১১৫ কোটিতেও পানি আসেনি নরসুন্দায়, এখন এটি ময়লার ভাগাড়

মো. শাহজাহান সাজু, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২১, ১২: ১৭
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২১, ১৪: ০২

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে নরসুন্দার শুরু। প্রায় ৫৮ কিলোমিটার বয়ে চলে জেলার ইটনা উপজেলার বাদলার কাছে ধনু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত এটি। বেশ কয়েক বছর আগে হোসেনপুরের কাওনা এলাকায় বাঁধ দেওয়ার পর নদীটি প্রাণ হারায়। এটি এখন অঘোষিত ময়লার ভাগাড়।

২০১২ সালে নরসুন্দার সৌন্দর্য ফিরাতে এগিয়ে আসে সরকার। পাশাপাশি নদীকেন্দ্রিক কিশোরগঞ্জ জেলা শহরকে আধুনিক শহর নির্মাণে নেওয়া হয় ব্যাপক পরিকল্পনা। সে মোতাবেক জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেকের বৈঠকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় 'নরসুন্দা নদী পুনর্বাসন ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা সংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প'।

কিশোরগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০১২ সালের ২২ নভেম্বর এ প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন। প্রথম ধাপে বরাদ্দ আসে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা। পরে আরেক দফা বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১১৫ কোটি টাকা।

নরসুন্দা সংস্কারে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এখন এটি ময়লার ভাগাড়বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালে। কিন্তু পরে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের জুন মাসে কোনো রকমে গোঁজামিল দিয়ে কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নদী খননসহ অবকাঠামোর কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের থেকেই যায় হাজারো অভিযোগ।

পানি প্রবাহের জন্য ৩৩ কিলোমিটার নদী দায়সারাভাবে খনন করা হলেও ব্রহ্মপুত্র থেকে এক বালতি পানিও পায়নি নরসুন্দা। নদীতে পানি না আসায় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নরসুন্দা।

স্থানীয়রা বলছেন, পরিকল্পনার গোড়ায় ভুল ছিল বলেই এমনটি হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল নদী খনন করে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে নরসুন্দায় পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা। আর ওই চলমান নদীকে ঘিরে শহরকে সুন্দরভাবে সাজানো। এ জন্য শহরে ছয় কিলোমিটার নদীর পার সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধাই, ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ করা হয়। ওয়াকওয়ে, দুটি পার্ক, মুক্তমঞ্চ, সুউচ্চ নদী পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ আরও কিছু কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। অন্যান্য কাজগুলো কোনোরকমে গোঁজামিল দিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে। অথচ যে নদীকে ঘিরে এত আয়োজন, সেই নদীতে পানির প্রবাহ না থাকায় হতাশ হয়েছে জেলা শহরবাসী।

নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, নদী শুরুর জায়গায়টিতে বাঁধ দেওয়ার ফলে নদীটিকে জেনে-বুঝে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে, ময়লা আবর্জনা ফেলে নদীকে পরিণত করা হয়েছে ভাগাড়ে। এতে স্থায়ীভাবে পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হয়েছে। শহরের ছোট-বড় বাজারের ময়লা আবর্জনা নদীপাড়ে, ব্রিজের পাশে, নদীর পানিতে ও ওয়াকওয়েতে দিনের পর দিন অবাধে ফেলা হচ্ছে। এতে পরিবেশ ও নদীর জমাট পানি দূষণের প্রকোপ বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ি, ড্রেন ও স্থাপনার ময়লা-আবর্জনার পানি নদীতে পড়ে পানি দূষিত হচ্ছে। আর নদীর পাশে ওয়াকওয়েতে মানুষ খুব কষ্টে যাতায়াত করছে।

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ সাদী বলেন, খরস্রোতা নরসুন্দা এখন সরু নর্দমায় পরিণত হয়েছে। বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে চরম দুর্গন্ধের শিকার হচ্ছে শহরবাসী। নদী খননের বেশির ভাগ টাকা লুটপাট করায় নদীর তলদেশের গভীরতা ও প্রশস্তের মাপ কিছুই ঠিক নেই। ব্রহ্মপুত্রের মূল প্রবাহের বাঁধ কেটে নরসুন্দাকে যুক্ত করা হলে নদীটি আবারও প্রাণ ফিরে পাবে।

নরসুন্দা সংস্কারে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এখন এটি ময়লার ভাগাড়পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) সদস্যসচিব বাঁধন রায় বলেন, নরসুন্দা নদীকে এখন আর নদী বলা যাবে না। এটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে কোথাও কোথাও নদীর রেখা খুঁজে পাওয়া যায় না। নদীটি কিশোরগঞ্জের দুঃখ হয়ে গেছে।

কিশোরগঞ্জের পৌরমেয়র পারভেজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, নদীকে ঘিরে যে বৃহৎ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে নদীর পাড় ভেঙে পড়া, নদীতে ময়লা আবর্জনা, পানি ও পরিবেশ দূষণ হতো না। এই প্রকল্পের নিম্নমানের কাজের দায় এখন পৌরবাসীকে বহন করতে হচ্ছে। এত বছর হয়ে গেছে কিন্তু এলজিইডি এখন পর্যন্ত পৌরসভার কাছে প্রকল্পটি বুঝিয়েও দেয়নি। তবুও মাঝে মাঝে পৌরসভার উদ্যোগে আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নরসুন্দা নদীতে সারা বছর পানি প্রবাহের জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি আমরা। এ অর্থবছর যেহেতু শেষ তাই আগামী অর্থবছরে এর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত