সৌদি আরবে সাতক্ষীরার নারীকে ‘যৌনদাসীর’ মতো ব্যবহার, হোয়াটসঅ্যাপে বাঁচার আকুতি 

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৪, ১৪: ৫৫
আপডেট : ০৩ মে ২০২৪, ১৭: ৫৪

উচ্চ বেতনের ভালো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের এক নারীকে সৌদি আরবে পাচার করা হয়। সেখানে তাঁকে একটি গোপন আস্তানায় আটকে রেখে ‘যৌনদাসী’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁকে দিয়ে গৃহস্থালির ভারী কাজ করানো হলেও পারিশ্রমিকের অর্থ পাচার চক্রের সদস্যরা রেখে দেয়। এমনকি তাঁকে ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হয় না। গত মাসে এক হোয়াটসঅ্যাপ ‘ভয়েস কলে’ নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন ওই নারী। 

রোজিনা খাতুন (৩৪) নামে এই নারী ঢাকাস্থ মতিঝিলের সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেসের মাধ্যমে গত ১৯ মার্চ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে স্থানীয় পাচার চক্রের কাছে বিক্রি করা হয় তাঁকে। গত বুধবার হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগে পর ভুক্তোভোগী নারীর ভাই সালাউদ্দীন জাহাঙ্গীর শ্যামনগর থানায় মানব পাচারের মামলা করেছেন। 

ওই মামলায় উপজেলার শংকরকাটি গ্রামের মোমিন খাঁর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল (২৮), তাঁর মা তাসলিমা বেগম (৪৭) ও সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেসের ম্যানেজার মো. রাসেল আকন শিমুলের (৩৩) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা দু-তিনজনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে চঞ্চলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শ্যামনগর থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানব পাচারের অভিযোগে ভুক্তোভোগী নারীর ভাই মামলা করেছেন। আসামিদের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’

পাচারের শিকার রোজিনার ভাই সালাউদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছয় মাস আগে তাঁর বোনের বিবাহবিচ্ছেদ হলে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তখন এলাকা পূর্বপরিচিত তাসলিমা ও তাঁর ছেলে মোস্তাফিজুর তাঁর বোনকে সৌদি আরবে চাকরির প্রস্তাব দেন। রোজিনা পাসপোর্ট তৈরির পর ১৭ মার্চ তাঁদের সঙ্গে ঢাকায় চলে যান।

সালাউদ্দীন আরও বলেন, সৌদি আরব যাওয়ার পর রোজিনার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। তবে তিনি ভালো জায়গায় কাজ করছেন বলে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়। তবে হঠাৎ গত ১৬ এপ্রিল বেলা ২টা ৪৬ মিনিটে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে ‘ভয়েস কল’ পাঠিয়ে রোজিনা নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানান। 

কান্নাজাড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সৌদিতে পৌঁছানোর পরই তাঁর ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অসুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে গেলেও সেগুলোও ছিনিয়ে নেয় তারা। চিকিৎসা করাতে না পেরে ক্রমেই শরীরের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রেখে যৌনদাসী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে গৃহস্থালির ভারী কাজ করানো হয়। কিন্তু পারিশ্রমিকের অর্থ পাচার চক্রের সদস্যরা রেখে দেয়।

ভুক্তোভোগী বোনের বরাত দিয়ে সালাউদ্দীন আরও বলেন, কাজে যেতে রাজি না হলে কিংবা দেশে ফিরতে চাইলে তাঁকে মারধর করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাথরুমের পানি খেতে দেয়া হচ্ছে। তাঁকে ঠিকমতো খাইতে দেওয়া হয় না। পেটে ক্ষুধা নিয়ে তিনি কাজ করতে না পারলে তাঁর ওপর চরম অত্যাচার করা হয়। দ্রুত উদ্ধার করা না হলে মারা যাওয়ার শংকার কথা জানিয়েছেন রোজিনা।

 মানব পাচারের শিকার রোজিনা।তিনি আরও বলেন, রাসেল আকন, তাসলিমা, মোস্তাফিজুরসহ আর অপরিচিত দু-তিনজন এই মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা  মতিঝিলের সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস গ্রামের সহজ-সরল, অভাবী এবং ডিভোর্সি নারীদের টার্গেট করে বলেও রোজিনা জানিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, রোজিনার দুরবস্থার কথা জানতে পেরে তিনি লাইসেন্স মালিক শিমুলের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে রোজিনাকে ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে তিনি দুই লাখ টাকা দাবি করেছেন। বাধ্য হয়ে অন্য লাইসেন্স মালিককে দিয়ে তিনি বিষয়টি নিরসনের চেষ্টা করছেন।

রোজিনার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার শিমুল। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত