Ajker Patrika

ভৈরবে মেঘনায় ব্যাপক ভাঙন, ঝুঁকিতে বাণিজ্য কেন্দ্র ও ৩ সেতু

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও ভৈরব সংবাদদাতা
ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আবারও মেঘনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে ভাঙন শুরু হয়ে এখনো অব্যাহত রয়েছে। সাত দিনের ব্যাপক ভাঙনের ঝুঁকিতে ভৈরবের বাণিজ্য কেন্দ্র, দুটি রেলওয়ে এবং একটি সেতু। এতে আতঙ্কিত ভৈরব বাজারের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়রা জানান, দেশের অন্যতম নদীবন্দর ভৈরব। কয়েক মাস আগে তা ভাঙনের কবলে পড়ে। আবারও গত সোমবার রাত ৮টা থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। থেমে থেমে চলছে এই ভাঙন। গত দুই বছরে তিনবার ভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকাটি। ঘটেছে হতাহতের ঘটনাও।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, গত সাত দিনে ২০০ মিটারের বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে নির্বাহী প্রকৌশলীর দাবি, ভাঙন আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এদিকে ঘন ঘন এই নদীভাঙনের কারণে ভৈরব বাজারসহ পাশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ভৈরব বাজার ও নদীতীরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ—এমনটাই দাবি তাঁদের।

পাউবো ও স্থানীয়রা আরও জানান, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে ভৈরব রেলওয়ের ৫০ একর জায়গা ও শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ২০০৪ সালে শহরের কাঠপট্টি এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়। ২০২২ সালের ভাঙনে দুটি চালকল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে দুজন শ্রমিক মারা যান। গত ৮ সেপ্টেম্বর মেঘনা ব্রিজ-সংলগ্ন ডিপো ঘাট এলাকায় নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। এতে ১০০ মিটার ভূমিসহ প্রায় ২০টি কাঁচা ঘর, যমুনা অয়েল কোম্পানির একাংশসহ বেশ কিছু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

এ ঘটনার ৫ মাস পর গত ২৭ জানুয়ারি রাত ৮টা থেকে ভৈরব-আশুগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। ঘাটে রেলডক নির্মাণের কাজ চলছিল। পরে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। ভাঙনে বেশ কয়েকটি প্লেট নদীতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া চালকলের দুটি ঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

আজ রোববার ভাঙন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এখনো ভাঙন থামেনি। ভাঙন এলাকায় ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। ভাঙন এলাকা থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে লঞ্চঘাটসহ ভৈরবের মূল বাণিজ্য কেন্দ্র ও শত শত বহুতল ভবন। এক প্রান্তে আছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দুটি রেলসেতু এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি সড়কসেতু, যা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। নদীভাঙনের পর থেকে বন্ধ রয়েছে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন।

এ বিষয়ে রাকিবুল, তাহির মিয়া, ইমন, পিএল ইসলামসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। না হয় নদীভাঙন রোধ করা যাবে না। এ ছাড়া নদীতীরে রেলডক নির্মাণকাজ চলে প্রতিনিয়ত। নদীভাঙনের জন্য এসবই দায়ী। স্থায়ী সমাধান না করতে পারলে হুমকিতে থাকবে ভৈরব শহর। সেই সঙ্গে হুমকিতে রয়েছে দুটি রেল ও একটি সড়কসেতু, দুটি তেলের ডিপো ও বিএডিসির দুটি সারের গুদাম।

এদিকে গত ২৯ জানুয়ারি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন। ভাঙন এলাকা থেকে একটি খননযন্ত্র (ড্রেজার) জব্দ করা হয়েছে। তবে ভাঙনরোধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ সরকার এখনো নেয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। ভাঙন রোধে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান ইউএনও।

ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইউএনও শবনম শারমিন বলেন, ভাঙনের কারণে অনুমতি না নিয়েই রেলডক নির্মাণ ও ট্রলার তৈরির বিষয়টি সামনে আসছে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, বর্ষা মৌসুমে পানির ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। এর ফলেও ভাঙন দেখা দিতে পারে।

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, রেলডক নির্মাণের প্রয়োজনে নদীর পাড় কাটা এবং পাড় লাগোয়া স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রেলডক নির্মাণের কাজে জড়িতরা সবাই পলাতক। ভাঙন আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আজ দুপুর পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৮৫টি জিও ব্যাগ ডাম্পিং হয়েছে। ৪ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।

ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি জাহিদুল হক জাবেদ বলেন, ‘বিগত দিনে শহর রক্ষা বাঁধের নামে অর্থ লুটপাট করেছে ক্ষমতাসীনেরা। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ভৈরব থেকে ছায়তনতলা পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হোক। তাহলে ভৈরবের মানুষ বেঁচে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা

এনসিটিবিতে দুর্নীতির অভিযোগে এনসিপি নেতা তানভীরের নাম, সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়

‘হেলিকপ্টারে শেখ হাসিনা পালিয়েছে, আমি ফিরেছি’

ধর্ষণ ও তিন খুনের আসামি ঘুরে বেড়াচ্ছে, ভয়ে বাদী

আটকের ভয়ে সকাল থেকে উপজেলা পরিষদে ইউপি চেয়ারম্যান, বিকেলে বেরিয়ে আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত