Ajker Patrika

তুলে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর সাংবাদিক শামসকে আদালতে নিল পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৩: ৩২
তুলে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর সাংবাদিক শামসকে আদালতে নিল পুলিশ

ভোরে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে আদালতে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা হয়েছে। তবে বুধবার রাতে রমনা থানায় হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শামসকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে। রমনা থানার এই মামলার প্রধান আসামি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। 

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১০টার দিকে সকালে তাঁকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয় বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক শামসকে আদালতে আনা হয়েছে। তাঁকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে।’

তবে মামলা কোন আদালতে এবং কখন শুনানি হবে, সেটা এখনো নির্ধারিত হয়নি। এমনকি সংশ্লিষ্ট সাধারণ নিবন্ধন শাখায় মামলার কোনো কাগজপত্র দাখিল হয়নি।

প্রথম আলোর আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার জানান, রমনা থানার মামলায় শামসকে আদালতে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা জামিনের আবেদন করবেন।

এর আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্য পরিচয় দিয়ে মামলার কথা বলে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সাভার প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গত বুধবার ভোর ৫টার দিকে আশুলিয়ায় আমবাগানের ওই বাসায় সিআইডির অভিযানের সময় সঙ্গে ছিলেন আশুলিয়া থানার (উপপরিদর্শক) এসআই রাজু মণ্ডল।

শামসকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে এসে দুপুরের পরে তেজগাঁও থানায় এই মামলা করেন মো. গোলাম কিবরিয়া। এজাহারকারী ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা। মামলায় শামসুজ্জামান শামস ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ করেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়। একই সঙ্গে উক্ত সংবাদ দৈনিক প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করে। ওই সংবাদে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, সেই শিশুর নাম জাকির হোসেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম? বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়; যা দেশ-বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাঁদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালি গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে এই সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে ৭১ টিভি চ্যানেলসহ তাদের অনলাইন পোর্টালেও প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে।

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, যে শিশুর কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। নাম-পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পত্রিকায় বলা হয়, শিশুটির নাম জাকির হোসেন, কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই শিশুর নাম সবুজ আহমেদ। তার বাড়ি সাভার থানার কুরগাঁওপাড়ায়। শিশুটির বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা মুন্নী বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে মেজ সন্তান সবুজ।

প্রথম আলোর তথ্যে বলা হয়েছে, সে দিনমজুর। কিন্তু সাত বছরের শিশু সবুজ আহমেদ প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং স্কুল শেষে মাঝে মাঝে ফুল বিক্রি করে। শামসুজ্জামানের পাঠানো প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ-মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ প্রকৃতপক্ষে ওই শিশু এ ধরনের কোনো কথা বলেনি।

এজাহারে ওই শিশুকে টাকা দিয়ে তার ছবি তোলা হয় জানিয়ে বলা হয়, ‘শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এই ছবি তুলেছে। এতে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই মিথ্যা সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন করে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবসে এমন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ এবং বিশ্বব্যাপী প্রচার করায় বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি ক্ষুব্ধ। এমন পরিস্থিতিতে এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা অনুমতি ব্যতিরেকে মিথ্যা তথ্য-উপাত্তসহ মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর উপক্রম ও সহায়তার অপরাধ করেছে।’

এ ছাড়া একই ঘটনায় গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে শামসুজ্জামান শামসকেও আসামি করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন আইনজীবী মশিউর মালেক। 

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত