আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
‘রবিউল মারা গেছে, তাঁর লাশ হেমায়েতপুর রাখা হবে। সেখান থেকে লাশ নিয়ে নিয়েন।’ একদিন মধ্যরাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি হোটেল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের শাশুড়িকে ফোন করে এতটুকু কথা বলে ফোন রেখে দেন। অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোনে এমন কথা শুনে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা রেখা বেগম জ্ঞান হারান। পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম।
সেই রাতেই রবিউলকে খুঁজতে বের হন স্বজনেরা। কিন্তু রবিউলের ফোন বন্ধ পান তাঁরা। কোথাও তাঁর সন্ধান মেলে না। পর দিন রবিউলকে তাঁর স্বজনেরা খুঁজে পান রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
২০২০ সালের ৬ অক্টোবর মধ্য রাতে রেখা বেগমকে এমন ফোন দিয়ে তাঁর মেয়ের জামাই লস্কার রবিউল ইসলামকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল খুনি। খুনির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হোটেল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মরদেহ পরের দিন আমিন বাজারের ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের যমুনা ন্যাচারাল পার্কের সামনে ঝোপের ভেতর থেকে উদ্ধার করে সাভার থানা-পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় সাভার থানা। খবর পেয়ে মর্গে গিয়ে রবিউল ইসলামের মরদেহ শনাক্ত করেন রবিউল ইসলামের স্ত্রী হাফিজা বেগম এবং তার ভাই ইরান লস্কার।
রবিউল ইসলাম মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স পল্লির ১ নম্বর গেটের সামনে ‘শাহ হোটেল’ নামে একটি খাবারের দোকান করতেন। পরিবার নিয়ে দোকানের পাশেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ৫ / ৪৭–ক বাসায় থাকতেন। ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে তিনি আশুলিয়ার জামগড়ায় তার ভাগনেদের সঙ্গে দেখা করার জন্য নিজের হোটেল থেকে বের হন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি তাঁর ভাগনে নাজমুল ইসলাম জুয়েল ও হাসিব বিশ্বাসের সঙ্গে সেখানেই দেখা করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা শেষ করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আশুলিয়া ইপিজেড ইসলামিয়া হোটেলের মালিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হন।
ভাগনে নাজমুল ইসলাম জুয়েল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামা রিকশায় করে আশুলিয়া ইপিজেডের দিকে যান। সেখানে ইসলামিয়া হোটেলের মালিকের সঙ্গে দেখা করে মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবে তিনি আর বাসায় যাননি। তাঁকে না পেয়ে ওই দিন রাতেই আমরা খুঁজতে বের হই। তবে তাঁকে রাতে কোথাও খুঁজে পেলাম না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশুলিয়া ইপিজেড বসে ওই দিন রাত ৭টা ১০ মিনিটের দিকে রবিউল ইসলাম তাঁর নিজের মোবাইল ফোন থেকে স্ত্রী হাফিজা বেগমকে ফোন দেন। ফোনটি রিসিভ করে মেয়ে হাবিবা। হাবিবার বয়স ছিল তখন ৯ বছর। ওই দিন রাতে বাবার সঙ্গে ফোনের কথোপকথনের বিষয়ে হাবীবা বলে, ‘আমি বলি, আব্বু সারা দিন তোমাকে দেখি না, তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। আব্বুও আমাকে বলেছিল, মা, আমি আসছি।’
মেয়ের সঙ্গে কথোপকথনের পর পরিবারের আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি রবিউলের। এর মধ্যে তার স্ত্রী কয়েকবার ফোন দিয়ে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পান। অনেক রাত হলেও তিনি বাসায় ফেরেননি বলে, পরিবার তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে থাকে। হঠাৎ ওই দিন রাত ১২টার দিকে রবিউল ইসলামের মোবাইল ফোন থেকে তার শাশুড়ি রেখা বেগমরে মোবাইল ফোন নম্বরে একটি ফোন আসে। হঠাৎ নিখোঁজ রবিউলের ফোন দেখে দ্রুত ফোনটি রিসিভ করেন। ফোন রিসিভ করেই তিনি প্রশ্ন করেন, রবিউল তুই কই? তবে ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসে না। কিছুক্ষণ পর রেখা বেগমকে ফোনদাতা প্রশ্ন করেন, রবিউল তোমার কী হয়? রেখা বেগম তাঁকে বলে, ‘আমার ছেলে।’ এরপর ফোনদাতা বলেন, রবিউল মারা গেছে, তাঁর লাশ হেমায়েতপুরে রাখা হবে। সেখান থেকে নিয়ে নিও।
রেখা বেগম রবিউলের আপন খালা ও শাশুড়ি। খালাতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন রবিউল। মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে পল্লিতে রবিউলের সঙ্গেই তিনি থাকতেন। গত মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে কথা হয় রেখা বেগমের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি তখন বিশ্বাস করিনি, রবিউলকে তাঁরা মেরে ফেলেছে। আমি ভাবছি কেউ আমার সঙ্গে মজা করে। কিন্তু আমার বিশ্বাস অসত্য হয়েছে। ঠিকই তারা রবিউলকে মেরে আমাকে ফোন দিয়েছে।’
রবিউল হত্যার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাফিজা বেগম সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ঢাকা জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যার ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ একটি নীল রঙের বাসের সন্ধান পায়। নিরালা সুপার নামের ওই বাসটি মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে তিন দিনের জন্য ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিল ৮ / ১০ জনের একটি চক্র। চক্রের সবাই সাভার, আশুলিয়া ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। এই চক্রের প্রধান বশির মোল্লা। তিনি থাকেন আশুলিয়া তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। চক্রটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন—হাফিজ শেখ, আনোয়ার হোসেন, বড় আলামিন, জুয়েল, নাঈম ইসলাম, আসলাম, টিটো খান, আজাদ হোসেন জাবেদ, আ. রহিম, জসিম মিয়া, আমির হোসেন, নাজমুল ও তপন মন্ডল।
২০২০ সালের ৪ অক্টোবর চক্রের চালক নাজমুল ও হেলপার তপন বাসটি নিয়ে সাভারের নবীনগর যায়। নবীনগর থেকে বাসটিতে চক্রের অন্য সদস্যরা ওঠেন। তাদের মধ্যে কেউ যাত্রী সাজেন, কেউ বাসটির স্টাফ সেজে যাত্রী তুলতে তুলতে পাটুরিয়া ঘাটের দিকে যান। পর দিন ৫ অক্টোবর তারা ফের বিভিন্ন বাস স্টপেজ থেকে যাত্রী তুলে ঢাকার দিকে রওনা হয়। বাসটি গাবতলী যাবে বলে যাত্রী তুলতে থাকে। সাভারের নবীনগর থেকে রবিউল ইসলাম ঢাকায় আসবে বলে ওই বাসে উঠে বসেন।
পিবিআই জানায়, রবিউলকে নিয়ে ওই বাসটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় চক্রের দলনেতা বশিরকে মারধর করে তার কাছ থেকে নগদ টাকা, গলার স্বর্ণের চেইন নিতে চায়। এ সময় রবিউল বাধা দিলে চক্রের চার-পাঁচজন সদস্য তাঁকে বাসের মেঝেতে ফেলে মারধর করে। একপর্যায়ে তাঁকে লোহার হুইল রেঞ্জ দিয়ে পুরুষাঙ্গ ও মাথায় সজোরে আঘাত করে। এতে রবিউল বাসের মধ্যেই মারা যান। এরপর তাঁর মরদেহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যমুনা ন্যাচারাল পার্কের সামনের ঝোপে ফেলে রাখে। হত্যার পর খুনিরা তাঁর শাশুড়িকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই। অভিযোগপত্রে ওই ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সালে ইমরান বলেন, আসামিরা প্রত্যেকেই ডাকাত। তারা বাস ভাড়া করে ডাকাতি করে, ছিনতাই করে যাত্রীদের মারধর করে নামিয়ে দেয়, আবার কখনো হত্যা করে। এরা প্রত্যেকেই ডাকাত।
তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতি মামলাসহ সাত-আটটি মামলা রয়েছে। তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে রবিউলের পরিবার এখনো মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স পল্লির একটি ছোট টিনশেড ঘরে থাকেন। স্ত্রী হাফিজা বেগম, দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং হাফিজার মা রেখা বেগমের সংসারে এখন অভাব। রবিউলের সেই হোটেলটিও নেই। হোটেলটি না চালাতে পেরে সেটির আসবাবপত্র, হাঁড়িপাতিল অপর এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দিয়েছে রবিউলের স্ত্রী। তা থেকে কিছু টাকা পান তারা। তা দিয়ে তাঁর পরিবার কোন রকম চলে।
রবিউলের স্ত্রী হাফিজা বেগম বলেন, ‘বড় ছেলে আমির হামজা হেফজখানায় পড়েছে। এরপর মেয়ে হাবীবা ও ছোট ছেলেকেও একটা মাদ্রাসায় দিয়েছি। তবে সংসার চালানো দায় এখন। আমি অনেক রোগে ভুগছি, চিকিৎসাও করাতে পারছি না।’
‘রবিউল মারা গেছে, তাঁর লাশ হেমায়েতপুর রাখা হবে। সেখান থেকে লাশ নিয়ে নিয়েন।’ একদিন মধ্যরাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি হোটেল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের শাশুড়িকে ফোন করে এতটুকু কথা বলে ফোন রেখে দেন। অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোনে এমন কথা শুনে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা রেখা বেগম জ্ঞান হারান। পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম।
সেই রাতেই রবিউলকে খুঁজতে বের হন স্বজনেরা। কিন্তু রবিউলের ফোন বন্ধ পান তাঁরা। কোথাও তাঁর সন্ধান মেলে না। পর দিন রবিউলকে তাঁর স্বজনেরা খুঁজে পান রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
২০২০ সালের ৬ অক্টোবর মধ্য রাতে রেখা বেগমকে এমন ফোন দিয়ে তাঁর মেয়ের জামাই লস্কার রবিউল ইসলামকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল খুনি। খুনির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হোটেল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মরদেহ পরের দিন আমিন বাজারের ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের যমুনা ন্যাচারাল পার্কের সামনে ঝোপের ভেতর থেকে উদ্ধার করে সাভার থানা-পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় সাভার থানা। খবর পেয়ে মর্গে গিয়ে রবিউল ইসলামের মরদেহ শনাক্ত করেন রবিউল ইসলামের স্ত্রী হাফিজা বেগম এবং তার ভাই ইরান লস্কার।
রবিউল ইসলাম মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স পল্লির ১ নম্বর গেটের সামনে ‘শাহ হোটেল’ নামে একটি খাবারের দোকান করতেন। পরিবার নিয়ে দোকানের পাশেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ৫ / ৪৭–ক বাসায় থাকতেন। ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে তিনি আশুলিয়ার জামগড়ায় তার ভাগনেদের সঙ্গে দেখা করার জন্য নিজের হোটেল থেকে বের হন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি তাঁর ভাগনে নাজমুল ইসলাম জুয়েল ও হাসিব বিশ্বাসের সঙ্গে সেখানেই দেখা করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা শেষ করে সন্ধ্যা ৬টার দিকে আশুলিয়া ইপিজেড ইসলামিয়া হোটেলের মালিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হন।
ভাগনে নাজমুল ইসলাম জুয়েল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামা রিকশায় করে আশুলিয়া ইপিজেডের দিকে যান। সেখানে ইসলামিয়া হোটেলের মালিকের সঙ্গে দেখা করে মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবে তিনি আর বাসায় যাননি। তাঁকে না পেয়ে ওই দিন রাতেই আমরা খুঁজতে বের হই। তবে তাঁকে রাতে কোথাও খুঁজে পেলাম না।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশুলিয়া ইপিজেড বসে ওই দিন রাত ৭টা ১০ মিনিটের দিকে রবিউল ইসলাম তাঁর নিজের মোবাইল ফোন থেকে স্ত্রী হাফিজা বেগমকে ফোন দেন। ফোনটি রিসিভ করে মেয়ে হাবিবা। হাবিবার বয়স ছিল তখন ৯ বছর। ওই দিন রাতে বাবার সঙ্গে ফোনের কথোপকথনের বিষয়ে হাবীবা বলে, ‘আমি বলি, আব্বু সারা দিন তোমাকে দেখি না, তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। আব্বুও আমাকে বলেছিল, মা, আমি আসছি।’
মেয়ের সঙ্গে কথোপকথনের পর পরিবারের আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি রবিউলের। এর মধ্যে তার স্ত্রী কয়েকবার ফোন দিয়ে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পান। অনেক রাত হলেও তিনি বাসায় ফেরেননি বলে, পরিবার তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে থাকে। হঠাৎ ওই দিন রাত ১২টার দিকে রবিউল ইসলামের মোবাইল ফোন থেকে তার শাশুড়ি রেখা বেগমরে মোবাইল ফোন নম্বরে একটি ফোন আসে। হঠাৎ নিখোঁজ রবিউলের ফোন দেখে দ্রুত ফোনটি রিসিভ করেন। ফোন রিসিভ করেই তিনি প্রশ্ন করেন, রবিউল তুই কই? তবে ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসে না। কিছুক্ষণ পর রেখা বেগমকে ফোনদাতা প্রশ্ন করেন, রবিউল তোমার কী হয়? রেখা বেগম তাঁকে বলে, ‘আমার ছেলে।’ এরপর ফোনদাতা বলেন, রবিউল মারা গেছে, তাঁর লাশ হেমায়েতপুরে রাখা হবে। সেখান থেকে নিয়ে নিও।
রেখা বেগম রবিউলের আপন খালা ও শাশুড়ি। খালাতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন রবিউল। মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে পল্লিতে রবিউলের সঙ্গেই তিনি থাকতেন। গত মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে কথা হয় রেখা বেগমের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি তখন বিশ্বাস করিনি, রবিউলকে তাঁরা মেরে ফেলেছে। আমি ভাবছি কেউ আমার সঙ্গে মজা করে। কিন্তু আমার বিশ্বাস অসত্য হয়েছে। ঠিকই তারা রবিউলকে মেরে আমাকে ফোন দিয়েছে।’
রবিউল হত্যার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাফিজা বেগম সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ঢাকা জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। হত্যার ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ একটি নীল রঙের বাসের সন্ধান পায়। নিরালা সুপার নামের ওই বাসটি মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে তিন দিনের জন্য ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছিল ৮ / ১০ জনের একটি চক্র। চক্রের সবাই সাভার, আশুলিয়া ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। এই চক্রের প্রধান বশির মোল্লা। তিনি থাকেন আশুলিয়া তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। চক্রটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন—হাফিজ শেখ, আনোয়ার হোসেন, বড় আলামিন, জুয়েল, নাঈম ইসলাম, আসলাম, টিটো খান, আজাদ হোসেন জাবেদ, আ. রহিম, জসিম মিয়া, আমির হোসেন, নাজমুল ও তপন মন্ডল।
২০২০ সালের ৪ অক্টোবর চক্রের চালক নাজমুল ও হেলপার তপন বাসটি নিয়ে সাভারের নবীনগর যায়। নবীনগর থেকে বাসটিতে চক্রের অন্য সদস্যরা ওঠেন। তাদের মধ্যে কেউ যাত্রী সাজেন, কেউ বাসটির স্টাফ সেজে যাত্রী তুলতে তুলতে পাটুরিয়া ঘাটের দিকে যান। পর দিন ৫ অক্টোবর তারা ফের বিভিন্ন বাস স্টপেজ থেকে যাত্রী তুলে ঢাকার দিকে রওনা হয়। বাসটি গাবতলী যাবে বলে যাত্রী তুলতে থাকে। সাভারের নবীনগর থেকে রবিউল ইসলাম ঢাকায় আসবে বলে ওই বাসে উঠে বসেন।
পিবিআই জানায়, রবিউলকে নিয়ে ওই বাসটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় চক্রের দলনেতা বশিরকে মারধর করে তার কাছ থেকে নগদ টাকা, গলার স্বর্ণের চেইন নিতে চায়। এ সময় রবিউল বাধা দিলে চক্রের চার-পাঁচজন সদস্য তাঁকে বাসের মেঝেতে ফেলে মারধর করে। একপর্যায়ে তাঁকে লোহার হুইল রেঞ্জ দিয়ে পুরুষাঙ্গ ও মাথায় সজোরে আঘাত করে। এতে রবিউল বাসের মধ্যেই মারা যান। এরপর তাঁর মরদেহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যমুনা ন্যাচারাল পার্কের সামনের ঝোপে ফেলে রাখে। হত্যার পর খুনিরা তাঁর শাশুড়িকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পিবিআই। অভিযোগপত্রে ওই ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সালে ইমরান বলেন, আসামিরা প্রত্যেকেই ডাকাত। তারা বাস ভাড়া করে ডাকাতি করে, ছিনতাই করে যাত্রীদের মারধর করে নামিয়ে দেয়, আবার কখনো হত্যা করে। এরা প্রত্যেকেই ডাকাত।
তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতি মামলাসহ সাত-আটটি মামলা রয়েছে। তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে রবিউলের পরিবার এখনো মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স পল্লির একটি ছোট টিনশেড ঘরে থাকেন। স্ত্রী হাফিজা বেগম, দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং হাফিজার মা রেখা বেগমের সংসারে এখন অভাব। রবিউলের সেই হোটেলটিও নেই। হোটেলটি না চালাতে পেরে সেটির আসবাবপত্র, হাঁড়িপাতিল অপর এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দিয়েছে রবিউলের স্ত্রী। তা থেকে কিছু টাকা পান তারা। তা দিয়ে তাঁর পরিবার কোন রকম চলে।
রবিউলের স্ত্রী হাফিজা বেগম বলেন, ‘বড় ছেলে আমির হামজা হেফজখানায় পড়েছে। এরপর মেয়ে হাবীবা ও ছোট ছেলেকেও একটা মাদ্রাসায় দিয়েছি। তবে সংসার চালানো দায় এখন। আমি অনেক রোগে ভুগছি, চিকিৎসাও করাতে পারছি না।’
মূল সড়কে অটোরিকশা চালানোর দাবিতে রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় চালকেরা বিক্ষোভ করলে মারধরের শিকার হয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা তাঁদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেন। আজ শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে...
২২ মিনিট আগেকুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাড়ছে। বিষমুক্ত এই পদ্ধতিতে ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া চাষাবাদে খরচ কম লাগছে।
১ ঘণ্টা আগেরংপুর বিভাগীয় সনাতনী সমাবেশস্থল পরিবর্তন করা হয়েছে। রংপুর জেলা স্কুল মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মাহীগঞ্জ কলেজ মাঠে আয়োজন করা হচ্ছে...
২ ঘণ্টা আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর অন্যতম ‘সমন্বয়ক’ সোহেল রানাকে ‘ভুয়া’ বলে আখ্যায়িত করেছে ছাত্রদল। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে সোহেল রানাকে হাতুড়িপেটার অভিযোগও অস্বীকার করেছে রাজশাহী নগর ছাত্রদল...
২ ঘণ্টা আগে