দুর্যোগে নারীর সুরক্ষায় সর্বোত্তম পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৩: ৫৫
Thumbnail image

যেকোনো দুর্যোগে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি বরাবরই থাকে অবহেলিত। অথচ এ সময় নারীরা শারীরিক, মানসিক এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা ও সুরক্ষা পাওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখেন। ন্যূনতম সচেতনতা-সংবেদনশীলতার অভাব এবং পাশাপাশি জরুরি সেবা-সহায়তা না পাওয়ার কারণে তাঁরা দীর্ঘ মেয়াদে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। 

এ কারণে দুর্যোগে যেকোনো ধরনের ত্রাণ ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনার সময় নারীর সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। 

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটির সদস্যরা এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। 

আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তারের সভাপতিত্বে এবং ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি কর্মকর্তা খাদিজাতুল কুবরা। 

তিনি বলেন, এবারের পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫১ লাখের বেশি। যেকোনো দুর্যোগে নিম্ন আয়ের কিংবা প্রান্তিক মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে তাঁদের মধ্যে শিশু ও নারীরা আরও বেশি দুর্ভোগে পড়েন। এবারের বন্যায় নারীরা গবাদিপশু ও জিনিসপত্র রক্ষার জন্য অনেকে জন্য রাতের পর রাত ছাদে এবং নৌকায় কাটান। শিশুরা ভেজা কাপড়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে নারীদের মাসিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরিষ্কার পানি এবং স্যানিটারি প্যাডের অভাবে তাঁরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটান। প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা বা চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল থাকায় গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়নি। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর পরিবেশও ছিল খুবই প্রতিকূল। সীমিত জায়গা, মেয়েদের পৃথক টয়লেট না থাকায় এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে এটা নারীদের নিরাপত্তা এবং মর্যাদার ওপর ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ফেলে। 

ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, এ ধরনের দুর্যোগ পরিস্থিতি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় কমিউনিটি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতায় নারী ও কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে ব্যাপকভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে।

শামীমা আক্তার বলেন, নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য টেকসই এবং কার্যকরী সেবা প্রদানের জন্য গবেষণার ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 

কমিটির সদস্য মথুরা ত্রিপুরা বলেন, চিকিৎসকেরা মনে করছেন পূর্বাঞ্চলে এবারের বন্যায় ভয়, সম্পদ হানির কারণে মন খারাপ, পুষ্টিকর খাদ্য ও যত্নের অভাব এবং চিকিৎসাসেবা ব্যাহত ওই অঞ্চলের নারীদের গর্ভপাত হয়েছে। তিনি দুর্যোগে গর্ভবতী নারীর জরুরি সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

ফিরোজা বেগম বলেন, কখনো কখনো বেসরকারিভাবে বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ দেখা গেলেও নারীর জন্য দুর্যোগ পরবর্তী সমন্বিতভাবে কোনো সরকারি-বেসরকারি সেবা (শারীরিক, মানসিক, প্রজননস্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সেবা) লক্ষ্য করা যায় না। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দুর্যোগে একজন নারীর শারীরিক, আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতির বিষয়টিও উপস্থিত থাকে। কিন্তু সেটাকে অদৃশ্য করে রাখা হয়। এ কারণে দুর্যোগে ও দুর্যোগ পরবর্তী সংকটকে চিহ্নিত করে সেসব নিরসনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নারীবান্ধব ও সংবেদনশীল পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। 

আয়োজকদের পক্ষ থেকে মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, দেশের ৫০টির বেশি জেলায় ১৫ অক্টোবর উদ্‌যাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও সারা দেশে র‍্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদ্‌যাপন করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত