ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মানুষের ঢল, গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তি 

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ০৫

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার পরপরই ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। সড়কে যাত্রী বাড়ায় হঠাৎ করে যাতায়াত ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ। 

আজ সোমবার দুপুর ১টার পর থেকে শ্রীপুর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মাওনা চৌরাস্তা, গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি, মাধখলা, এমসি বাজার, নয়নপুর, পল্লি বিদ্যুৎ মোড় ও জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ডে এমন চিত্র দেখা যায়। 

নিজ নিজ গন্তব্যে নিরাপদ বাড়ি ফিরতে মহাসড়কের পাশে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার ঘরমুখো মানুষ। কিন্তু রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে গণপরিবহন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে ঘরমুখো যাত্রীরা। গণপরিবহন সংকটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। 

ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ট্রাক পিক-আপ, নসিমন করিমন, অটোরিকশায় নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন যাত্রীরা। গণপরিবহন না পেয়ে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরা মানুষের ক্ষোভের শেষ নেই। 

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে চার হাজারের বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর এ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েক লাখ শ্রমিক। সোমবার দুপুরের পর থেকে প্রায় সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেছেন শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। 

রাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে গণপরিবহন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছে ঘরমুখো যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা দুপুরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা পল্লি বিদ্যুৎ মোড়ের অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলা বাসিন্দা আলমগীরের সঙ্গে। তিনি কাজ করেন উপজেলার মুলাইদ এলাকার একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঈদে বাড়ি রওনা হয়েছেন। ছুটি পেয়ে বাসার সবকিছু গোছগাছ করে এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন দুই ঘণ্টা যাবৎ। কাঙ্ক্ষিত কোনো বাস নেই। সবশেষে ট্রাকে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত, তবুও মিলছে না। 

কথা হয় হালুয়াঘাটের বাসিন্দা কারখানার শ্রমিক দুলাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি বলেন, অসুস্থ মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছি। কিন্তু রাস্তায় খুবই ভোগান্তি। গণপরিবহন সংকট। বাস না পেয়ে ট্রাকে চড়ে রওনা দিচ্ছি। নিজে কোনো মতে কষ্ট করে ওপরে ওঠে স্ত্রীকে টেনে তুলেছি ট্রাকে। 

তিনি আরও জানান, একটি খালি গণপরিবহন রাস্তায় নেই। যা আসছে যাত্রী ভর্তি, তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোনো পরিবহনে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পায়নি। 

এমসি বাজার বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় পারভীন আক্তার নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, চাকরির সুবাদে থাকি শ্রীপুরে। বাড়িতে ঈদ করতে যাব। কারখানা ছুটি শেষে অনেক সময় দাঁড়িয়ে রয়েছি গাড়ির অপেক্ষায়। ট্রাক পিক-আপে যেতে চাইলেও ভাড়া কয়েকগুণ বেশি। ১০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা। তবুও গাড়ি পাওয়া খুবই কঠিন। ঈদে বাড়ি ফিরতে সব সময় ভোগান্তি হয়, তবে এই ঈদে অনেক বেশি ভোগান্তি হচ্ছে। বাস নেই বললেই চলে। ট্রাকে যাব তাও পাচ্ছি না। 

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ মাহমুদ মোর্শেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ট্রাক পিক-আপসহ ঝুঁকিপূর্ণ যানে বাড়ি ফেরা থেকে যাত্রীদের নিষেধ করা হচ্ছে। অবৈধ যানবাহনকে জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে সব কলকারখানা ছুটি হওয়ার কারণে মহাসড়কে হঠাৎ করে বেশি যাত্রীর চাপ হয়েছে। 

ট্রাক পিক-আপ, নসিমন করিমন, অটোরিকশায় নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন অনেক যাত্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আকবর আলী খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একাধিক পুলিশ কাজ করছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষকে নিরাপদে পৌঁছে দিতে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে মনিটরিং করছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে গণপরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত