গ্রিন হাউজে লাল-হলুদ ক্যাপসিকাম চাষ করে সবুজের বাজিমাত 

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
Thumbnail image

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের পুমদী ইউনিয়নের নারায়ণ ডহর গ্রামের বাসিন্দা এখলাস উদ্দিন সবুজ (৩৮)। রাজধানী ঢাকার কবি নজরুল ইসলাম সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। পড়াশোনা শেষ করে হতে চেয়েছিলেন ব্যবসায়ী। শুরু করেছিলেন মাছের রেনু থেকে পোনা উৎপাদন। পরে এক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে হয়েছেন পুরোদস্তুর কৃষক। বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। 

এখলাস উদ্দিন সবুজ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় পলিনেট হাউজ প্রর্দশনী বাস্তবায়নে পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্য ফসল ক্যাপসিকাম আবাদ করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন সম্প্রতি। তবে স্থানীয়ভাবে ক্যাপসিকাম বিক্রি না করতে পেরে কিছুটা বিপাকেও পড়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা সবুজ। 

সরজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল ও হলুদ রঙের ক্যাপসিকাম। অধিক ফলনের আশায় ক্যাপসিকাম ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক এখলাস উদ্দিন সবুজ। তাঁর হাতের যত্ন আর পরিচর্যায় ক্যাপসিকামের চারাগুলো হয়ে উঠেছে হৃষ্টপুষ্ট। 

এখলাস উদ্দিন সবুজের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি আধুনিক প্রযুক্তিতে মার্চিং পেপার দিয়ে টমেটো চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিস পলিনেট হাউজ উপহার দেয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে আমি চুক্তিবদ্ধ হই যে, এই শেডে উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ করব। শুধু ক্যাপসিকাম করতে হবে তা না।’ 

সবুজ বলেন, ‘২০২৩ সালের জুন মাসে শেড করা শেষ হয় কিন্তু ঠিকাদার পানি সাপ্লাই, ফগার ইত্যাদি সেটিং না করাতে ডিসেম্বরে শেড চালু হয়। পরে ডিসেম্বর মাসে বগুড়ার এগ্রো ওয়ান কোম্পানি থেকে ২২ টাকা করে ১ হাজার ১৪০টি ক্যাপসিকাম চারা কিনে আনি। শেডের ভেতর ১০ শতাংশ জমিতে চারাগুলো রোপণ করি। চারা রোপণের দুই মাস পর থেকেই গাছে ফল আসা শুরু হয় এবং বিক্রিও শুরু করি। তবে সম্প্রতি কালবৈশাখী ঝড়ে ৪০টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ 

সবুজ আরও বলেন, ‘ক্যাপসিকাম চাষে জমি প্রস্তুত, লেবার, সার, বালাইনাশক ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্যাপসিকাম খাওয়ায় অভ্যস্ত না হওয়ায় স্থানীয় কোনো বাজারে বিক্রি হয় না বললেই চলে। বিক্রি করতে হয় ঢাকার কাওরান বাজারে। কাওরান বাজারে পণ্য পাঠালে খরচ বেশি পড়ে, তাই পাঠাতে পারি না। তবে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের সুগন্ধা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ও বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বিক্রি করছি। প্রতিকেজি ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে ৩৫০ টাকা দরে। ইতিমধ্যে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করা হয়েছে। এখনো জমিতে যে পরিমাণ ফসল আছে, তাতে অন্তত আরও দুই লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছি।’ 

গাছে থোকায় থোকায় ক্যাপসিকাম। ছবি: আজকের পত্রিকাতিনি বলেন, ‘পলিনেট হাউজে ত্রুটি আছে। যেমন, উচ্চতা কম, বিদ্যুৎ থাকে না, তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি থেকে ৭ ডিগ্রি বেড়ে যায়। পলিনেট হাউজে ফসল ফলানো যেমন নিরাপদ, অসময়ের ফসলটা তেমনি ঝুঁকির, ত্রুটি থাকলে সম্পূর্ণ ক্ষতি হবে। ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করার সময় বিদ্যুতের লাইন যখন আনি তখন আমি ভোগান্তির শিকার হই। কৃষকদের সেচ বিল আসে ৩ টাকা ৮০ পয়সা কিন্তু আমার ইউনিট প্রতি প্রায় ১৪ টাকা বিল দিতে হয়।’ 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ক্যাপসিকাম একটি বৈশ্বিক সবজি। এটাকে মিষ্টি মরিচ নামেও ডাকা হয়। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষকরা এর চাষ করে থাকেন। যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও প্রচুর। কারণ সারা বিশ্বে টমেটোর পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি এখন ক্যাপসিকাম। 

পুষ্টিমানের দিক থেকে অত্যন্ত মূল্যবান সবজি বলে পুষ্টিবিদদের অভিমত। তাঁদের মতে, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন’ সি’ রয়েছে এবং অতি সহজেই চাষ করা যায়। তাই দেশের জনসাধারণকে ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। 

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ক্যাপসিকাম উচ্চমূল্যের একটি নতুন ফসল। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো হওয়ায় এ উপজেলায় আগামীতে ক্যাপসিকামের চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত