সাংবাদিক নির্মল সেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮: ৫৩
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১১: ১৬

মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক নির্মল সেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৮ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় নির্মল সেন স্মৃতি সংসদ এক স্মরণসভার আয়োজন করেছে। ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি রাজধানী ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে মারা যান।

স্কুলজীবন থেকে নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মাধ্যমে। কলেজজীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। দীর্ঘদিন তিনি শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নির্মল সেন সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৬৯ সালে আদমজীতে শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল নামে রাজনৈতিক দল গড়ে তোলেন নির্মল সেন। এই দলের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা-উত্তর সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে তোলা আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে নির্মল সেন ছিলেন উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে এ দেশের সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় লেখা তাঁর কলাম ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ তখন তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

১৯৫৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্য দিয়ে নির্মল সেন তাঁর সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। তারপর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে নির্মল সেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও ১৯৭২ থেকে ৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি অতিথি শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতাও করতেন।

নির্মল সেন ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দীঘিরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত। মায়ের নাম লাবণ্যপ্রভা। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নির্মল সেন পঞ্চম। নির্মল সেনের বাবা সুরেন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের গণিতের শিক্ষক ছিলেন। এর আগে সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত ঢাকার ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করতেন।

দেশভাগের পর নির্মল সেনের বাবা-মা অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় চলে যান। জন্মভূমির প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার কারণে নির্মল সেন এ দেশে থেকে যান। নির্মল সেন বড় হয়েছেন ঝালকাঠি জেলায় তাঁর পিসির বাড়িতে। তিনি ঝালকাঠি জেলার কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও মাস্টার্স পাস করেন।

লেখক হিসেবেও নির্মল সেনের যথেষ্ট সুনাম আছে। তার লেখা ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’, ‘মানুষ সমাজ রাষ্ট্র’, ‘বার্লিন থেকে মস্কো’, ‘মা জন্মভূমি’, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’, ‘আমার জীবনে ৭১-এর যুদ্ধ’, ‘আমার জবানবন্দি’ উল্লেখযোগ্য।

নির্মল সেন ২০০৩ সালে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাজনীতিক ও পেশাজীবীদের আর্থিক সহায়তায় তাঁকে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ থ্রি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ৫৯ দিন চিকিৎসার পর টাকা না থাকায় চিকিৎসা শেষ না করেই তাঁকে দেশে ফিরে আসতে হয়।

২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতে হঠাৎ করে ঠান্ডা ও উচ্চরক্তচাপের কারণে নির্মল সেন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরদিন ২২ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

১৮ দিন চিকিৎসার পর ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নির্মল সেন মারা যান। মৃত্যুর আগে নির্মল সেন তাঁর দেহ পিজি হাসপাতালে দান করে যান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত