পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে আস্থা অর্জন, বিক্রয়কর্মী হয়ে ৫২ ভরি স্বর্ণ নিয়ে চম্পট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ১৯
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৪৬
সিআইডির হাতে গ্রেপ্তারকৃত ৪ আসামি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মৌচাক মার্কেট আসিফ জুয়েলার্স নামে এক স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনায় স্বর্ণ বিক্রির পাঁচ লাখ টাকাসহ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। সেই সঙ্গে তাদের কাছ থেকে চুরি হওয়া ৫২ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার নবীয়াবাদ গ্রামের মো. তাজু মিয়ার ছেলে মো. হিমেল মিয়া (২০)। ময়মনসিংহ সদরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুর জব্বার (৭০), তাঁর মেয়ে ফারজানা আক্তার ইতি (২৭) ও ইতির স্বামী মাশফিক আলম (২৮)।

আসামিদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, ওই দোকানের স্বত্বাধিকারী মো. আলিম উদ্দিনের দোকানে বিগত চার বছর যাবৎ কর্মচারী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন আসামি মো. হিমেল মিয়া (২০)। তিনি প্রথমে দোকানের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তিন বছর কাজের অভিজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততার জন্য পরে তাকে ওই দোকানের সেলসম্যান (বিক্রয়কর্মী) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

হিমেল দোকানের বিক্রেতা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই স্বর্ণ চুরি করার অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে এবং সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। তার এ পরিকল্পনার কথা বন্ধু মহলে আলাপ করলেও বন্ধুরা তাকে এই কাজ করতে নিষেধ করে। পরবর্তীতে হিমেল স্বর্ণ চুরির বিষয়টি নিয়ে পূর্বপরিচিত ফারজানা আক্তার ইতি (২৭) ও তার স্বামী স্বামী মাশফিক আলমকে (২৮) জানান। ইতির বাড়ি ময়মনসিংহ সদরে। তবে তিনি তাঁর স্বামীসহ রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ১৭ মৌলভীরটেক এলাকায় থাকতেন। তাঁর স্বামীর বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। একপর্যায়ে হিমেলসহ তারা স্বর্ণ লোপাটে একমত হন।

সিআইডি আরও জানায়, আসিফ জুয়েলার্সের মালিক ও ম্যানেজার প্রায়ই হিমেলকে স্বর্ণের কাজ করানোর জন্য পাশের আনারকলী মার্কেটের কারখানায় স্বর্ণ দিয়ে পাঠাতেন এবং কাজ শেষ করে হিমেল স্বর্ণ দোকানে ফেরত নিয়ে আসতেন। ঘটনার দিন (৩০ অক্টোবর) হিমেলকে স্বর্ণ নিয়ে আসার জন্য কারখানায় পাঠানো হয়। হিমেল কারখানা থেকে আনুমানিক ৫৯ ভরি স্বর্ণ নিয়ে দোকানে না এসে পূর্বপরিকল্পনা মতো পালিয়ে গিয়ে মাশফিকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। এবং তাঁর পরামর্শেই মাশফিকের বাসায় তাঁর স্ত্রী ইতির কাছে যান। এরপর থেকেই মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে যান হিমেল।

পরবর্তীতে হিমেল কৌশলে ৩৩ ভরি স্বর্ণ নিজের কাছে রেখে চক্রের অন্য সদস্যদের জানান-তিনি ২৫ ভরি স্বর্ণ চুরি করতে পেরেছেন। হিমেল স্বর্ণসহ ইতির বাসায় পৌঁছানোর পর ইতিকে ২৫ ভরি স্বর্ণের বারটি রাখার জন্য দেন। এরপর ইতি হিমেলকে সঙ্গে করে উত্তরা গিয়ে ময়মনসিংহের উদ্দেশে বাসে উঠিয়ে দেন এবং ইতির বাবা আব্দুর জব্বারকে ফোন করে বলেন হিমেলকে নিয়ে ময়মনসিংহ সদরে তাদের বাসায় রাখার জন্য।

এ দিকে দীর্ঘক্ষণ হিমেল দোকানে না আসায় এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে আলিমুদ্দিন নিশ্চিত হন যে, হিমেল স্বর্ণ চুরি করে পালিয়েছেন। পর এ ঘটনায় আসিফ জুয়েলার্সের মালিক আলিমুদ্দিন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন এবং সিআইডির কাছে স্বর্ণ উদ্ধারের জন্য একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর সিআইডি ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের শনাক্তে কাজ শুরু করে।

এ দিকে আসামি মাশফিক তাঁর স্ত্রী ইতির কাছে থাকা স্বর্ণের বার নিয়ে ময়মনসিংহ সদরে মাশফিকের শ্বশুর আব্দুর জব্বারের কাছে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা সন্দেহ এড়াতে স্বর্ণের বারটি টুকরা করে বিক্রির পরিকল্পনা করেন এবং তিনটি টুকরা করেন। সেখান থেকে একটি টুকরা (৭ ভরি) নিয়ে মাশফিক ময়মনসিংহের স্থানীয় স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা নেন মাশফিক।

পরে ওই টাকা দিয়ে হিমেল নিজের জন্য একটি আইফোন-১৫ প্রো, মাশফিক নিজের জন্য ও তাঁর স্ত্রীর জন্য অন্য দুটি মোবাইল ফোন ও জামা-কাপড় কেনেন। মাশফিক অবশিষ্ট টাকা (প্রায় ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা) ও স্বর্ণ নিয়ে ঢাকায় ফিরে তাঁর স্ত্রী ইতির কাছে রেখে কক্সবাজারে আত্মগোপনে চলে যান।

পরে সিআইডি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কক্সবাজারে মাশফিকের অবস্থান শনাক্ত করে এবং তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর কাছে স্বর্ণ বিক্রির ২৭ হাজার টাকা ও ৬৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।

মাশফিকের দেওয়া তথ্যমতে, মাশফিকের স্ত্রী ফারজানা আক্তার ইতিকে রামপুরা মৌলভীরটেকের বাসা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ইতির বাসার ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে দুটি স্বর্ণের টুকরা (১৯ ভরি) এবং স্বর্ণ বিক্রির ৪ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ইতির দেওয়া তথ্যমতে, পরবর্তীতে ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে ইতির বাবা আব্দুর জব্বারকে (৭০) গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে আব্দুল জব্বার সিআইডিকে জানায়, হিমেলকে তিনি গৌরীপুরে তাঁর ভাতিজার বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন।

পরে সেখানে গিয়ে সাইবার পুলিশের আরেকটি দল ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলার বোকাইনগর এলাকা থেকে ৩৩ ভরি স্বর্ণের বার, স্বর্ণ বিক্রির ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা মূল্যের আইফোন-১৫ প্রোসহ হিমেলকে গ্রেপ্তার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন এবং বর্তমানে মামলাটি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত