মামলা করতে গেলে ভুক্তভোগীকে থানায় ৫ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে 

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৪, ১৪: ০৪
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৪, ১৫: ৫১

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় একটি সাঁকোকে কেন্দ্র করে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতিপক্ষের লোকজন পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মামলা না নিয়ে উল্টো ওই নারীর স্বামী ও স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধিকে পাঁচ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখে বলেও অভিযোগ ওঠে। 

আজ সোমবার সকাল ১০টায় শরীয়তপুর জেলা সদরের এক মিডিয়া হাউসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবার এ অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।

অভিযোগ জানা গেছে, নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড ডেমেরগাঁও গ্রামের প্রবাসী জসিম মৃধার সঙ্গে একই এলাকার ফারুক মৃধা ও তাঁর লোকজনের একটি সাঁকোকে কেন্দ্র করে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ১৮ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে দুপক্ষের মধ্যে ঝগড়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। 

এ সময় ফারুক মৃধা, হৃদয় মৃধা, খালেক মৃধা, শাকিল মৃধা, দেলু ব্যাপারীসহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে প্রবাসী জসীম মৃধা, জসিম মৃধার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রুপা, মা জনি বেগম ও ছেলে সালমান মৃধা পিটিয়ে আহত করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে জসিম মৃধা অভিযোগ করে বলেন, ‘ফারুক মৃধা ও তাঁর লোকজন জোর করে আমাদের জায়গা দিয়ে যাতায়াতের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করতে চাইলে বাধা দিই। এতে তারা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। কোরবানির ঈদের পরদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমি আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ফারুক মৃধা ও তার লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। তারা আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, বৃদ্ধ মা, আমার ছেলে ও আমাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।’ 

জসিম মৃধা বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা করার জন্য আমি ও আমার স্ত্রী আহত অবস্থায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস ছৈয়ালকে সঙ্গে নিয়ে ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে নড়িয়া থানায় যাই। কিন্তু থানার ওসি আমাদের মামলা না নিয়ে উল্টো আমাদের অকথ্য ভাষায় গালি দেন। পরে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য রওনা দিই।’ 

সংবাদ সম্মেলনে জসিম মৃধা আরও বলেন, ‘ভোজেশ্বর বাজার পর্যন্ত পৌঁছালে থানা থেকে আমাকে কল দিয়ে বলা হয়, “আপনি থানায় আসেন, আপনার মামলা নেওয়া হবে।” থানা থেকে কল পেয়ে আমার স্ত্রীকে সেখানে রেখে সঙ্গে সঙ্গে আমি থানায় যাই। মামলা নেওয়ার কথা বলে কল করে থানায় নিয়ে আমাকে ও ইউপি মেম্বার আক্কাস ছৈয়ালকে পাঁচ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখে। পরে রাত ৩টার দিকে থানা থেকে ছাড়া পেয়ে আমি আমার স্ত্রীকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।’ 

জসিম মৃধা বলেন, ‘থানায় মামলা না নেওয়ায় পরে আমি কোর্টে গিয়ে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ 

সংবাদ সম্মেলনে জসিম মৃধা, তাঁর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রুপা ও মা জনি বেগম উপস্থিত ছিলেন। 

বিঝারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আক্কাস ছৈয়াল বলেন, ‘জসিম মৃধা তার আহত স্ত্রী ও আমাকে নিয়ে নড়িয়া থানায় থানায় মামলা করতে গেলে থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান মামলা না নিয়ে উল্টো জসিমকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়। এ সময় আমি জসিমকে এসপি স্যারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করার জন্য পরামর্শ দিই। পরে জসিম তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য শরীয়তপুর সদরের উদ্দেশে রওনা হয়। তখনো আমি থানায় ছিলাম। পরে জসিমকে ফোন দিয়ে থানায় এনে আমাকে ও জসিমকে পাঁচ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখে।’ 

তিনি অরও বলেন, ‘তখন ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “তোদের এত বড় সাহস, তোরা আমার বিরুদ্ধে এসপি স্যারের কাছে অভিযোগ করতে চাস।” পরে রাত ৩টার দিকে আমরা থানা থেকে ছাড়া পাই। ওসি মুস্তাফিজুর রহমান আমাদের সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।’ 

অভিযোগের বিষয়ে ফারুক মৃধা বলেন, ‘আমরা যাতায়াতের জন্য খালের ওপর একটি সাঁকো তৈরি করতে গেলে জসিম মৃধা ও তাঁর লোকজন আমাদের বাধা দেয়। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।’ 

অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। একটি সাঁকোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ মারামারি করেছে। এতে তেমন কেউ আহত হয়নি। এটা একটা সিম্পল (সাধারণ) ঘটনা। তারপরও আমি বলেছি আপনারা অভিযোগ দেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে শুনি মীমাংসা হয়ে যাবে। মামলা না নেওয়া বা আটকে রাখার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ 

এ বিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত