হাটিকুমরুল মোড়ে হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ইন্টারসেকশন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ৩৭

উত্তরবঙ্গের যেসব মানুষ ঈদ বা অন্য সময় ঘরে ফিরতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কাটান, তাদের জন্য সুখবর। এই মহাসড়কে আপনার গাড়ি আর থেমে থাকবে না। পুরো মহাসড়কটি হবে চার লেনের, মোড়গুলোতেও থাকবে ওভারপাস। সবচেয়ে নান্দনিক স্থাপনা হবে হাটিকুমরুল মোড়ে। ফরিদপুরের ভাঙ্গার মতো হাটিকুমরুল মোড়েও হবে একটি ইন্টারসেকশন। গাড়িগুলো কোনো রকম বাধা না পেয়ে সোজা চলে যেতে পারবে হাইওয়ে ধরে। মহাসড়কের যেকোনো প্রকল্পের সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ থাকে নিয়তির মতো। তবে এটা বলা যেতে পারে, এই মহাসড়কে তা অনেকটাই কম হবে। কারণ, চার লেনের কাজ বেশ কিছুটা শেষ হয়েছে। বাকি কাজও থেমে নেই। সব কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও তিন বছর। অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এই সড়কে চলাচল করা যাবে ঝোড়ো গড়িতে, বাধাহীনভাবে। আপাতত কিছু সময় অপেক্ষা করতেই হবে।

এবার বলি খরচ কত হবে। পুরো প্রকল্পে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এই টাকার কিছু অংশ সরকার দেবে আর বাকিটা হবে বৈদেশিক ঋণে। প্রশ্ন হলো, এত টাকা দিয়ে কী হবে? ১৯০ দশমিক ৪০ কিলোমিটারের এই মহাসড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে ৩২৬ হেক্টর, এতে নতুন ব্রিজ হবে ৩২টি, ফ্লাইওভার হবে ৬টি, রেলওয়ে ওভারপাস আছে ২টি, ছোট ব্রিজ বা কালভার্ট আছে ১৮০টি, নিচু-শিল্প ও বাজার এলাকায় কংক্রিটের পেভমেন্ট নির্মাণ হবে ৪৬ কিলোমিটারে, পথচারীদের জন্য ওভারপাস হবে ১১টি। এর বাইরে আছে সড়ক গবেষণাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ ও স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক মনিটরিং ব্যবস্থা।        

প্রকল্পটি ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অনুমোদিত হয়। প্রাথমিক কাজ শেষ হতে লাগে আড়াই বছর। পরের দফা শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের জুন থেকে।

সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে শুরু হওয়া চার লেনের কাজ দুই বছর ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ এবং সেখান থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়কের চার লেনের কাজও সমানে চলছে। এই মহাসড়কের বিষফোড়া বলে পরিচিত কড্ডার মোড়েও চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ।  

হাটিকুমরুল গোলচত্বরে চার লেনের যে ইন্টারসেকশন হচ্ছে, তাতে ব্যয় হবে ৭৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এটা করবে। এ কাজের চুক্তিও হয়েছে।

এই প্রকল্পের কর্মকর্তা জয় প্রকাশ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, উত্তরবঙ্গের চার লেন মহাসড়কের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। হাটিকুমরুল গোলচত্বরে ইন্টারসেকশনের কাজ শেষ হলে যে কেউ এটা দেখে শুধু একটু অবাকই হবেন। এই ইন্টারসেকশনের সঙ্গে চার লেনের যে সংযোগ হবে, তাতে ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-রংপুর এবং পাবনা-ঢাকার জন্য পৃথক লেন থাকবে। ইন্টারসেকশনে দূরপাল্লার যানবাহনের পাশাপাশি ধীরগতির পরিবহনের জন্যও থাকছে আলাদা লিংক রোড।

উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম শফি, ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান, স্থানীয় ব্যবসায়ী কাজী এহসানুল হাসান সন্টু জানান, এই খবরে মানুষ খুব খুশি। সবার দাবি, কাজটা যেন সময়মতো করা হয়।

জানতে চাইলে এই প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নিরবচ্ছিন্ন সড়কব্যবস্থা তৈরি হবে। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে ইন্টারসেকশনের কারণে কোথাও যানজট হবে না। এতে পুরো অঞ্চলের মানুষের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে যাবে।

(প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা, তাঁকে সহায়তা করেছেন স্বপন মির্জা, সিরাজগঞ্জ ও হোসাইন ময়নুল, উল্লাপাড়া।) 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত