জনমুখী পুলিশ সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত

বিজ্ঞপ্তি  
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৪০
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ৪৫
জনমুখী পুলিশ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত। ছবি: সংগৃহীত

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) গতকাল শনিবার ‘জনমুখী পুলিশ সেবা নিশ্চিতকল্পে পুলিশ কমিশন গঠন ও অন্যান্য সংস্কারের প্রস্তাব’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনার এসআইপিজির চলমান জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর ওপর গবেষণা উদ্যোগের একটি অংশ। মূলত জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে এ আয়োজন করা হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা সরাসরি অংশ নেওয়ার মাধ্যমে আলোচনায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে।

বিশেষ অতিথি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.) প্রস্তাবিত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি, ৮ আগস্টের পর আমি পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলি, এই পুলিশ কমিশন গঠন তাঁদের সেই সময়ের দাবি ছিল, তারা আর রাজনীতিকরণের অংশ হতে চায় না। এক “দানবিক পুলিশের” থেকে “মানবিক পুলিশ” গঠনের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন অপরিহার্য। পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া পুলিশ কমিশনের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।’

সেমিনারের সঞ্চালনা করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এসআইপিজি পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম. হক, যিনি তাঁর বক্তব্যে দেশের পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং শিক্ষার্থীরা এই পরিবর্তনে কী ভূমিকা পালন করতে পারে তা তুলে ধরেন।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল ইসলাম এবং পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং সোসিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাকিয়া সুলতানা এ সেমিনারে দেশের পুলিশ সংস্কারের একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ এবং একটি সম্ভাব্য পুলিশ কমিশন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তাঁরা দেশের কমিউনিটিতে পুলিশদের সরাসরি অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন যাতে একটি সত্যিকারের জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থা তৈরি করা যায়। পুলিশের ওপর একধরনের আস্থার অভাব আমাদের এসআইপিজির সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে মাত্র ১১ শতাংশ মানুষের পুলিশের ওপরে আস্থা আছে।’

রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আমরা পুলিশ কমিশন গঠনের ব্যাপারটিকে সাধুবাদ জানাই। এর মাধ্যমে আমরা বিকেন্দ্রীকরণের পথে এগিয়ে যাব এবং এর ফলে পুলিশের রাজনীতিকীকরণও কমবে।’ এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, ‘আপনারা যে তিন ধাপের নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তনের কথা বলেছেন, আমি মনে করি এটি পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে আমাদের পুলিশের মধ্যে বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের একজন কনস্টেবল যদি যোগ্য, মেধাবী এবং বিশ্বস্ত হন, তাহলে তাঁকে সর্বোচ্চ পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ কেন দেওয়া হবে না? আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। জনগণের জন্য যা ভালো, তা আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে স্বাগত জানাই।’

বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘মনোবল ভেঙে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি আমাদের সংস্কারের একটি অংশ হিসেবে গুরুত্ব দিতে হবে।’

অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. মাহবুবুল করিম প্যানেলের শেষ বক্তা হিসেবে বলেন, ‘আমরা পুলিশ কমিশন গঠনের পথে যেতে পারি, তবে পুলিশ সংস্কারকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। সকল সংস্কার প্রচেষ্টাকে একই ধারায় বিবেচনা করা জরুরি, কারণ পুলিশ আমাদের সমাজের অংশ। আমাদের একটি জাতীয় শুদ্ধি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন।’

সেশনের সমাপনী বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, তিনি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে গবেষণা ও সংলাপ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, জনগণ সভ্যতা এবং দায়িত্বশীলতার চর্চা না করা পর্যন্ত কোনো জাতি প্রকৃত উন্নয়ন অর্জন করতে পারে না। তা ছাড়া, পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ নৈতিক এবং নীতিগত মান বজায় রাখতে হবে। তারা অবশ্যই যাদের সেবা করছেন—এই দেশের নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা উচিত এবং বোঝা উচিত যে তাদের কাজ মূলত এই জাতির মানুষের সহায়তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত