‘এসএসসির পর আধা মণ মিষ্টি খাইয়ে ছিলাম, এবার ছেলে নাই’ 

যশোর প্রতিনিধি
Thumbnail image

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় যশোর সরকারি সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিলেন শাওয়ৃন্ত মেহতাপ প্রিয়। পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ১০। আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত ফল জানতে পেরেছেন প্রিয়’র পরিবার, বন্ধু, আত্মীয় সবাই। শুধু জানতে পারেননি প্রিয়।

গত ৫ আগস্ট বিকেলে যশোর শহরে বিজয় মিছিলে বের হয়ে যশোরে জাবির হোটেল ট্র্যাজেডিতে পুড়ে অঙ্গার হন তিনি। পরীক্ষায় ভালো ফল করে শিক্ষার্থীরা যখন আনন্দ উল্লাস করছেন, তখন চিরনিদ্রায় শায়িত প্রিয়।

প্রিয়’র এমন সাফল্যে কাঁদছেন তার মা-বাবা ও স্বজনরা। প্রিয় শহরের মুজিব সড়কস্থ এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শাকিল ওয়াহিদ ও গৃহিণী রেহেনা পারভীন দম্পতির সন্তান। প্রিয় ছাড়াও এই দম্পতির ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মুজিব সড়কস্থ এলাকায় প্রিয়’র বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, নিল রং করা চারতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি। এই বাড়িটির নিচতলাতে সপরিবারে ভাড়া থাকেন প্রিয়ের পরিবারের সদস্যরা।

পরীক্ষায় ভালো ফলে যখন যে বাড়িটিতে আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকার কথা; তখন বাড়ি জুড়েই চলছে শোকের মাতম। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতেই প্রিয় ব্যবহৃত জিনিসপত্র খুলে খুলে দেখাচ্ছেন প্রিয় মা রেহেনা পারভীন। টেবিলের পাশে সাজিয়ে রাখা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির নানা বই নেড়ে চড়ে মুছ ছিলেন। এসএসসিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা ও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কার ও ক্রেস্ট এনে ছেলের সাফল্যের গল্প শোনালেন।

রেহেনা পারভীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলে যে কত ভালো। বাবা মা ছাড়া তার জীবনে কিছু ছিল না। স্বপ্ন দেখত তার দুই ভাইকে মানুষ করবে, মা-বাবাকেও দেখাশোনা করবে। এসব এখন শুধুই স্বপ্ন। প্রিয়’র পাসের খবর আমার জন্য খুশির। কিন্তু খুশি উদ্যাপন যার সঙ্গে করব, সে তো আমার কাছে নেই। আগুনে পুড়ে আমার স্বপ্নটা শূন্য করে দিয়েছে।’

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার সবই আছে, শুধু নেই প্রিয়। মনে হয়, এখনই আমার কাছে ফিরে আসবে। বলবে, ‘‘দেখ মা আমি পাস করেছি। তোমার দোয়া কাজে লেগেছে। সবাই বলছে সে ভালো রেজাল্ট করেছে।’ ’ আমার ভেতরে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। আমি থাকতে পারছি না, আমার বুকের ধনকে ছাড়া। সে বেঁচে থাকলে কত আনন্দ করত, খুশি হতো। তা দেখে গর্ব করতাম আমিও।’

priyo-pic-2বারবার প্রিয়’র মা কান্না করলেও শক্ত থাকতে দেখা গেছে বাবা শাকিল ওয়াহিদকে। তিনি বারবার রেহেনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বলত, ‘‘বাবা তোমার বয়স হয়ে গেছে, তোমার দিয়ে কিছু হবে না। আমি আইইএলটিএস করব, বিদেশ যাব। সংসারটা আমিই দেখব। সঙ্গে ছোট দুই ভাইকে বড় করব।”’

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো ৫ তারিখে মারা গেছে। তবে আজ রেজাল্ট টার খবর শুনে আত্মীয়স্বজনেরা যখন ফোন দিচ্ছে; তখন বুকের ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, এসএসসিতে প্রিয় জিপিএ-৫ পেলে এলাকায় আধা মণ মিষ্টি এলাকায় খাইয়ে ছিলাম। এবার ছেলে নাই। আমি বুকে কষ্ট চেপে দিন পার করছি।’

প্রিয়’র বন্ধুরা জানান, প্রিয় অনেক সাহসী ও পরোপকারী। তাই তো ৫ আগস্ট বিকেলে শহরের চিত্রামোড়স্থ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন ১৪ তলা বিশিষ্ট জাবির হোটেল ইন্টারন্যাশনালে আগুনে জ্বলতে থাকা হোটেলে আটকে থাকাদের উদ্ধারে উঠে পড়েন। কয়েকজনকে বাঁচাতে পারলেও আটকে যায় সে। জাবির ট্র্যাজেডিতে পুড়ে অঙ্গার হন আমাদের বন্ধু ও মেধাবী এই শিক্ষার্থী। পরীক্ষার ফলে সবাই যখন উল্লাস করছেন, তখন চিরনিদ্রায় প্রিয়।

প্রসঙ্গত, যশোর অঞ্চলের পাঁচতারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগে অনেককে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হয় ২৪ জন। এর মধ্যে ছিলেন শাওয়ৃন্ত মেহতাপ প্রিয়। এ ঘটনায় আহত হয় প্রায় শতাধিক মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত