মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলের সুতালড়ি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম। তিনি একাধারে সুতালড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও। তবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন বলে দাবি এলাকাবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের আরও চার নেতা এই ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। 

সব মিলে এবার সুতালড়িতে পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এরা হলেন—উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলজার হোসেন বাচ্চু, উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ইমদাদুল হক বাদল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেকেন্দার বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ফরিদ ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম। এঁদের মধ্যে গোলজার হোসেন বাচ্চুকে নতুন চমক হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলজার হোসেন বাচ্চু বলেন, 'সুতালড়ী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান যিনি আছেন, তিনি বেশির ভাগ সময়ই ঢাকায় থাকেন। ফলে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণসহ দলীয় নেতাকর্মীরাও সময়ে-অসময়ে তাঁকে পায় না। শুধু তাই নয়, উপজেলার মাসিক সমন্বয় মিটিংয়েও তার উপস্থিতি কম। গত পাঁচ বছরে তিনি সরকারি বড় কোনো উন্নয়নমূলক প্রকল্পও ইউনিয়নে আনতে পারেননি। সাধারণ জনগণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর সমন্বয়েরও অভাব রয়েছে। তাই এবারের নির্বাচনে জনগণের আবদার এবং দলীয় নেতাকর্মীদের চাহিদার ওপর নির্ভর করে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর পরেও শুধু আমি চাইলেই তো আর হবে না। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যদি দলীয় কর্মীদের প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেন, তবেই নির্বাচনে আসা সম্ভব।'

গত ২৪ অক্টোবর ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান মইনুল হোসেন খানের বাড়িতে অনুষ্ঠিত দলীয় উঠান বৈঠকে বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বেশ জোরালোভাবেই উঠেছে। উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ইমদাদুল হক বাদল বলেন, 'আমি দলীয়ভাবে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী। যদি দলীয় মনোনয়ন না পাই, সে ক্ষেত্রে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও সম্ভাবনা আছে।' 

অভিযোগ প্রসঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুঠোফোনে বলেন, 'আমি এবারের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। যদি দলীয় প্রতীক না পাই, তবে দলের নীতিনির্ধারকদের বাইরে আমি যাব না। নৌকা যে পাবে, তাঁর হয়েই কাজ করব।' 

তবে সুতালড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেপাল হালদার জানান, 'এ ইউনিয়নে তিনজন বড় মাপের প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক। দলীয়ভাবে এদের মধ্য থেকে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, আমাদের সব নেতাকর্মী তাঁর হয়েই একযোগে কাজ করবে।' 

প্রসঙ্গত, গোলজার হোসেন বাচ্চু ১৯৭০ সালে দক্ষিণ চাদপুর উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পদের মধ্য দিয়ে আওয়ামী রাজনীতিতে আসেন। পরে উপজেলা ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগে একাধিকবার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদও লাভ করেন। সবশেষ ২০১৪ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।