মোটরসাইকেলে ৩ জন দেখলে সড়কে আটকে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ৩০
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১৫: ৫৫

আজ বুধবার বেলা ১টা। রামপুরা-বাড্ডা সড়কের বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের সামনের ইউলুপের নিচে, রাস্তার দুই ধারে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থী ও তরুণেরা। সবার হাতে একটা করে লাঠি। দূর থেকেই সেই লাঠি দিয়ে বাস ও অন্যান্য যানবাহনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তাঁরা। হঠাৎ একটি মোটরসাইকেলে হেলমেট ছাড়া তিন যাত্রী দেখে আটকে দিল শিক্ষার্থীদের দলটি।

দেখা গেল, মোটরসাইকেলে বসা পেছনের ব্যক্তিটি হাতজোড় করে কিছু বলছিলেন শিক্ষার্থীদের। এরপর মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দেওয়া হলো।

পরে শিক্ষার্থীদের কাছে গেলে তাঁরা জানালেন, একজন ট্রাফিক যেভাবে সড়কে দায়িত্ব পালন করতেন, তাঁরাও চেষ্টা করছেন। তবে তাঁদের ধরনটা হলো সড়কের নীতিগুলো অনুসরণের বিষয়গুলো দেখছেন তাঁরা। মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি বসতে দেখলে জীবনের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে অন্তত একজনকে নেমে যাওয়ার অনুরোধ করছেন। মূলত যাতে করে কোনো সড়কে যানজট সৃষ্টি না হয় সেটিই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

সরেজমিন দেখা গেছে, আজ ঢাকার বেশির ভাগ ট্রাফিক পয়েন্ট শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে। কোনো মোটরসাইকেলে তিনজন দেখলে তাঁরা বাইক থামিয়ে দিচ্ছেন। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলচালকদেরও  থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মোড়ে, গলিতে তাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা যেন প্রধান সড়কে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্যও ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। বাসের লেন নিয়ন্ত্রণ, অ্যাম্বুলেন্সকে দ্রুত যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া সবই করছেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা রাস্তার দুপাশ ও মাঝে অবস্থান নিয়েছেন। এতে তাঁরা বাসের লেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। অনেকের গায়ে তাঁদের নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড ঝোলানো আছে। অনেকেই স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা।

অনেক জায়গায় পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন, সড়কের আবর্জনা সরিয়ে ফেলছেন। রামপুরা ব্রিজের কাছে হাতিরঝিল পুলিশ বক্সের পেছনে পোড়া ময়লা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। অনেকেই রাস্তার পাশে রাখা ময়লা–আবর্জনা সরিয়ে ফেলছেন।

এদিকে গতকালের তুলনায় সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কে যান চলাচল বেড়েছে। আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মালিবাগ, মৌচাক, খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, কলাবাগান, মিরপুর রোড, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায় যান চলাচল বেশি দেখা গেছে। বাসের সংখ্যা অন্য সময়ের মতো না হলেও, গতকালের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল চলাচলও বেড়েছে।

রামপুরা সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন হামিদুল ইসলাম নামে এক তরুণ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দাবি পূরণ হয়েছে। মানুষ এখন শৃঙ্খলা চাচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই। আমাদের মহল্লার কয়েকজন সকাল থেকেই রাস্তায় আছি। আমরা সময় ভাগ করে কাজ করছি।’

হামিদুলের সঙ্গে থাকা আরেক কিশোর বলেন, ‘আমরা ব্যাটারিচালিত রিকশাকে প্রধান সড়ক থেকে নামিয়ে দিচ্ছি। এগুলো গলিতে চলবে। বাসগুলোকে যেখানে-সেখানে না থামার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই কথা শুনছেন। আবার অনেক বাইকার জোরে চালিয়ে চলে যাচ্ছেন। এ জন্য আমরা রাস্তার দুই ধারে অবস্থান নিয়েছি।’

ঢাকার রাস্তায় স্বাভাবিক সময়ে রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। তবে গত ২২ দিন ঢাকার চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরে বৈষম্যবিরোধীদের ডাকা এক দফায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেনাবাহিনী ক্ষমতার ভার তুলে নিলে এখনো সরকার গঠন হয়নি। এই সময়ের মধ্যে সহিংসতায় পুলিশ ও সাধারণ মানুষসহ প্রাণ গেছে প্রায় পাঁচ শতাধিক। সরকার পতনের আন্দোলনে বিক্ষোভকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে থানা ও ট্রাফিক পুলিশ বক্স।

গতকাল থেকে পুলিশের কর্মবিরতির ফলে রাজধানী এখন কার্যত পুলিশ শূন্য। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে গতকাল বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আনসার ও ভিডিপি) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এবং ঢাকা শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে আজ তাদের খুব বেশি দেখা যায়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত