শাওনকে মিছিলে ডাকা নেতার নাম নেই পুলিশের মামলায়

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯: ৫৮

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষে নিহত যুবদল কর্মী শাওন (২১) এখন অন্যতম আলোচনার কেন্দ্র। সংঘর্ষের দিন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমান সাদেকের মিছিলে অগ্রভাগেই ছিলেন শাওন। একই সঙ্গে পুলিশের দিকে ঢিল ছোড়া ও সংঘর্ষে সামনের সারিতে থাকার একাধিক ছবি, ভিডিও প্রথম থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সয়লাব। কিন্তু যেই নেতার হাত ধরে মিছিলে এসেছিলেন শাওন এবং যার মিছিলে থেকেই যুবদল কর্মী তকমা জুটেছে, সেই নেতাকেই সংঘর্ষের ঘটনায় মামলায় রাখা হয়নি।

গত ২ সেপ্টেম্বর পুলিশের উপপরিদর্শক কামরুজ্জামানের দায়ের করা মামলায় ৭১ জন নামীয় আসামির মধ্যে নেই সাদেকুর রহমান সাদেকের নাম। অথচ তাঁর নেতৃত্বে আসা মিছিলের কর্মী শাওনকে নিয়েই পুরো দেশ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের মতে, সংঘর্ষে না জড়িয়েও কয়েকজন মামলার আসামি হয়েছেন, আবার সংঘর্ষের নেতৃত্ব দিয়েও মামলার আসামি হওয়া থেকে বেঁচে গেছেন অনেকে। 

গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় র‍্যালির আয়োজন করে দলটির জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি ডিআইটি এলাকা থেকে ছাড়িয়ে দুই নম্বর রেলগেটের দিকে অগ্রসর হতেই পুলিশের বাধার মুখে পরে। সে সময় পুলিশের সঙ্গে প্রথমে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়। পরে মিছিল নিয়ে এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় সংঘর্ষ। সেখানে সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যুবদল কর্মী শাওন। 

এই মৃত্যুর পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। প্রথমে শাওনের পরিচয় নিয়ে দোটানা চললেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় শাওনকে। সেখানে দেখা যায় শাওন পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ঢিল ছুড়ছেন সামনের সারিতে থেকে। বেশ আগ্রাসী ভাবেই ছিলেন সংঘাতের সামনের সারিতে। এ ছাড়া একটি মিছিলের অগ্রভাগে থাকার ছবি প্রকাশিত হলে বিএনপির নেতা–কর্মীরা শনাক্ত করেন যে এটি কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমান সাদেকের মিছিল। আর এই সাদেকের ডাকেই বক্তাবলী থেকে ছুটে এসেছিলেন শাওন।

সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এতে আসামি করা হয় আব্দুস সাত্তার, মজিবুর রহমান, রঞ্জন কুমার দেবনাথ, রাজিব, জনি, বাদল, আবুল কালাম ভূঁইয়া, রিমন, ইমন, সোহানসহ ৭১ জন নামীয় এবং অজ্ঞাত ৯০০ জনকে। নামীয় আসামিদের মধ্যে পাওয়া যায়নি যুবদল নেতা সাদেকুর রহমান সাদেকের নাম। তবে জেলা ও মহানগর পর্যায়ের বেশ কিছু নেতাদের নাম রয়েছে মামলায়। তবে যেই শাওনকে নিয়ে এত আলোচনা এবং যেই শাওনকে ডেকে আনলেন যুবদল নেতা, তাঁর নাম মামলায় না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা।

মামলার নামের তালিকা খুঁজে দেখা যায় ৭১ জনের মধ্যে কোথাও সাদেকুর রহমান সাদেকের নাম নেই। এই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই বিষয়টি আমার কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। যেই নেতা শাওনকে ডেকে নিয়ে আসল, যেই নেতার মিছিলে থেকে শাওন মৃত্যুবরণ করল, তাকেই তো অন্যতম আসামি করা দরকার ছিল। আমি যদি কাউকে ডেকে আনি আর, সে যদি আমার সাথে আসার কারণে মারা যায় তাহলে এই দায় কী আমি এড়াতে পারতাম?’ 

এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা যুবদলের এক নেতা বলেন, ‘এই মামলায় সাদেক ভাইয়ের মতো অনেক নেতারই নাম আসেনি যারা সেদিন সক্রিয় ছিল। আমি তো চাইব না বিএনপির কেউ মামলার আসামি হোক। কিন্তু সাদেক ভাইয়ের নাম না আসাটা কিছুটা অবাক করার মতো।’ 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা মামলার কথা শুনেই বলেন, ‘আমি মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। এই বিষয়ে মন্তব্য করার রাইটস আমার নেই।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত