Ajker Patrika

ছিনতাইকালে হাতেনাতে আটক দুই পুলিশ কনস্টেবল, সাময়িক বরখাস্ত 

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪, ২০: ২১
ছিনতাইকালে হাতেনাতে আটক দুই পুলিশ কনস্টেবল, সাময়িক বরখাস্ত 

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহাসড়কে ছিনতাইকালে দুই পুলিশ কনস্টেবলকে হাতেনাতে ধরার পর পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা। গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার ধেরুয়া এলাকা থেকে তাঁদের ধরা হয়। পরে স্থানীয়রা তাঁদের মির্জাপুরের দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করে।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানায় কর্মরত ওই দুই পুলিশ কনস্টেবল হলেন— টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার মিরেকপুর গ্রামের কৈলা রাজবংশীর ছেলে রিপন রাজবংশী (২৮) ও সিরাজগঞ্জ জেলা চৌহালী উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের ময়নাল হকের ছেলে মো. মহসিন মিয়া (৩১)।

মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান সোমবার রাতেই ওই দুই পুলিশ কনস্টেবলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে গত সোমবার তাঁদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করলে  টাঙ্গাইল আমলি আদালত মির্জাপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম জানান, ছিনতাইয়ের শিকার পিকআপচালক রানা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। পিকআপচালক রানার বাড়ির জেলার মধুপুর উপজেলায়।

পুলিশ জানায়, গত রোববার টাঙ্গাইলের মধুপুরের মমিনপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে রানা মিয়া মধুপুর থেকে পিকআপভর্তি আনারস নিয়ে আশুলিয়ার বাইপাইল আড়তে নামান। রাত ৮টার দিকে পিকআপ নিয়ে মধুপুরের উদ্দেশে রওনা হন। পৌনে ১০টার দিকে পিকআপটি মহাসড়কের ধেরুয়া এলাকায় পৌঁছালে পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই কনস্টেবল পিকআপটিকে হাতের ইশারায় থামাতে বলেন। ধেরুয়া ফ্লাইওভার পার হওয়ার পর ফাঁকা স্থানে পিকআপটি থামানো হয়।

পিকআপের চালক ও তাঁর সহকারীর কাছে জাল টাকা আছে দাবি করে তাঁদের গাড়ি থেকে নিচে নামান ওই দুই কনস্টেবল। পরে তাঁরা ভয় দেখিয়ে তাদের কাছে থাকা ১১ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেন এবং পাশের দেওহাটা ফাঁড়িতে নিয়ে তল্লাশি করার ভয় দেখান। এ সময় চালক ও তাঁর সহকারীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এবং পাশেই ডিউটিরত মির্জাপুর থানাধীন দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের আটক করেন। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের তল্লাশির নামে মহাসড়কের উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানি, পুষ্টকারী চরপাড়া, দেওহাটা ও ধেরুয়া এলাকায় প্রতিনিয়ত ট্রাক, পিকআপ ও মোটরসাইকেলচালকসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। পুলিশ ইউনিফর্ম পরিহিতরা এবারে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করার কারণে মহাসড়কের ওই অংশ অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। গত ১১ মার্চ রাতে মহাসড়কের পুষ্টকারী চরপাড়া এলাকায় গোপাল রাজবংশী নামের একজন মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পুলিশ পরিচয়ে ৫৬ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় মির্জাপুর থানায় অভিযোগ করলেও তাঁর টাকা উদ্ধার হয়নি।

মির্জাপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক সিদ্দিকী বলেন, ‘যখন পুলিশের পোশাক পরিহিতরা কোনো যানবাহন ও ব্যক্তিকে আটকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করে থাকে সেখানে সাধারণ মানুষের সন্দেহ বা চ্যালেঞ্জ করার সাহস থাকে না। ফলে তাঁরা সহজে গ্রেপ্তার ও মামলার ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষ, যানবাহনের চালক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নেয়।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোকাম্মেল জানান, গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

মির্জাপুর থানা–পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘তাঁরা দুজন পুলিশের পোশাক পরিহিত ছিল। ছিনতাইকারী, ছিনতাইকারীই তারা পুলিশ সদস্য হতে পারে না।’

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু তাঁরা ফৌজাদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সে কারণে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত