ভালোবাসার টানে শিবচরে ইন্দোনেশীয় তরুণী, করলেন বিয়ে

ইমতিয়াজ আহমেদ, শিবচর (মাদারীপুর)
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৫৯
Thumbnail image

ভালোবেসে শিবচরের যুবককে বিয়ে করলেন ইন্দোনেশীয় তরুণী। গতকাল শুক্রবার ধুমধামের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে তাঁদের বিয়ে। রাত অবধি নানা আয়োজনে মুগ্ধ হন ইন্দোনেশীয় তরুণী ইফহা। 

মাদারীপুর জেলার শিবচরের কুতুবপুর ইউনিয়নের বড় কেশবপুর গ্রামের মো. লাল মিয়া মাদবরের মেজো ছেলে শামীম মাদবরের সঙ্গে বিয়ে হয় ইন্দোনেশিয়র নাগরিক ইফহার। 

বাংলাদেশি শামীম এবং ইন্দোনেশীয় ইফহা দুজনেই কাজের সুবাদে সিঙ্গাপুর থাকেন। গত ৬ বছর ধরে শামীম সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। আর ইফহা সেখানে কসমেটিকসের ব্যবসায় করছেন। সেখানেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথম পরিচয়। এর পর দেখা-সাক্ষাৎ হয়। সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। তারপর দুই বছরের প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিয়ে করেন এই যুগল। 

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থাতেই শামীম তাঁর পরিবারকে বিষয়টি জানান। বিদেশি তরুণীকে বিয়ের ব্যাপারে শামীমের পরিবার প্রথম দিকে রাজি হয়নি। অন্যদিকে ইফহার পরিবারও এই সম্পর্ক বিয়েতে গড়াক তা চায়নি। উভয় পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হলে গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশে আসেন শামীম। এরপর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশীয় তরুণী ইফহাও আসেন বাংলাদেশে। শামীম মাদবরের পরিবার সানন্দে গ্রহণ করেন ওই তরুণীকে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত চলে বিয়ের অনুষ্ঠান। 

শামীমের পরিবারের সদস্যরা জানান, স্বাভাবিকভাবেই ভিনদেশি মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে হোক এটা পরিবার মেনে নিতে চায় না। কিন্তু ওরা পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবাসে, তাই তাঁদের সুখের কথা ভেবে রাজি হয়েছেন তাঁরা। বিয়ের অনুষ্ঠানও ধুমধামের সঙ্গে হয়েছে। 

ভালোবেসে শিবচরের যুবককে বিয়ে করলেন ইন্দোনেশীয় তরুণীসালমা আক্তার নামে প্রতিবেশী বলেন, ‘বিদেশি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। গ্রামের লোকজন সকাল থেকে দেখতে আসছে। সবার মধ্যে কৌতূহল। বিদেশি হলেও টুকটাক বাংলা বলতে পারে। মেয়েটি খুবই হাসিখুশি থাকে। সবার সঙ্গে আনন্দ নিয়ে আছে এখানে।’ 

এদিকে বিদেশি তরুণীকে বিয়ের ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমায় এলাকাবাসী। ৮ শতাধিক মানুষের খাবার আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। 

শামীম মাদবরের বাবা লাল মিয়া মাদবর বলেন, ‘বিদেশি মেয়েকে আমার ছেলে পছন্দ করেছে। মেয়েও ছেলেকে পছন্দ করে। আমরা ওই মেয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও বিয়েতে রাজি হয়েছেন। শামীম আসার কিছুদিন পর বিদেশি মেয়েও বাড়িতে আসে। শুক্রবার শামীমের সঙ্গে আমার ছোট ছেলে সুমনেরও বিয়ে দিয়েছি। এক সঙ্গে অনুষ্ঠান করেছি। সবাই আনন্দিত। এখন ওরা ভালো থাকুক এই দোয়া করি।’ 

শামীম বলেন, ‘ইফহা ইন্দোনেশীয় তরুণী। তবে সিঙ্গাপুর থাকে। ওখানে থাকা অবস্থাতে প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সম্পর্কে প্রেমে গড়ায়। আমাদের কারও পরিবারই রাজি ছিল না। আমরা নিজেদের পরিবারকে বুঝিয়েছি। পরে তারা বিয়েতে রাজি হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিয়ের জন্যই ইফহা বাংলাদেশে আসে।’ 

বিয়ের সাজে ইন্দোনেশীয় কনে ইফহা ও বাংলাদেশি বর শামীমতিনি আরও বলেন, ‘আমি আর ইফহা বিয়ের সিদ্ধান্তে আসার পর থেকেই ভেবে রেখেছি বিয়েতে পরিবারের কাছ থেকে কোনো টাকা নেব না। নিজেরা বিয়ের আয়োজনের জন্য টাকা জমিয়েছি। আমরা দুজনই সিঙ্গাপুরে নিজ নিজ কাজ করি, উপার্জন করি। পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়াও ভালো। দোয়া করবেন বাকি জীবন যেন সুখে কাটে।’ 

ইফহা বলেন, ‘আমি খুবই খুশি শামীমকে পেয়ে। ও খুবই ভালো মনের মানুষ। আমরা সিঙ্গাপুর যাব। ওখান থেকে ইন্দোনেশিয়া বেড়াতে যাব বাবা-মায়ের কাছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত