Ajker Patrika

চিকিৎসার কথা বলে বাবার সই নিলেন মেয়েরা, সব সম্পত্তি বেহাত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
পাঁচ মেয়ের বিরুদ্ধে আজ সংবাদ সম্মেলন করেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পাটধা মহিশাখালী গ্রামের ভুক্তভোগী মো. সাহেদ আলী ভূঞা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাঁচ মেয়ের বিরুদ্ধে আজ সংবাদ সম্মেলন করেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পাটধা মহিশাখালী গ্রামের ভুক্তভোগী মো. সাহেদ আলী ভূঞা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জে চিকিৎসার কথা বলে অশীতিপর বৃদ্ধ বাবার বসতভিটাসহ পুরো সম্পত্তি দলিল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাঁচ মেয়ের বিরুদ্ধে। প্রতারণা করে জমি লিখে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে মো. সাহেদ আলী ভূঞা (৮৫) নামে ভুক্তভোগী ওই বাবা দলিল বাতিলের জন্য আদালতে মামলা করেছেন।

সম্পত্তিতে নিজের মালিকানা ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাহেদ আলী ভূঞা আজ শনিবার জেলা শহরের গৌরাঙ্গবাজারে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি মেয়েদের প্রতারণার কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভুক্তভোগী মো. সাহেদ আলী ভূঞা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পাটধা মহিশাখালী গ্রামের মৃত জাফর আলী ভূঞার ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ছাড়াও তাঁর দুই ছেলে মো. মোস্তফা (৫০) ও মো. জয়নাল আবেদীন (৩৬) এবং দ্বিতীয় স্ত্রী ককোলা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

মো. সাহেদ আলী ভূঞা জানান, তাঁর দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রেখে প্রথম স্ত্রী মারা যান। এরপর ১৫ বছর আগে একই এলাকার ককোলা আক্তারকে সাহেদ বিয়ে করেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ায় তাঁরা স্বামীর বাড়িতে থাকে। এ ছাড়া দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মোস্তফা বাড়ির পাশে মুদির দোকান দিয়ে সংসার চালান এবং ছোট ছেলে জয়নাল ঢাকায় থাকেন। অন্যদিকে বয়সের ভারে ও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে কাবু সাহেদ আলী ভূঞাকে দ্বিতীয় স্ত্রী ককোলা সেবা-শুশ্রূষা করেন। তাঁদের যাবতীয় খরচ ও দেখাশোনা করেন বড় ছেলে মোস্তফা। এ রকম পরিস্থিতিতে সম্প্রতি হঠাৎ জ্বর ও আমাশয়ে আক্রান্ত হয়ে ভীষণ রকম দুর্বল হয়ে পড়েন সাহেদ আলী ভূঞা।

সাহেদ আলী ভূঞা অভিযোগ করেন, তাঁর অসুস্থতার সুযোগে দুই ছেলেকে বঞ্চিত করে তাঁর সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে তাঁর পাঁচ মেয়ে জুয়েনা, রাব্বিনা, রুনা, হেপি ও আলপিনা এবং রুনার জামাই মো. চাঁন মিয়া মেম্বার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাঁর মেয়েরা ও মেয়ে জামাই চাঁন মিয়া তাঁকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ৩ মার্চ কিশোরগঞ্জ সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে বসান। সেখানে তাঁকে ডাক্তারের ওষুধ নিতে হলে দস্তখত দিতে হবে, এই কথা বলে কতগুলো সাদা কাগজে কয়েকটি দস্তখত নিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পর একটি ওষুধের বোতল এনে তাঁরা বলেন যে ডাক্তার ওষুধ দিয়েছেন। এরপর তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পরে সাহেদ আলী ভূঞা জানতে পারেন, ওই দিন তাঁর দস্তখত নিয়ে বসতভিটাসহ সব সম্পত্তি মেয়েরা তাঁদের নামে হেবা দলিল করে লিখে নিয়েছেন। এরপর গত ২৫ মার্চ কিশোরগঞ্জ প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে হেবা ঘোষণা দলিল বাতিলের জন্য সাহেদ আলী ভূঞা বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

সাহেদ আলী ভূঞা জানান, তাঁর বসতভিটাসহ সহায়সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত চার কোটি টাকা। মূলত তাঁর দুই ছেলেকে বঞ্চিত করতে তাঁর মেয়েরা মিলে চিকিৎসার নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে তাঁর সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন। অথচ তাঁর বড় ছেলে মোস্তফা তাঁদের ভরণপোষণসহ যাবতীয় খরচ চালান। সব সম্পত্তি লিখে নেওয়ায় এখন তিনি নিঃস্ব। এসব বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় সাহেদ আলী ভূঞা চক্রান্তমূলকভাবে করা এই দলিল বাতিল ও তাঁর সঙ্গে হওয়া প্রতারণার প্রতিকার চান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত