‘৮০ লাখ টাকা দিতে না পারলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৫: ০৭
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৮: ০৮

বিয়ের সময় কোনো দাবি না থাকলেও বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকে। এসি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, সোফা, খাট, স্বর্ণ দিতে চাপ দিতে থাকে। বিয়ের কয়েক মাস পর ৮০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় চুল কেটে দেওয়া হয়। পিঠে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। সর্বশেষ ফ্যানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা বৈশাখী ভট্টাচার্য মৌ। তিনি জানান, তার শ্বশুর পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় স্থানীয় থানা তার মামলা নিচ্ছে না। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মৌ বলেন, ‘বিয়ের দুই-তিন মাস পর থেকেই তারা টাকার জন্য মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। আমার শাশুড়ি গরম খুন্তি দিয়ে আমার হাতে, পিঠে ছ্যাঁকা দিয়েছে। চুল কেটে দিয়েছে। আমি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম তখন আমার ওপর গরম পানি ঢেলে দিয়েছিল। ৬ মাসের বেলায় তারা জানায়, তারা ইন্ডিয়া চলে যাবে এবং ছেলেকে আবার বিয়ে দেবে। তাই আমার কাছে ৮০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারলে তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’

গত ২৩ মে স্বামী ডা. কামনাশীষ চক্রবর্তী আবার ৮০ লাখ টাকা চেয়ে গালিগালাজ ও মারধর করেন জানিয়ে মৌ বলেন, ‘টাকার ব্যবস্থা হয়েছে কি না বলেই সে আমাকে থাপ্পর, লাথি মারতে থাকে। কেন মারছে জিজ্ঞেস করাতে সার্জিক্যাল ছুরি দিয়ে বাম হাতে পোচ দেয়৷ তখন সে তার বাবা-মাকে ফোন করে বলে, আজকে তাকে মেরেই ফেলব। তার বাবা-মা এসেও আমাকে মারধর করে। আমার শ্বশুর ডান চোখে ঘুষি মারে, শাশুড়ি ইট দিয়ে বাম হাতে আঘাত করে। তারা আমার কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। তারা আমার গলা চিপে ধরে ফলে দুইবার রক্তবমি হয়।’

ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেওয়া হয়নি। আমি নিরুপায় হয়ে থানা হতে চলে আসি। এরপর আমি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭, চট্টগ্রামে মামলা দায়ের করি যার নং ১৩৯ / ২২।’

বর্তমানে তিনি ও তার তিন বছরের মেয়েসহ পুরো পরিবার জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন জানিয়ে বৈশাখী ভট্টাচার্য মৌ বলেন, ‘মিথ্যা মামলা করে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। বাসার নিচে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে। বের হলে পিছু নেয়। আমার শ্বশুর পুলিশের পরিচয় দিয়ে সবাইকে ভয় দেখায়। আমরা জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছি। এই অবস্থা থেকে আমি নিস্তার চাই। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করছি।’

মৌয়ের স্বামী ডা. কামনাশীষ চক্রবর্তী সেতু চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে কর্মরত আছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সে যা অভিযোগ করেছে তা সব মিথ্যা। তারা উল্টো গুন্ডা ভাড়া করে এনে আমার বাবা-মাকে মারধর করেছে। আমরা আদালতে মামলা করেছি, সেগুলো বিচারাধীন আছে।’

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ আসেনি। এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত