামী রশীদ ও তাঁদের মেয়ে ফাইজা আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাম্পত্য জীবনের ১৪ বছর নিঃসন্তান ছিলেন ফার্মাসিস্ট কোহিনূর বেগম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক কে বি এম মামুন রশীদ চৌধুরী। সন্তানের শূন্যতা পূরণে তাঁরা এক কন্যা নবজাতক দত্তক নেন। পরম স্নেহে সেই মেয়েকে লালন পালন করেন। দুই বছর পর কোহিনূর বেগম অন্তঃসত্ত্বা হন। তাঁর কোল জুড়ে আসে পুত্র সন্তান। দুই সন্তানকেই তাঁরা সমান স্নেহে বড় করেন। এটি ৩০ বছর আগের কথা। দুই সন্তানই এখন প্রাপ্তবয়স্ক। 

গত বছর কোহিনূর বেগমের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের পর প্রথমে এটি আত্মহত্যা মনে করে পুলিশ। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্বাসরোধে হত্যা। এতে কোহিনূর বেগমের বড়ভাইয়ের সন্দেহ হয়। এরপর তিনি একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় আসামি করা হয় কোহিনূর বেগমের স্বামী মামুন রশীদ চৌধুরী ও তাঁদের মেয়ে ফাইজা নুর রশীদ চৌধুরীকে। তাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষে পাঠানো হয় কারাগারে। 

ঘটনার নয় মাস পর পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেল, কোহিনূর বেগম খুন হননি। তিনি আত্মহত্যাই করেছেন। মাকে হত্যার আসামি হওয়ার পর ফাইজা জানতে পারেন, যাদের এতদিন মা–বাবা ভেবে এসেছেন তাঁদের সঙ্গে তাঁর কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। কোহিনূর বেগমের গর্ভজাত সন্তান নন। তিনি আসলে পালিত সন্তান! 

তদন্ত প্রতিবেদনে ফাইজাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তিন মাস কারাবাসের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান ফাইজা নূর। রশীদ এখনো কারাগারে। মাকে হত্যার মতো অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে ফাইজা বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটলে পৃথিবীর সব সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে!’ তিনি বলেন, ‘আমি এখন ট্রমার মধ্যে রয়েছি!’ 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই শাহীন মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি একটি আত্মহত্যার ঘটনা। তাই নিহতের স্বামী কে বি এম রশীদ ও তাঁদের পালিত মেয়ে ফাইজা নূর–ই–রশীদকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। 

কোহিনূর বেগম নামকরা একাধিক ওষুধ কোম্পানিতে উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর করেছিলেন। তাঁর স্বামী মামুন রশীদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ান। মেয়ে ফাইজা নূর রশীদ আইসিডিডিআর, বি–এর গবেষণা বিভাগে কাজ করেন। ফাইজা নূর ও তাঁর ভাই সাবিক নূর রশীদ ধানমন্ডির ওই বাসায় ভাড়া থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত