এক দিনের জামাই মেলায় দেড় কোটি টাকার মাছ বিক্রি

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭: ০৩
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭: ২৩

গাজীপুরের কালীগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জামাই মেলা। গ্রামবাসীর কেউ কেউ মাছের মেলাও বলে থাকেন। বাংলা ক্যালেন্ডারের পৌষ মাসের শেষের দিন অথবা মাঘ মাসের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। বিভিন্ন ধরনের পণ্য মেলায় উঠলেও প্রধান আকর্ষণ থাকে বিশাল আকৃতির মাছ। জামাই-শ্বশুরের মধ্যে চলে বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। এভাবেই পৌষসংক্রান্তিতে আড়াই শ বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে জামাই মেলা।

গতকাল সোমবার উপজেলার জাঙ্গালিয়া, বক্তারপুর, জামালপুর ও মোক্তারপুর ইউনিয়নের চার মোহনায় বিনিরাইল গ্রামের বিনিরাইল বিলে বসেছিল জামাই মেলা। আড়াই শ বছর ধরে কৃষকের ধান কাটার পর ওই জমিতে স্থানীয়রা এ মেলার আয়োজন করেন। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৭০ কেজি ওজনের বাগাড় মাছ এবং একই মূল্যের পাখি মাছ বা উড়ুক্কু মাছ।

স্থানীয় ও মেলার আয়োজকেরা জানান, পৌষসংক্রান্তিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশেষ পূজা অর্চনার সময় দূর-দূরান্ত থেকে যেসব পুরোহিত এবং মেহমান আসতেন তাঁদের আপ্যায়নের জন্য করা হতো বিশেষ আয়োজন। এই আয়োজন একটা সময় পরে এ অঞ্চলে সর্বজনীন মেলায় রূপ নেয়। সাম্প্রতিক ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সকল ধরনের মানুষের মিলন ঘটে এই মেলায়। প্রচলিত রেওয়াজ রয়েছে এই মেলা ঘিরে জামাই-শ্বশুরের মধ্যে বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা হয়।

কালীগঞ্জে জামাই মেলায় উঠেছে বিশাল আকৃতির সব মাছ।দেখা গেছে, মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের প্রতিটি বাড়িতে মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়স্বজনে ভরে উঠেছিল। ঈদ, পূজা-পার্বণ বা অন্য কোনো উৎসবে দাওয়াত পেয়ে অনেক সময় শ্বশুরবাড়ি না আসলেও বিনিরাইলের মাছের মেলায় জামাইরা ঠিকই এসেছেন নিয়ম করে। বলতে গেলে এটি এক প্রকার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে এই অঞ্চলে। নদী ও সাগরের বড় বড় মাছ, মিষ্টি, ফার্নিচার, তৈজসপত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও বিক্রি হয়েছে এ মেলায়।

কালীগঞ্জে জামাই মেলায় বসা একটি স্টল।আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মেলায় বেচাকেনা হয়েছে দেড় কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে মাছ বিক্রি হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকার মতো। আর বাকি ৫০ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে অন্যান্য সামগ্রী, যা অন্য সকল বছরের রেকর্ড পার করেছে।

কালীগঞ্জে জামাই মেলায় উঠেছে বিশাল আকৃতির সব মাছ।আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. কিশোর আকন্দ বলেন, গ্রামীণ এবং প্রাচীন এ মেলাটিকে ঘিরে মানুষের কৌতূহল দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিবছরই ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়ে বাড়ি ফিরছেন। আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু ধারণা করতে পেরেছি এতে দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বেচাকেনা। এখানে শুধু মাছই বিক্রি হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকার মতো। তা ছাড়া আঞ্চলিক যেসব কৃষক রয়েছেন তাঁদের খামারের ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্ষীরা এবং মুলাসহ উল্লেখযোগ্য অঙ্কের কৃষি পণ্য বিক্রি হয়েছে।

কালীগঞ্জে জামাই মেলায় উঠেছে বিশাল আকৃতির সব মাছ।তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন রূপ নিয়েছে ঐতিহ্যে। এ মেলা স্থানীয়দের কাছে সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। মেলাটি এখন এই এলাকার মানুষের হৃদয়ের খোরাক।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত