মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা ও সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত ১০টি মৌলিক ঘাটতি রয়েছে।
কলেজটির কর্তৃপক্ষ বরাবর সাবেক সরকারের কাছে যা-ই দাবি করেছে, কার্যত তা-ই পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসবই সম্ভব হয়েছে কলেজটি কিশোরগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনীতিক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামে বলে। আওয়ামী লীগের এই নেতা দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য এবং স্পিকারও ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ নামের চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি নিয়মিত পরিদর্শন করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে তাদের প্রতিবেদনে কলেজের ঘাটতি বা ত্রুটিগুলোর খুব কমই তুলে ধরা হয়েছে। পরিণতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদামতোই আসন বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ থেকে দুই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন ২০২২ কার্যকর করে সরকার। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২০১১ সালের নীতিমালাও মেনে চলেনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হমিদ মেডিকেল কলেজ।
আসন বৃদ্ধিতে রেকর্ড
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে আসন বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কলেজটি এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১০টি আসন বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাড়ে আরও ১০টি আসন। এর পরের বছর এক ধাপে আসন বাড়ে আরও ২০টি। দেশে বর্তমানে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই এত কম সময়ে ৮০ শতাংশ আসন বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, সর্বশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আসন বাড়িয়ে ৯০টি করা হলে অধিদপ্তর থেকে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির নামে কলেজ। এখানে কোনো আপত্তি দেওয়া যাবে না।
হাসপাতালের শয্যা ও ভর্তির হারে শর্ত
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে সাত সদস্যের সরকারি পরিদর্শন কমিটি। আইন অনুযায়ী, ৫০ শিক্ষার্থীবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ও হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ভবনে ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে আকারের দিক থেকে আবদুল হামিদ কলেজের একাডেমিক ভবনে ৩৮ হাজার ও হাসপাতালে ৯১ হাজার বর্গফুট কম রয়েছে। প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ হাসপাতালের শয্যায় রোগী ভর্তির হার ৭০ শতাংশ থাকার কথা। তবে তাতে ঘাটতি রয়েছে ৪৭ শতাংশ।
প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকার কথা। তাতে শয্যাসংখ্যা হবে ৪৫০টি। পরিদর্শন কমিটি শয্যা পেয়েছে মাত্র ২৮৮টি।
কলেজ ভবনেই অন্য স্থাপনা
আইন বলছে, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অন্তত চার একর জমিতে স্বতন্ত্র ভবনে কলেজ ও হাসপাতাল হতে হবে।
গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা হাসপাতাল ভবনের ওপরের তলায় এখনো নির্মাণকাজ চলছে। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যাও আপাতদৃষ্টিতে বেশ কম দেখা যায়। সাততলাবিশিষ্ট কলেজ ভবনের নিচ থেকে তিনটি তলা পর্যন্ত চলে একাডেমিক কার্যক্রম। চার থেকে ছয়তলা পর্যন্ত ছাত্রী হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সপ্তম তলায় রয়েছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নার্সিং ইনস্টিটিউট। অথচ আইন অনুযায়ী, একাডেমিক ভবনে অন্য কার্যক্রম চালানো নিষেধ।
অনুমোদন ও নিবন্ধনের ঘাটতি
প্রতি শিক্ষাবর্ষে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন থাকার কথা থাকলেও সর্বশেষ নিবন্ধিত শিক্ষাবর্ষটি হলো ২০১৭-১৮। আসনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তির পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নিয়মমতো অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিএমডিসি প্রতি শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন না দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষে ইন্টার্নি করতে পারবেন না। তাঁরা চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধনও পাবেন না।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। শিগগিরই বিএমডিসি থেকে কলেজটি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে পঞ্চম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ফলাফলের অপেক্ষায় আছে।’
যা বলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা
অন্তত পাঁচজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেছেন, একাডেমিক উৎকর্ষের তুলনায় কলেজের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক যোগসূত্রকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তাঁদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। মন্তব্যকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মান বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সারির শেষ দিকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ল্যাব উন্নত করা ও শিক্ষক ঘাটতির সমাধানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একাডেমিক মানোন্নয়নে চেষ্টা করেনি। প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ঘাটতি রয়েছে। এসব দিকে মনোযোগ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতিবছর আসন বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নওশাদ খান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক। কলেজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও এলাকাবাসী মনে করেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নামে কলেজটির নাম রাখা হয়।
কলেজের একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে অনুমোদন নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যদি বিএমডিসির অনুমোদন না পায়, তাহলে তারা ইন্টার্নশিপ করতে পারবে না।’
চিকিৎসা শিক্ষা নিয়েই উদ্বেগ
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত দুই দশকে চিকিৎসা শিক্ষার মানকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মেডিকেল কলেজের সংখ্যা নির্বিচারে বেড়েছে। সার্বিকভাবে বেসরকারি মেডিকেলগুলোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নিম্নমুখী। যথাযথ শিক্ষাদানের জন্য যা প্রয়োজন, সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। এতে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি পাবেন না। তাহলে তাঁরা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কাজের সুযোগ ও স্বীকৃতিও পাবেন না।
ডব্লিউএফএমইর সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত বিবেচনা না করে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের আসন যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাতে নিয়মের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। প্রায় সব মেডিকেল কলেজের অবস্থা এক। এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান খুবই নিচে থাকছে। খুব অল্পসংখ্যক কলেজই মান ধরে রাখতে পেরেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার মান সর্বকালের সর্বনিম্নে রয়েছে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে বলেছেন, কলেজের সমস্যা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওশাদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শয্যাসংখ্যা এখন বেড়েছে। তবে শিক্ষার্থী অনুপাতে এখনো কিছু ঘাটতি রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে তার সমাধান হয়ে যাবে।’
আসন বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা নিজেরা রাজনৈতিক কোনো প্রভাব খাটাইনি। মন্ত্রণালয়ের কাছে আসন বাড়াতে আবেদন করেছি, তারা অনুমতি দিয়েছে। শিক্ষক আগের তুলনায় বেড়েছে। ছাত্রী হোস্টেল সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বারবার শর্ত পূরণের জন্য বলা হলেও পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে নওশাদ খান বলেন, তাঁদের ‘চেষ্টার ত্রুটি নেই’।
সরকারি কর্তৃপক্ষ যা বললেন
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠার পর বিধিবিধান মানছে কি না তা যাচাইয়ে প্রথম পাঁচ বছরে অন্তত একবার পরিদর্শন করবে সরকারি কমিটি। আর প্রথম পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রতি দুই বছরে একবার পরিদর্শন করতে হবে। গত দুটি কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁরা আইন অনুযায়ী কাজের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নামে কলেজটি হওয়ায় এবং ‘ওপরমহলের চাপে’ তারা ‘শক্তভাবে’ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেননি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী এ বিষয়ে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয় কলেজের আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়ন করে। আসন বৃদ্ধি কমিটির সভাপতি থাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওই কলেজটির আসন নিয়ম অনুযায়ী বেড়েছে কি না তা এখন বলতে পারছি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’
রাজধানী ঢাকা থেকে ৭০ মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি। মাত্র দুই বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আসন বাড়ে ২০ শতাংশ। এর পর থেকে অব্যাহতভাবে বেড়ে চার শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই আসন বৃদ্ধি পায় ৮০ শতাংশ। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী মেডিকেল কলেজটির অন্তত ১০টি মৌলিক ঘাটতি রয়েছে।
কলেজটির কর্তৃপক্ষ বরাবর সাবেক সরকারের কাছে যা-ই দাবি করেছে, কার্যত তা-ই পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এসবই সম্ভব হয়েছে কলেজটি কিশোরগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনীতিক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নামে বলে। আওয়ামী লীগের এই নেতা দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য এবং স্পিকারও ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ নামের চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি নিয়মিত পরিদর্শন করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে তাদের প্রতিবেদনে কলেজের ঘাটতি বা ত্রুটিগুলোর খুব কমই তুলে ধরা হয়েছে। পরিণতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের চাহিদামতোই আসন বৃদ্ধি অনুমোদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ থেকে দুই বছর আগে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন ২০২২ কার্যকর করে সরকার। এ আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে বেসরকারি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলো ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২০১১ সালের নীতিমালাও মেনে চলেনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হমিদ মেডিকেল কলেজ।
আসন বৃদ্ধিতে রেকর্ড
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে আসন বৃদ্ধির রেকর্ড করেছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কলেজটি এমবিবিএস ডিগ্রির জন্য ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন পায়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১০টি আসন বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বাড়ে আরও ১০টি আসন। এর পরের বছর এক ধাপে আসন বাড়ে আরও ২০টি। দেশে বর্তমানে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এগুলোর কোনোটিতেই এত কম সময়ে ৮০ শতাংশ আসন বৃদ্ধির রেকর্ড নেই।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, সর্বশেষ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে আসন বাড়িয়ে ৯০টি করা হলে অধিদপ্তর থেকে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির নামে কলেজ। এখানে কোনো আপত্তি দেওয়া যাবে না।
হাসপাতালের শয্যা ও ভর্তির হারে শর্ত
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কলেজটি পরিদর্শন করে সাত সদস্যের সরকারি পরিদর্শন কমিটি। আইন অনুযায়ী, ৫০ শিক্ষার্থীবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ও হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ভবনে ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে আকারের দিক থেকে আবদুল হামিদ কলেজের একাডেমিক ভবনে ৩৮ হাজার ও হাসপাতালে ৯১ হাজার বর্গফুট কম রয়েছে। প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ হাসপাতালের শয্যায় রোগী ভর্তির হার ৭০ শতাংশ থাকার কথা। তবে তাতে ঘাটতি রয়েছে ৪৭ শতাংশ।
প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি পাঁচটি শয্যা থাকার কথা। তাতে শয্যাসংখ্যা হবে ৪৫০টি। পরিদর্শন কমিটি শয্যা পেয়েছে মাত্র ২৮৮টি।
কলেজ ভবনেই অন্য স্থাপনা
আইন বলছে, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অন্তত চার একর জমিতে স্বতন্ত্র ভবনে কলেজ ও হাসপাতাল হতে হবে।
গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা হাসপাতাল ভবনের ওপরের তলায় এখনো নির্মাণকাজ চলছে। বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যাও আপাতদৃষ্টিতে বেশ কম দেখা যায়। সাততলাবিশিষ্ট কলেজ ভবনের নিচ থেকে তিনটি তলা পর্যন্ত চলে একাডেমিক কার্যক্রম। চার থেকে ছয়তলা পর্যন্ত ছাত্রী হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সপ্তম তলায় রয়েছে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নার্সিং ইনস্টিটিউট। অথচ আইন অনুযায়ী, একাডেমিক ভবনে অন্য কার্যক্রম চালানো নিষেধ।
অনুমোদন ও নিবন্ধনের ঘাটতি
প্রতি শিক্ষাবর্ষে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন থাকার কথা থাকলেও সর্বশেষ নিবন্ধিত শিক্ষাবর্ষটি হলো ২০১৭-১৮। আসনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তির পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নিয়মমতো অধিভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিএমডিসি প্রতি শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন না দিলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি শেষে ইন্টার্নি করতে পারবেন না। তাঁরা চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধনও পাবেন না।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. লিয়াকত হোসেন আজকের পত্রিকাকে সম্প্রতি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। শিগগিরই বিএমডিসি থেকে কলেজটি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে পঞ্চম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ফলাফলের অপেক্ষায় আছে।’
যা বলছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা
অন্তত পাঁচজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলেছেন, একাডেমিক উৎকর্ষের তুলনায় কলেজের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক যোগসূত্রকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তাঁদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। মন্তব্যকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মান বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সারির শেষ দিকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ল্যাব উন্নত করা ও শিক্ষক ঘাটতির সমাধানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে একাডেমিক মানোন্নয়নে চেষ্টা করেনি। প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ঘাটতি রয়েছে। এসব দিকে মনোযোগ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতিবছর আসন বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নওশাদ খান সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের শ্যালক। কলেজসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও এলাকাবাসী মনে করেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব পাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নামে কলেজটির নাম রাখা হয়।
কলেজের একজন শিক্ষক আজকের পত্রিকাকে অনুমোদন নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যদি বিএমডিসির অনুমোদন না পায়, তাহলে তারা ইন্টার্নশিপ করতে পারবে না।’
চিকিৎসা শিক্ষা নিয়েই উদ্বেগ
চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত দুই দশকে চিকিৎসা শিক্ষার মানকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মেডিকেল কলেজের সংখ্যা নির্বিচারে বেড়েছে। সার্বিকভাবে বেসরকারি মেডিকেলগুলোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান নিম্নমুখী। যথাযথ শিক্ষাদানের জন্য যা প্রয়োজন, সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। এতে মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না। এতে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা ভবিষ্যতে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) স্বীকৃতি পাবেন না। তাহলে তাঁরা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কাজের সুযোগ ও স্বীকৃতিও পাবেন না।
ডব্লিউএফএমইর সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শর্ত বিবেচনা না করে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের আসন যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাতে নিয়মের চরম লঙ্ঘন হয়েছে। প্রায় সব মেডিকেল কলেজের অবস্থা এক। এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান খুবই নিচে থাকছে। খুব অল্পসংখ্যক কলেজই মান ধরে রাখতে পেরেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার মান সর্বকালের সর্বনিম্নে রয়েছে।’
কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে বলেছেন, কলেজের সমস্যা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। তবে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওশাদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শয্যাসংখ্যা এখন বেড়েছে। তবে শিক্ষার্থী অনুপাতে এখনো কিছু ঘাটতি রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে তার সমাধান হয়ে যাবে।’
আসন বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা নিজেরা রাজনৈতিক কোনো প্রভাব খাটাইনি। মন্ত্রণালয়ের কাছে আসন বাড়াতে আবেদন করেছি, তারা অনুমতি দিয়েছে। শিক্ষক আগের তুলনায় বেড়েছে। ছাত্রী হোস্টেল সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বারবার শর্ত পূরণের জন্য বলা হলেও পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে নওশাদ খান বলেন, তাঁদের ‘চেষ্টার ত্রুটি নেই’।
সরকারি কর্তৃপক্ষ যা বললেন
আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠার পর বিধিবিধান মানছে কি না তা যাচাইয়ে প্রথম পাঁচ বছরে অন্তত একবার পরিদর্শন করবে সরকারি কমিটি। আর প্রথম পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রতি দুই বছরে একবার পরিদর্শন করতে হবে। গত দুটি কমিটির অন্তত তিনজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে জানান, তাঁরা আইন অনুযায়ী কাজের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতির নামে কলেজটি হওয়ায় এবং ‘ওপরমহলের চাপে’ তারা ‘শক্তভাবে’ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেননি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী এ বিষয়ে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশে মন্ত্রণালয় কলেজের আসন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়ন করে। আসন বৃদ্ধি কমিটির সভাপতি থাকেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ওই কলেজটির আসন নিয়ম অনুযায়ী বেড়েছে কি না তা এখন বলতে পারছি না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’
রাজশাহী জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শহর থেকে সব ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হয়েছে। গত শনিবার কর্মী সম্মেলনের পর বিকেল থেকেই জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণে নেমে পড়েন।
২৪ মিনিট আগেমুন্সিগঞ্জে পূর্বশত্রুতার জেরে তুহিন নামে এক যুবকের পায়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের ডিঙাভাঙ্গা বালুর মাঠ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
১ ঘণ্টা আগেগাজীপুরের শ্রীপুরে একটি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
২ ঘণ্টা আগেগতকাল মধ্যরাতে পদ্মায় বড়শি তোলার সময় বুঝতে পারি বড় কোনো মাছ ধরা পড়েছে। বড়শি তুলতেই দেখি বড় একটা বোয়াল। ওইটা নিয়েই আজ (সোমবার) ভোরে সুবল দার (দাদা) আড়তে নিয়ে আসি...
২ ঘণ্টা আগে