নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ থেকে
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের শেষ দিনের প্রচার আজ। গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে সবারই চোখ নারায়ণগঞ্জে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে পুরোদমে রাস্তায় নেমেছেন হাতি মার্কার প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। কিন্তু জানা গেল, বেলা ৩টায় রেলগেটের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে পথসভা ছাড়া তেমন কোনো শোডাউন নেই নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর।
সংবাদকর্মীরা যান আইভীর দেওভোগের বাসায়। শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বাসভবনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি ।
বহিরাগতদের এনে নির্বাচন পরিচালনা করছেন। সার্কিট হাউসসহ বিভিন্ন হোটেলে তাঁরা থাকছেন, যেটা আচরণবিধি লঙ্ঘন। তৈমুর আলম খন্দকারের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘সার্কিট হাউসে কারা থাকছেন আমার জানা নেই। আমি যতটুকু জানি, অনেকেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেন। সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনও হতে পারে। অথবা অন্য কেউ হতে পারে। তবে কারা আসছেন। কারা থাকছেন, আমার জানা নাই। জনতাই আমার শক্তি। আমি কিন্তু মানুষের কাছেই যাই। তাই বহিরাগতদের দিয়ে নির্বাচন করাব কেন? উনি কাকে বুঝিয়েছেন জানি না। কারণ আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে, মানুষও নারায়ণগঞ্জের। আমার বাড়ি রূপগঞ্জে না যে বহিরাগত কাউকে আনব।’
ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা হয়তো তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন কারণে হয়তো আসছেন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি। তাঁরাও কিন্তু জানেন আইভী কীভাবে রাজনীতি করে। কীভাবে ভোটারদের কাছে যায়। যদি তা না জানতেন, তাহলে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে আমাকে নৌকা দিতেন না। কারণ উনিও জানেন ওনার আইভী মানুষের দ্বারেই যায়। আমার একমাত্র পথ হলো জনগণ। তাই নেতারা আসতেই পারেন। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কী করছে, তাদের অবস্থানটা কোথায়, এটা পর্যবেক্ষণ করতে তাঁরা আসতে পারেন। কিন্তু আমাকেও মুক্ত করে দিয়েছেন। আমি তো সারাক্ষণ ভোটারদের কাছে যাচ্ছি।’
কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বিরোধী পক্ষের অভিযোগে আপনারা বিব্রত কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঢাকার পাশেই আসলে নারায়ণগঞ্জ। এখানে নির্বাচন হচ্ছে। আসতেই পারেন। দেখতেই পারেন। আর অনেকেই বলছেন এখানে নির্বাচন একটু ভিন্ন। তাই তাঁদের অনেকেই আসেন। আমাদের প্রতিপক্ষের কিন্তু অনেকেই আসেন। তাঁরা হয়তো নীরবে প্রচারণা করছেন।’
নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করছে বিরোধী পক্ষ। আপনি কি আশা করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই নির্বাচনী সহিংসতার বিপক্ষে। উনি আমার চাচা। জন্মের পর থেকেই উনি মনে হয় আমাকে দেখছেন। এই বাড়িতে তিনি অনেকবার এসেছেন। আমার বাবার কর্মী ছিলেন। আমাদের বন্ধনটা অনেক আগের। যুদ্ধের ময়দানে হয়তো আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী।’
নির্বাচনে কোনো সহিংসতা হবে মনে করেন না জানিয়ে আইভী বলেন, ‘আমার কোনো বাহিনীও নাই। আর কোনো দিন সহিংসতা করিও না। বরং সহিংসতা হলে আমার ক্ষতি হবে। ভোটাররা আসতে পারবে না। আমি যদি বলি, একটি পক্ষ তা-ই চাইছে। আমার যেসব এলাকা জমজমাট, সেখানে হয়তো কেউ সহিংসতা করে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দিতে পারে। ভোটের দিন যাতে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে এবং নারী ভোটাররা আসতে পারে। কারণ আমি জানি এই ভোটগুলো আমার। আমি নির্বাচনে জিতবই। সুতরাং আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে কেউ যদি সহিংসতা করে, তাহলে এটা ঠিক হবে না। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করব তা নিয়ন্ত্রণ আনতে।’
কারা আপনার ভোটারদের বাধা দিচ্ছে, সেটা প্রতিপক্ষ নাকি নিজ দলের—এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘যারা বাধা দিচ্ছে, তারা কিন্তু একটা সময়ে এক হয়ে যায়। আপন আর পর কী? এখানে তো নির্বাচনটা হচ্ছে আইভী বনাম অনেক কিছু। সে ক্ষেত্রে অনেক পক্ষই এক হতে পারে। আমি ধারণা করছি। আইভীকে পরাজিত করতে অনেক পক্ষই এক হয়ে গেছে। সেটা ঘরেরও হতে পারে, বাইরেরও হতে পারে। কীভাবে আমাকে পরাজিত করা যায়। বিশৃঙ্খলা করে ভোটটাকে ঝামেলা করা যায়। কারণ সবাই জানে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।’
এই অনেক পক্ষ নিয়ে আপনি কি আপনার পুরোনো অবস্থানেই রয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আমার আগের জায়গায় রয়েছি। প্রথম থেকে যা বলেছি, এখনো সেই জায়গায় আছি। বারবার বলেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে সতর্ক থাকে।’
বহু পক্ষের খেলা বন্ধে কেন্দ্রীয় নেতারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে ওইভাবে আলাপ-আলোচনা করি নাই। কারণ বিগত ২৮ ডিসেম্বর থেকে খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তা ছাড়া দলের উচ্চপর্যায়ের বিষয়ে আমার কথা না বলাই ভালো।’
আইভী বলেন, ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক হয় এবং কোথাও কেন্দ্র বন্ধ না হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হব। এটা আমার চাচা নিজেও জানেন, এখানে আসলে আমার কী অবস্থা।’
তৈমুর আলমের অভিযোগ আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষ। আমার বন্ধন হলো তৃণমূল পর্যায় থেকে সব জায়গার মানুষের। আমাকে দুর্বল করা এত সহজ কিছু নয়। আমি কোনো কিছুতেই দুর্বল হব না। দুর্বল করতে পারবে না। কেউ প্রভাবিত করতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশাসনের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না, তাঁরা কী আলাপ করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়েছেন। আমার বিজয় নিয়ে তারা শঙ্কিত ছিলেন না। তাঁরা ভালো করেই জানেন আইভী বিজয়ী হবে। আমার মনে হয় কেন্দ্রের নেতারা কাউকে প্রভাবিত করছেন। তারা হয়তো এখানে এসে কাউকে পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে তৈরি না হয়। এত বড় দলে একটু সমস্যা থাকেই। তাই তাঁরা সেটাই পর্যবেক্ষণ করছেন বলে আমার মনে হয়।’
তাঁরা নিজ দলের কাউকে নজরদারিতে রাখছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘তা ঠিক বলব না। কেন্দ্র কী করছে, তাঁরাই বলবেন। আমি তো আপনাদের সামাল দিতে ব্যস্ত আছি। প্রতিটি নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রতিটির আলাদা আলাদা ধরন ছিল। এই নির্বাচন বিভিন্ন কারণেই চ্যালেঞ্জিং।’
মানুষের প্রত্যাশা কেমন—এ বিষয়ে আইভী বলেন, ‘প্রত্যাশার কোনো শেষ নাই। আপনি যত দেবেন, আরও চাহিদা তৈরি হবে। নারায়ণগঞ্জ কিন্তু পুরোনো জনবহুল শহর। এখানে ভাসমান মানুষ অনেক। প্রতিদিনই বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। তার পরও চেষ্টা ইট-পাথরের এই শহরকে সবুজায়নের জন্য। বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং। এখানে জবাবদিহিও বেশি। তাই আমি নগরকে একটু নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। শেখ রাসেল পার্ক করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু কেউ রুখতে পারেনি। এখন তো সবাই যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে কাজ করা খুব কঠিন। সেটা নিয়ে কাজ করি। কোনো কাজ থেকে পিছপা হইনি।’
সমর্থকদের আটক সম্পর্কে তৈমুরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাকে ধরেছে আমি জানি না। জানার চেষ্টাও করি নাই। নারায়ণগঞ্জ শহরে কিশোর গ্যাংয়ের অভাব নাই। কালকে রাতেও মোটরসাইকেল মহড়া হয়েছে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে নৌকার ভোট চাইছে। আমার গাড়ির সামনে দুইটা মোটরসাইকেল থাকুক তা-ও চাই না। এই শহরের মানুষ আমার চরিত্র জানে। আমি রিকশায় যাই, নিজে হাঁটি। হঠাৎ করে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে নৌকার ভোট চাওয়ার কারণটা কী? সন্ত্রাসী যেকোনো দলের হতে পারে। আমার চরিত্রের সঙ্গে যায় না। সেই কাজগুলো অতি উৎসাহী হয়ে কারা করছে? নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা আমি করি নাই। যদি কেউ করে, সেটা ঠিক রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক সবার চাওয়া। সন্ত্রাসীদের কোনো দল নাই। আমি তো ভয় পাচ্ছি কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা হয়ে আমার নির্বাচনে সমস্যা হয় নাকি। আমি বিজয়ী হব। চাচার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। তার সঙ্গে কাজ করব।’
সংখ্যালঘুদের ভোটে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে একটা অভিযোগ এসেছে। তিনি বলেন, ‘এটা খুব খারাপ। নেতারা গেলে মানুষ ভয় পায়। ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এটাকে বাধা দিতে হবে। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে কে বা কারা টাকা দিচ্ছে জানি না। আমার টাকা নাই। থাকলেও দিতাম না। নির্বাচনে টাকা দেওয়া নীতি-নৈতিকতার ব্যাপার। খুবই বিব্রতকর। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’
শামীম ওসমানের অনুসারীরা কী কাজ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কে কাজ করেছে বা করে নাই। আমার দেখারও সময় ছিল না। কেন্দ্রীয় নেতারা এখানে ছিলেন। তাঁরা দেখবেন। আমি আওয়ামী লীগের সব কর্মীর প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন আমাকে ভোট দেয়। আমি দলমতের ঊর্ধ্বে কাজ করেছি। ওই সিটে বসে দল, ধর্ম দেখি নাই। দায়িত্ব ইমানের সঙ্গে পালন করেছি। শুধু একজনের না, আমার দল আওয়ামী লীগের না, সবার কাছে ভোট চাই। এটা আমার অধিকার, আত্মিক সম্পর্কের দাবি। আপনারা আমাকে ভোট দেবেন। আমার কোনো বাহিনী নাই। তাই আমার জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আস্থা রয়েছে। সহিংসতা হলে তারা রোধ করবেন।’
জিতলে আগামী দিনের কার্যক্রম নিয়ে নাসিকের দুইবারের মেয়র বলেন, ‘আমি শীতলক্ষ্যার দিকে নজর দেব। কদমরসুল ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে উদ্বোধন হবে। ভোটারদের কাছে অনুরোধ, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভোট দেবেন নৌকায়। আমি বিগত সময় থেকে অন্যায়ের বিপক্ষে সোচ্চার ছিলাম। যেটাতে সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন সেখানে হব। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করব না। এই শহরে খুন ও রাহাজানির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। নিজেও কখনো এটা করি না।’
ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলব, ‘আপনারা আইভীকে চেনেন ও জানেন। আমি আপনাদের মানুষ। নিজের দায়িত্ব ইমানের সঙ্গে পালন করেছি। টাকাপয়সার সঙ্গে লেনদেন ছিলাম না। কাজ করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। সেটাই হবে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, সুন্দর, নিরাপদ ও সবুজ শহর গড়ার জন্য আপনারা আমাকে ভোট দেবেন। বিপদে আপনাদের পাশে থাকব। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি করব না। কারণ আমার কোনো বিশেষ বাহিনী নাই।’
আরও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের শেষ দিনের প্রচার আজ। গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে সবারই চোখ নারায়ণগঞ্জে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে পুরোদমে রাস্তায় নেমেছেন হাতি মার্কার প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। কিন্তু জানা গেল, বেলা ৩টায় রেলগেটের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে পথসভা ছাড়া তেমন কোনো শোডাউন নেই নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর।
সংবাদকর্মীরা যান আইভীর দেওভোগের বাসায়। শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বাসভবনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি ।
বহিরাগতদের এনে নির্বাচন পরিচালনা করছেন। সার্কিট হাউসসহ বিভিন্ন হোটেলে তাঁরা থাকছেন, যেটা আচরণবিধি লঙ্ঘন। তৈমুর আলম খন্দকারের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘সার্কিট হাউসে কারা থাকছেন আমার জানা নেই। আমি যতটুকু জানি, অনেকেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেন। সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনও হতে পারে। অথবা অন্য কেউ হতে পারে। তবে কারা আসছেন। কারা থাকছেন, আমার জানা নাই। জনতাই আমার শক্তি। আমি কিন্তু মানুষের কাছেই যাই। তাই বহিরাগতদের দিয়ে নির্বাচন করাব কেন? উনি কাকে বুঝিয়েছেন জানি না। কারণ আমার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে, মানুষও নারায়ণগঞ্জের। আমার বাড়ি রূপগঞ্জে না যে বহিরাগত কাউকে আনব।’
ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা হয়তো তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন কারণে হয়তো আসছেন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি। তাঁরাও কিন্তু জানেন আইভী কীভাবে রাজনীতি করে। কীভাবে ভোটারদের কাছে যায়। যদি তা না জানতেন, তাহলে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই সময়ে আমাকে নৌকা দিতেন না। কারণ উনিও জানেন ওনার আইভী মানুষের দ্বারেই যায়। আমার একমাত্র পথ হলো জনগণ। তাই নেতারা আসতেই পারেন। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কী করছে, তাদের অবস্থানটা কোথায়, এটা পর্যবেক্ষণ করতে তাঁরা আসতে পারেন। কিন্তু আমাকেও মুক্ত করে দিয়েছেন। আমি তো সারাক্ষণ ভোটারদের কাছে যাচ্ছি।’
কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বিরোধী পক্ষের অভিযোগে আপনারা বিব্রত কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঢাকার পাশেই আসলে নারায়ণগঞ্জ। এখানে নির্বাচন হচ্ছে। আসতেই পারেন। দেখতেই পারেন। আর অনেকেই বলছেন এখানে নির্বাচন একটু ভিন্ন। তাই তাঁদের অনেকেই আসেন। আমাদের প্রতিপক্ষের কিন্তু অনেকেই আসেন। তাঁরা হয়তো নীরবে প্রচারণা করছেন।’
নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করছে বিরোধী পক্ষ। আপনি কি আশা করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই নির্বাচনী সহিংসতার বিপক্ষে। উনি আমার চাচা। জন্মের পর থেকেই উনি মনে হয় আমাকে দেখছেন। এই বাড়িতে তিনি অনেকবার এসেছেন। আমার বাবার কর্মী ছিলেন। আমাদের বন্ধনটা অনেক আগের। যুদ্ধের ময়দানে হয়তো আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী।’
নির্বাচনে কোনো সহিংসতা হবে মনে করেন না জানিয়ে আইভী বলেন, ‘আমার কোনো বাহিনীও নাই। আর কোনো দিন সহিংসতা করিও না। বরং সহিংসতা হলে আমার ক্ষতি হবে। ভোটাররা আসতে পারবে না। আমি যদি বলি, একটি পক্ষ তা-ই চাইছে। আমার যেসব এলাকা জমজমাট, সেখানে হয়তো কেউ সহিংসতা করে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দিতে পারে। ভোটের দিন যাতে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে এবং নারী ভোটাররা আসতে পারে। কারণ আমি জানি এই ভোটগুলো আমার। আমি নির্বাচনে জিতবই। সুতরাং আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে কেউ যদি সহিংসতা করে, তাহলে এটা ঠিক হবে না। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করব তা নিয়ন্ত্রণ আনতে।’
কারা আপনার ভোটারদের বাধা দিচ্ছে, সেটা প্রতিপক্ষ নাকি নিজ দলের—এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘যারা বাধা দিচ্ছে, তারা কিন্তু একটা সময়ে এক হয়ে যায়। আপন আর পর কী? এখানে তো নির্বাচনটা হচ্ছে আইভী বনাম অনেক কিছু। সে ক্ষেত্রে অনেক পক্ষই এক হতে পারে। আমি ধারণা করছি। আইভীকে পরাজিত করতে অনেক পক্ষই এক হয়ে গেছে। সেটা ঘরেরও হতে পারে, বাইরেরও হতে পারে। কীভাবে আমাকে পরাজিত করা যায়। বিশৃঙ্খলা করে ভোটটাকে ঝামেলা করা যায়। কারণ সবাই জানে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।’
এই অনেক পক্ষ নিয়ে আপনি কি আপনার পুরোনো অবস্থানেই রয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আমার আগের জায়গায় রয়েছি। প্রথম থেকে যা বলেছি, এখনো সেই জায়গায় আছি। বারবার বলেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে সতর্ক থাকে।’
বহু পক্ষের খেলা বন্ধে কেন্দ্রীয় নেতারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে ওইভাবে আলাপ-আলোচনা করি নাই। কারণ বিগত ২৮ ডিসেম্বর থেকে খুবই ব্যস্ত ছিলাম। তা ছাড়া দলের উচ্চপর্যায়ের বিষয়ে আমার কথা না বলাই ভালো।’
আইভী বলেন, ‘নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক হয় এবং কোথাও কেন্দ্র বন্ধ না হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হব। এটা আমার চাচা নিজেও জানেন, এখানে আসলে আমার কী অবস্থা।’
তৈমুর আলমের অভিযোগ আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষ। আমার বন্ধন হলো তৃণমূল পর্যায় থেকে সব জায়গার মানুষের। আমাকে দুর্বল করা এত সহজ কিছু নয়। আমি কোনো কিছুতেই দুর্বল হব না। দুর্বল করতে পারবে না। কেউ প্রভাবিত করতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশাসনের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না, তাঁরা কী আলাপ করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়েছেন। আমার বিজয় নিয়ে তারা শঙ্কিত ছিলেন না। তাঁরা ভালো করেই জানেন আইভী বিজয়ী হবে। আমার মনে হয় কেন্দ্রের নেতারা কাউকে প্রভাবিত করছেন। তারা হয়তো এখানে এসে কাউকে পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে তৈরি না হয়। এত বড় দলে একটু সমস্যা থাকেই। তাই তাঁরা সেটাই পর্যবেক্ষণ করছেন বলে আমার মনে হয়।’
তাঁরা নিজ দলের কাউকে নজরদারিতে রাখছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘তা ঠিক বলব না। কেন্দ্র কী করছে, তাঁরাই বলবেন। আমি তো আপনাদের সামাল দিতে ব্যস্ত আছি। প্রতিটি নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রতিটির আলাদা আলাদা ধরন ছিল। এই নির্বাচন বিভিন্ন কারণেই চ্যালেঞ্জিং।’
মানুষের প্রত্যাশা কেমন—এ বিষয়ে আইভী বলেন, ‘প্রত্যাশার কোনো শেষ নাই। আপনি যত দেবেন, আরও চাহিদা তৈরি হবে। নারায়ণগঞ্জ কিন্তু পুরোনো জনবহুল শহর। এখানে ভাসমান মানুষ অনেক। প্রতিদিনই বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। তার পরও চেষ্টা ইট-পাথরের এই শহরকে সবুজায়নের জন্য। বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং। এখানে জবাবদিহিও বেশি। তাই আমি নগরকে একটু নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। শেখ রাসেল পার্ক করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু কেউ রুখতে পারেনি। এখন তো সবাই যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে কাজ করা খুব কঠিন। সেটা নিয়ে কাজ করি। কোনো কাজ থেকে পিছপা হইনি।’
সমর্থকদের আটক সম্পর্কে তৈমুরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাকে ধরেছে আমি জানি না। জানার চেষ্টাও করি নাই। নারায়ণগঞ্জ শহরে কিশোর গ্যাংয়ের অভাব নাই। কালকে রাতেও মোটরসাইকেল মহড়া হয়েছে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে নৌকার ভোট চাইছে। আমার গাড়ির সামনে দুইটা মোটরসাইকেল থাকুক তা-ও চাই না। এই শহরের মানুষ আমার চরিত্র জানে। আমি রিকশায় যাই, নিজে হাঁটি। হঠাৎ করে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে নৌকার ভোট চাওয়ার কারণটা কী? সন্ত্রাসী যেকোনো দলের হতে পারে। আমার চরিত্রের সঙ্গে যায় না। সেই কাজগুলো অতি উৎসাহী হয়ে কারা করছে? নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা আমি করি নাই। যদি কেউ করে, সেটা ঠিক রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক সবার চাওয়া। সন্ত্রাসীদের কোনো দল নাই। আমি তো ভয় পাচ্ছি কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে সহিংসতা হয়ে আমার নির্বাচনে সমস্যা হয় নাকি। আমি বিজয়ী হব। চাচার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। তার সঙ্গে কাজ করব।’
সংখ্যালঘুদের ভোটে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে একটা অভিযোগ এসেছে। তিনি বলেন, ‘এটা খুব খারাপ। নেতারা গেলে মানুষ ভয় পায়। ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এটাকে বাধা দিতে হবে। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে কে বা কারা টাকা দিচ্ছে জানি না। আমার টাকা নাই। থাকলেও দিতাম না। নির্বাচনে টাকা দেওয়া নীতি-নৈতিকতার ব্যাপার। খুবই বিব্রতকর। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’
শামীম ওসমানের অনুসারীরা কী কাজ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কে কাজ করেছে বা করে নাই। আমার দেখারও সময় ছিল না। কেন্দ্রীয় নেতারা এখানে ছিলেন। তাঁরা দেখবেন। আমি আওয়ামী লীগের সব কর্মীর প্রতি আহ্বান জানাব, তারা যেন আমাকে ভোট দেয়। আমি দলমতের ঊর্ধ্বে কাজ করেছি। ওই সিটে বসে দল, ধর্ম দেখি নাই। দায়িত্ব ইমানের সঙ্গে পালন করেছি। শুধু একজনের না, আমার দল আওয়ামী লীগের না, সবার কাছে ভোট চাই। এটা আমার অধিকার, আত্মিক সম্পর্কের দাবি। আপনারা আমাকে ভোট দেবেন। আমার কোনো বাহিনী নাই। তাই আমার জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আস্থা রয়েছে। সহিংসতা হলে তারা রোধ করবেন।’
জিতলে আগামী দিনের কার্যক্রম নিয়ে নাসিকের দুইবারের মেয়র বলেন, ‘আমি শীতলক্ষ্যার দিকে নজর দেব। কদমরসুল ব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে উদ্বোধন হবে। ভোটারদের কাছে অনুরোধ, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভোট দেবেন নৌকায়। আমি বিগত সময় থেকে অন্যায়ের বিপক্ষে সোচ্চার ছিলাম। যেটাতে সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন সেখানে হব। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করব না। এই শহরে খুন ও রাহাজানির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। নিজেও কখনো এটা করি না।’
ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলব, ‘আপনারা আইভীকে চেনেন ও জানেন। আমি আপনাদের মানুষ। নিজের দায়িত্ব ইমানের সঙ্গে পালন করেছি। টাকাপয়সার সঙ্গে লেনদেন ছিলাম না। কাজ করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। সেটাই হবে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, সুন্দর, নিরাপদ ও সবুজ শহর গড়ার জন্য আপনারা আমাকে ভোট দেবেন। বিপদে আপনাদের পাশে থাকব। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি করব না। কারণ আমার কোনো বিশেষ বাহিনী নাই।’
আরও পড়ুন:
ক্ষোভ প্রকাশ করে জাকির হোসেন বলেন, ‘এমন ছোট্ট সংযোগ সড়কে বিআরটিসির দোতলা বাসে কী করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পিকনিকে নিয়ে এল। সড়কের সামান্য ওপরে বৈদ্যুতিক তার। সেই তারে ছোট পরিবহন চলাচল যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ। সেই সড়কে কী করে বিআরটিসির দোতলা বাস চলাচল করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে
১০ মিনিট আগেসুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করে সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেওয়াসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ। আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব দাবি জানান তারা...
২১ মিনিট আগেনিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব পরিবারের নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বসতবাড়ির আশপাশে শাকসবজি চাষ করেন। তা ছাড়া ভেড়া, হাঁস-মুরগি পালন করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। এসব নারীর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দেখে অন্যরাও উৎসাহী হচ্ছেন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ এই এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ক
৪২ মিনিট আগেছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, এর মূল কারিগরই ছিলেন ছাত্র ও শিক্ষকেরা। বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষকদের ন্যায়সংগত সকল দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হবে...
১ ঘণ্টা আগে