Ajker Patrika

ভবন নির্মাণের আগেই রাজউকের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ৫৩
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবন। ফাইল ছবি
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবন। ফাইল ছবি

ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট বা ব্যবহার সনদ দেবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এই বিধান যুক্ত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

আজ সোমবার আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের মেলা উদ্বোধনকালে রাজউক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সরকার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, এত দিন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ব্যবহার সনদ দেওয়া হতো। এতে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিত।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এত দিন অকুপেন্সি সার্টিফিকেট পাওয়া ছিল অত্যন্ত জটিল। এখন তা সহজ করা হচ্ছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আমাদের কর্মকর্তারা নির্মাণের প্রতিটি ধাপে উপস্থিত থাকবেন এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেবেন।’

এছাড়া ফ্ল্যাট হস্তান্তরে বিলম্ব বা অতিরিক্ত অর্থ না নিতে আবাসন ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

ব্যবহার সনদ ভবন ব্যবহারের বৈধতার নিশ্চয়তা প্রদান করে। এটি ছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ বা পানি সংযোগ পাওয়া যায় না। সনদটি ভবনের নিরাপত্তা, কাঠামোগত স্থায়িত্ব ও নকশার মান নিশ্চিত করে।

রাজউক চেয়ারম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী, নতুন নিয়মে সনদ প্রদান আরও সহজ ও স্বচ্ছ হবে। নতুন নিয়মের প্রভাব সম্পর্কে আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা আশাবাদী। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সনদ দেওয়ার আগে নির্মাণ শেষ না হলে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ঝুঁকি ও আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

মেলার উদ্বোধনীতে রিহ্যাব সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, নতুন নিয়মের প্রভাব সম্পর্কে আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা আশাবাদী। তবে ভবন নির্মাণের আগে সনদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আরও স্পষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ‘নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি ও অন্যান্য জটিলতার কারণে আবাসন শিল্প সংকটে রয়েছে। দ্রুত সমাধান না হলে শিল্পের অবস্থা আরও নাজুক হতে পারে।’

ভবনের নির্মাণ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে রাজউক কর্মকর্তারা থাকবেন—এই প্রতিশ্রুতি ভালো এবং নতুন নিয়ম ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতি আনতে পারে। তবে ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে ব্যবহার সনদ দিলে তা ভবিষ্যতে নিরাপত্তা এবং মান নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।

এবিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘রাজউক চেয়ারম্যান ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটার ব্যাখ্যা দরকার। উনি কোন প্রেক্ষিতে বলেছেন, সেটা দেখতে হবে। কারণ ভবন পুরোপুরি নির্মাণ না হলে তো এই সার্টিফিকেট দেওয়া যায় না।’

নির্মাণের পর ভবন ব্যবহার সনদ নেওয়ার বিধান থাকলেও ঢাকার অনেক ভবনে যথাযথ সনদ ছাড়াই ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। এবছরই বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়। কোনো ওকুপেন্সি সার্টিফিকেট ছাড়াই এই ভবনে রেস্তোরাঁসহ নানা ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছিল। রাজউকের তদারকি ঘাটতির কারণে এই ঘটনাটি ঘটে।

এর আগে ২০১৯ সালে বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর রাজউক ১৮০০টি ত্রুটিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করেছিল। কিন্তু এদের কতগুলো ভবন সমস্যা সমাধান করেছে, তার সঠিক রেকর্ড নেই। রাজউক পর্যাপ্ত নজরদারি বা আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে অনিয়ম এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো টিকে রয়েছে। তাই, নির্মাণের প্রতিটি ধাপে রাজউকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কতটা কার্যকর থাকবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ভবনের সনদ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে সমন্বিত টাস্কফোর্স গঠন করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

রাজউকের ব্যবহার সনদ কেন প্রয়োজন?

ইমারত নির্মাণ বিধিমালার গুরুত্বপূর্ণ নথি রাজউকের ব্যবহার সনদ বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট। নির্ধারিত নকশা ও নিরাপত্তা বিধি অনুসরণ করে ভবন তৈরি হয়েছে কিনা এবং তা ব্যবহারের জন্য নিরাপদ কিনা, তা নিশ্চিত করে এই সনদ। এটি গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন সেবা সংযোগ পেতে সাহায্য করে এবং ভবনের আইনি বৈধতার নিশ্চয়তা দেয়।

  • নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করে ভবন নির্মিত হয়েছে এবং ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এর সক্ষমতা নিশ্চিত করে এই ব্যবহার সনদ।
  • আইনি বৈধতা: ভবনের ব্যবহারের জন্য আইনগতভাবে প্রয়োজন অকুপেন্সি সার্টিফিকেট। এটি না থাকলে ভবনের মালিক বা ব্যবহারকারী ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন।
  • ইউটিলিটি সংযোগ: গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি—ইত্যাদি পরিষেবার সংযোগ পেতে এই সনদ আবশ্যক। এটি না থাকলে সংযোগ পাওয়া সম্ভব নয়।
  • ক্রয়-বিক্রয়ে স্বচ্ছতা: ভবন ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার সনদ থাকলে, তা ক্রেতার কাছে ভবনের নিরাপত্তা ও বৈধতার নিশ্চয়তা দেয়।

ভবন নির্মাণ শেষের আগে ব্যবহার সনদে যেসসব সমস্যা হতে পারে?

  • অপরিকল্পিত সনদ: ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার আগে ব্যবহার সনদ ইস্যু করা হলে প্রকৃত নিরাপত্তা ও গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব নাও হতে পারে।
  • পরিবর্তনের সুযোগ: নির্মাণকাজ চলাকালে ভবনের ডিজাইন বা নির্মাণে পরিবর্তন এলে প্রাথমিকভাবে দেওয়া সনদ অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
  • নির্মাণ ত্রুটির ঝুঁকি: ভবন পুরোপুরি নির্মাণ না হলে সনদ ইস্যু করা ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি বা অ-মানসম্মত নির্মাণকে বৈধতা দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
  • নিয়ন্ত্রণের অভাব: ভবন নির্মাণ চলাকালে পর্যাপ্ত নজরদারি ছাড়া ব্যবহার সনদ ইস্যু করা হলে অনিয়মের সম্ভাবনা বাড়ে।
  • প্রতারণার আশঙ্কা: নির্মাতা বা ডেভেলপাররা অপূর্ণ ভবনের সনদ ব্যবহার করে ফ্ল্যাট বা সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারেন, যা পরবর্তীতে ক্রেতাদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করবে।

ভবন ব্যবহার সনদ যেভাবে মিলে

প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করুন: রাজউকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (cp. rajukdhaka. gov. bd) রেজিস্ট্রেশন করে প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য মোবাইল নম্বর ও ইমেইল প্রয়োজন।

আবেদন ফি জমা: ব্যবহার সনদ সনদের জন্য নির্ধারিত ফি অনলাইনে অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।

প্রয়োজনীয় নথি আপলোড: নকশা, নির্মাণ পরিকল্পনা, এবং তলার বিবরণীসহ প্রাসঙ্গিক নথি আপলোড করতে হবে।

আবেদন যাচাই এবং অনুমোদন: রাজউক কর্তৃপক্ষ জমা দেওয়া নথি যাচাই করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

সনদ সংগ্রহ: প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সনদ অনলাইনে ডাউনলোড বা রাজউক অফিস থেকে সংগ্রহ করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলার আহ্বান ত্রিপুরার রাজপরিবার প্রধানের

পরিবারের সামনে পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা-কর্মী আটক

নয়াদিল্লি হাসিনা আমলের দৃষ্টিভঙ্গিই ধরে রেখেছে: ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক হচ্ছে

গ্রেপ্তার আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, বিএনপির ১৭ নেতা-কর্মী আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত