Ajker Patrika

যেখানে ৯৩ বছর ধরে চলছে অবিরাম কোরআন তিলাওয়াত

ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ২১
যেখানে ৯৩ বছর ধরে চলছে অবিরাম কোরআন তিলাওয়াত

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধবিগ্রহ, রাজনৈতিক অস্থিরতা—অনেক কিছুই হয়েছে এই ৯ দশকে। কিন্তু থামেনি এই কোরআন তিলাওয়াত। একজন পড়ে উঠে গেল অন্যজন কোরআন নিয়ে বসছেন। এভাবেই টানা ৯৩ বছর ধরে চলছে অবিরাম কোরআন তিলাওয়াত। 

কোরআনের আয়াতের সেই সুমধুর সুর সেই কবরের চারপাশে প্রতিনিয়তই ধ্বনিত হয়েছে। কবরটি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর। ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল ৬৫ বছর বয়সে তিনি মারা গেলে নিজ বাড়ির মসজিদ চত্বরে সমাহিত করা হয় তাঁকে। সেই সময় থেকেই তাঁর কবরের পাশে বসে এই তিলাওয়াত চলছে।

নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন। অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

জানা গেছে,  ১৯১১ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে নবাব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পিরিয়াল কাউন্সিলের সভায় তিনি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উপস্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা দিলে তিনি নিজ জমিদারির একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫ হাজার টাকা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল নওয়াব আলী চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিনেট ভবনের নাম ‘সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন’ নামকরণ করে। নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

ধনবাড়ী নওয়াব জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুফতি ইদ্রিস হোসাইন বলেন, মৃত্যুর আগেই নওয়াব আলী চৌধুরী মসজিদের কাছে তাঁর কবরের জায়গা নির্ধারণ করেন। প্রতিদিন পাঁচজন হাফেজ কোরআন তিলাওয়াতের দায়িত্বে থাকেন। তাঁরা পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টাই তিলাওয়াত করেন। 

মাওলানা মুফতি ইদ্রিস হোসাইন জানান,  বর্তমানে হাফেজ আব্দুস সামাদ ছাড়াও মো. কামরুজ্জামান, আবু হানিফ ও হেদায়েত হোসেন এবং মো. ওয়ারেজ আলী নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াতের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁরা কেউ অসুস্থ হলে অথবা ছুটিতে বাড়িতে গেলে মসজিদের পাশেই হাফেজখানা থেকে ছাত্রদের দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা হয়।  এখানে কোরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি তিলাওয়াতকারীরা হিফজখানায় শিক্ষকতা করেন। আর সেখান থেকেই তাঁদের সম্মানী দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, নওয়াব আলীর কবরের পাশে একজন কোরআন তিলাওয়াত করছেন। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছে। মসজিদের পাশে তার কবরস্থানে চলছে অবিরাম কোরআন তিলাওয়াত।

ধনবাড়ী এলাকার মুক্তাদির মো. আবদুস সামাদ ও আছেদ আলী জানান, ধনবাড়ীর এই নওয়াব আলী চৌধুরীর কবরের পাশে অবিরাম কোরআন তিলাওয়াতের বিষয়টি দেখতে অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসেন।

মসজিদের মুসুল্লি শাহাদত হোসেন জগলু জানান, `আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখি এখানে কোরআন পাঠ চলছে। আমার বাবাও এটাই দেখেছেন বলে জানিয়েছেন আমাকে।' 

মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ধনবাড়ী শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ আবু এহসান বলেন, `আমি ছোটবেলা থেকেই এই কোরআন পাঠ দেখে আসছি। এটি কোনো দিন বন্ধ হয়নি।'

নওয়াব আলী চৌধুরীর নাতনিজামাই আকবর উদ্দিন আহমেদ বলেন, মৃত্যুর আগে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী তাঁর কবরের জন্য যে জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী এই কোরআন পাঠ চলছে। এটি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ভিসা নীতি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে: বলছেন কূটনীতিকেরা

ফাইনালে ভারতের ‘যম’কে খেলানো নিয়ে দোটানায় নিউজিল্যান্ড

বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ছাত্রদল ও এনসিপি

নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্‌রীরের মিছিল, পুলিশের টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ

ভারত ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত